
বিজনেস ফাইল প্রতিবেদক
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) সার আমদানির নামে চলছে দুর্নীতির মহাৎসব। জি-টু-জি (সরকার টু সরকার) চুক্তির মাধ্যমে সার আমদানির সরকারি নির্দেশনা থাকলেও, তা লঙ্ঘন করে বিদেশি বেসরকারি ট্রেডিং কোম্পানির মাধ্যমে নিম্নমানের ও ভেজাল সার আমদানির অভিযোগও রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বিরুদ্ধে। নিম্নমানের ও ভেজাল সার আমদানীর করে লেটার অফ ক্রেডিটের (এলসি) মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। বিদেশে পাচার সেই টাকা গ্রহনের জন্য সস্ত্রীক বিদেশ ভ্রমণে গেছেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল আমিন খানসহ কৃষি মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা।
জানাগেছে, বিগত ২০১৪ সাল থেকেই কানাডা থেকে জি-টু-জি (সরকার টু সরকার) চুক্তির মাধ্যমে পটাশ সার আমদানি করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। শুরু থেকেই সার আমদানীর ক্ষেত্রে ৫% হারে মুল্য ছাড় পাচ্ছে বিএডিসি। এই মুল্য ছাড় সার আমদানির পরিমানের উপর নির্ভরশীল ছিল না। কিন্তু চলতি বছর কৃষি মন্ত্রণালয় সমঝোতার মাধ্যমে কানাডার সাথে বিএডিসির যে নবায়িত চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তির ফলে রেসিপ্রকাল ট্যারিফের মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সার কম আনলে কম ডিসকাউন্ট এবং বেশি আনলে বেশি ডিসকাউন্টের শর্ত যোগ করা হয়েছে। ২০১৪ সাল হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সার আমদানি কম বেশি যাই হোক না কেন বিএডিসি ৫% মূল্য ছাড় পেত। ২০১৪ হতে ২০২৩ পর্যন্ত প্রতি বছর বিএডিসি ২ লাখ মেট্রিকটন করে সার কানাডা হতে আমদানি করত একই মুল্য নির্ধারণ পদ্ধতিতে ৫% মুল্যে ছাড় নিয়ে। কিন্তু বর্তমান চুক্তিতে ৫% মূল্য ছাড় পেতে হলে ৫ লাখ মেট্রিকটন সার আমদানি করতে হবে।
সুত্রটি জানায়, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল আমিন খান বিএডিসির জাহাজে অন্য প্রতিষ্ঠানের অথবা অন্য কোন দেশের সার আমদানি করার কো-শীপমেন্ট প্রভিশনও কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশনকে (সিসিসি) আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং এবং কোন প্রকার মতামত ছাড়াই দেশ বিরোধী বেআইনিভাবে এই চুক্তি গত ২৯ এপ্রিল অন লাইনে স্বাক্ষরের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছেন। দেশ বিরোধী ও বেআইনিভাবে কো-শীপমেন্টের এই চুক্তি করার ফলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের টাকায় অন্য প্রতিষ্ঠান অথবা অন্য দেশ সরকারের টাকায় বিনে পয়সায় সার আমদানি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে গত জুলাই মাসে কানাডা থেকে আমদানীকৃত প্রথম লটের সারবাহী জাহাজ এমভি জেনকো মেরী ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তর দ্বীপ সুমাত্রায় প্রায় ২০ হাজার মেট্রিকটন সার খালাস করে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় লটের সার ভারতে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিকটন সার খালাস করে অবশিষ্ট সার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে কো-শীপমেন্ট কাজের পুরো সুবিধা কানাডার সার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। এদিকে নির্ধারিত সময়ের আগে জাহাজ থেকে সার খালাস করলে জাহাজ মালিককে বিএডিসি থেকে একটি বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হতো এবং বিলম্বে সার খালাস করলে বিএডিসিকে জরিমানা প্রদানের জন্য ফিক্সড ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার ডলার প্রদান করা হতো। কিন্তু বর্তমানে দেশ বিরোধী এই চুক্তির কারনে সারের বাজার মূল্য অনুসারে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ডলার প্রদান করতে হবে।
সুত্রটি আরো জানায়, কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশনক (সিসিসি) সাথে চুক্তি করার পর নিজেদের উৎকোচের টাকা গ্রহনের জন্য কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল আমিন খানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ৭ নভেম্বর সস্ত্রীক কানাডায় সফরে গেছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের সস্ত্রীক বিদেশ সফরের জন্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হলেও বিএডিসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যাওয়া এই দলের কেউই অনুমতি নেয়নি। এছাড়া সফর সঙ্গী হিসেবে সরকারি আদেশে নিজের পরিচয় গোপন করে গিয়েছেন কৃষি উপদেষ্টার একান্ত সচিব কাজী হাফিজুল আমিন, বিএডিসির সদস্য পরিচালক মোঃ মজিবুররহমান ও কৃষি মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব মোঃ মনিরুজ্জামান। এর আগে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল আমিন খান তার স্ত্রী ফারাহ সাগরিক কে নিয়ে কোন প্রকার সরকারী অনুমতি ছাড়াই গত জানুয়ারি মাসে সৌদিআরব, ফেব্রুয়ারী মাসে চায়না, জুলাই মাসে মালয়েশিয়া এবং আগস্টে মরক্কো সফর করেছেন। বিএডিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রীবিরোধী চুক্তি করে নিজেদের উৎকোচের টাকা গ্রহন করতে নিজেদের বেগমদেরকে নিয়ে কানাডার বেগমপাড়া পরিভ্রমণ করছেন।
এ সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল আমিন খানকে মোবাইলে কল করা হলে তিনি ধরেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :