স্পোর্টস ডেস্ক
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য দ্বিতীয় রাউন্ড। এবারও একই লক্ষ্যে তারা বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু আইসিসির এই মেগা আসর শুরুর আগে তারা বড়সড় হোঁচটই খেয়েছে বলা চলে। বিশ্ব ক্রিকেটের নবীন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল সিরিজ হেরেছে ২-১ ব্যবধানে। প্রতিপক্ষ দলের দায়িত্বে আছেন টাইগারদের সাবেক কোচ স্টুয়ার্ট ল। এমন বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশকে নিয়ে তিনি বিধ্বংসী মন্তব্য করেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন ল। সেখানে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট ২৫ বছরেও এগোয়নি। তারা যত কিছুই করুক না কেন, সেসব কাজে লাগেনি। কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে কী করতে হবে, তাদের সেটি খুঁজে বের করতে হবে।’
১৯৯৯ সালে পাকিস্তানকে হারিয়ে আইসিসির ৫০ ওভারের টুর্নামেন্টে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ এখনও নকআউট পর্ব পেরোতে টাইগার ক্রিকেটকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে বলে মত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের এই কোচের। এমন অবস্থা বদলানোর উপায়ও বললেন স্টুয়ার্ট ল, ‘হয়তো বসে চিন্তা করার সময় এসেছে যে, এইভাবে আমরা এতদিন করে এসেছি, এটা কাজ করছে না, আমরা এগিয়ে যেতে পারিনি, হয়তো আমাদের কিছুটা ভিন্নভাবে এটা করা প্রয়োজন। বর্তমানে যারা নীতি-নির্ধারক আছেন তাদেরকে খাটো করতে বলছি না, কিন্তু তাদের খেলার সবদিক নিয়ে দেখা দরকার।’
সর্বশেষ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের দায়িত্বে ছিলেন ল। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কোচ হিসেবে যোগ দেন। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ঘাটতি কোথায় সেটিও দেখিয়ে দিয়েছেন সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান, ‘তারা (বাংলাদেশিরা) শারীরিকভাবে শক্তিশালী নন, কিন্তু তারা নমনীয় বলে জোরে বল করতে পারে এবং স্পিন বোলিং পারে, এটা আমরা সবাই জানি। তারা কখনোই পাওয়ারফুল খেলোয়াড় হবে না ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অথবা অস্ট্রেলিয়ানদের মতো, যারা ভিন্নভাবে বেড়ে ওঠে ও খাওয়াদাওয়া–ও ভিন্ন।’
বাংলাদেশের কিছু বিশেষ জায়গায় ঘাটতি থাকলেও, প্রতিভার অভাব দেখেন না ২০১১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান কোচ ল, ‘সেখানে অনেক প্রতিভা আছে, ১৭ কোটি মানুষ বাংলাদেশের এবং তারা ক্রিকেটপাগল। শুধু তাদের বের করে আনতে হবে এবং তাদের সামাজিক অবস্থান ও কীভাবে বেড়ে উঠল সেসব ভুলে যেতে হবে। যদি তারা সঠিক প্রতিভা খুঁজে পায় (তাহলে সাফল্য আসবে), সেটাই করা দরকার এখন।’
সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং মুস্তাফিজুর রহমানদের মতো প্রতিভা কাজে লাগানোর উপায় নিয়ে ল বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি এই তরুণদের উন্নয়নের পর্যায়টা দারুণভাবে সম্পন্ন করতে পারে, ১২–১৬ বছরের মধ্যে আনবে এবং তাদের ভালো ডায়েট/খাবারদাবারের পরিকল্পনা এবং ফিজিক্যাল ফিটনেসের ভালো ভিত্তি দেয়, তখন বিশ্ব ধরাছোঁয়ার বাইরের বাংলাদেশকে দেখতে পারে।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কোচ হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে সাম্প্রতিক সিরিজটি ছিল স্টুয়ার্ট ল’র প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। এর আগে তিনি বাংলাদেশে ২০১১ সালে কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। ছিলেন ২০১২ পর্যন্ত। তার অধীনেই সর্বশেষ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছিল বাংলাদেশ। ফলে টাইগারদের সম্পর্কেও ধারণা রাখেন সাবেক এই কোচ। বাংলাদেশ সম্পর্কে তার ধারণা ভবিষ্যতে কতটুকু কাজে লাগে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। আগামী ২ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের প্রথম ম্যাচ ৮ জুন, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা।