নিজস্ব প্রতিবেদক
সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে যোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্রুত পদোন্নতির দাবি জানিয়েছে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরাম নামের একটি সংগঠন।
রোববার (৫ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং অন্তঃ ও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে যোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্রুত পদোন্নতির লক্ষ্যে আয়োজিত এক মতবিনিয় সভায় এ দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আহ্বায়ক ডা. মির্জা মো. আসাদুজ্জামান রতন, যুগ্ন আহ্বায়ক ড. মো. শামসুল আরেফিন, ডা. মো. বশির উদ্দীন, ডা. মো. ইকবাল হোসাইন, ড. মো. কায়সার ইয়ামিদ ইষাদ. ড. মো. খায়রুল ইসলাম, ড. মো. আশরাফুল আলম সুমন, সদস্য সচিব ড. মো আল আমিন প্রমুখ।
মতবিনিয়ম সভায় লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির নেতারা বলেন, ‘বাংলাদেশের নানা বিষয়ে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ তাদের সবটুকু পরিশ্রম ও সততা নিয়ে এদেশের মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন এবং এ সরকারের দেশ বিনির্মানে সর্বদা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এ দেশের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য প্রশাসন স্বাস্থ্য খাতকে গত একদশকেরও বেশি সময় করাল গ্রাসে নিমজ্জিত করে ভঙ্গুর দশায় পরিণত করেছে। সে কারণে ২৬টি ক্যাডারদের মাঝে স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সবচেয়ে বেশী নিগৃহীত ও অবহেলা সহ্য করতে হয়েছে।’
বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ার কারণ উল্লেখ করে নেতারা বলেন, ‘স্বাস্থ্য প্রশাসন বিসিএস ব্যাচ ভিত্তিক পদোন্নতি না দিয়ে, ‘পদ নাই-পদোন্নতি নাই’ নীতি মেনে চলা। নতুন নতুন মেডিক্যাল ডেন্টাল কলেজে শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি এবং পুরনো মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক অনুপাতে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও নতুন পদ সৃষ্টি না করা। চিকিৎসক নেতারা নবীন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বরাবরই হেলাফেলার দৃষ্টিতে দেখে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির জন্য যে ভর্তি পরিক্ষা হয়ে থাকে, সেখানে বাস্তবতার নিরিখে আসন সংখ্যা নির্ধারিত হয় না। সেবাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে সেবক উপেক্ষিত।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘৩৩তম বিসিএস পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক পদে প্রমোশন হলে বেশিরভাগ বিষয় তা থেকে পিছিয়ে আছে। যেমন- গাইনিতে ২২ বিসিএস এখনো সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পায়নি। পক্ষান্তরে ২২ বিসিএস এ এন্ডোক্রাইনোলজি ও ফিজিক্যাল মেডিসিনে প্রফেসর পদে পদোন্নতি পেয়েছে। অন্ত:ক্যাডার বৈষম্য: চিকিৎসকদের মধ্যে যারা এডমিন সেক্টরের তারা ৩৪ বিসিএস পর্যন্ত ইউএইচএফপিও হয়েছেন, যারা বিভিন্ন উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং যাদের অধীনে জুনিয়র কনসালটেন্টগণ কাজ করেন। ২৭ বিসিএস পর্যন্ত সিভিল সার্জন হয়েছেন, যারা বিভিন্ন জেলার স্বাস্থ্যবিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের শত- সহস্র মানুষ যে সকল চিকিৎসকের হাত ধরে নিরাপদ স্বাস্থ্য ও এসডিজি লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের চাকুরি ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রাপ্য সম্মানের এই যৌক্তিক চাওয়ার সারথি হয়ে এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসে যোগ্য সকল বিষয়ে কর্মরত পোস্ট-গ্রাজুয়েট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের (পদোন্নতির শর্ত পূরণ সাপেক্ষে) ভূতাপেক্ষভাবে “পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি/সুপারনিউমারারি/ইন সিটু পদোন্নতি” প্রদান করে অমানবিক অন্তঃক্যাডার ও আন্তঃক্যাডার প্রমোশন বৈষম্য দূরীকরণ করে এ সমস্যার আশু সমাধান করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এগিয়ে আসবে। এর ফলে এদেশের অবহেলিত চিকিৎসাসেবা আরও গতিশীল ও আধুনিক হবে।’
মতবিনিয়ম সভায় বক্তরা বলেন, ‘আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হলে, অনেকরই কোন বেতন বাড়বেনা। প্রায় একই বেতন পাচ্ছে। পদোন্নতি বঞ্চিত প্রায় ৬ হাজার জন আছে। এরইমধ্যে ৩ হাজারের কিছু বেশি চিকিৎসক এখন ওই গ্রেডেই বেতন পাচ্ছে। ফলে বাকি ২৯০০ চিকিৎসকে পদোন্নতি দিলে খুব বেশি খরচ হবে না।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য ক্যাডারের ওই কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমরা জিম্মি করে দাবি আদায় করিনি। আমরা ৮ বা ১০ টা মানুষের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাবি আদায়ে নামবো না। আমাদের কোন আল্টিমেটাম নেই। কোনভাবে চিকিৎসা সেবা বিঘ্ন ঘটুক, আমরা তা চাই না। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার আমাদের এই দাবি মেনে নেবে।’