যেসব বস্তু ব্যবহারে মানুষের মস্তিষ্ক বিকল হয়, স্বাভাবিক জ্ঞান ঠিকভাবে কাজ করে না, সেসব বস্তুই মাদক। মানবতার সুরক্ষার জন্য ইসলামে মাদক সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, অপবিত্র ও হারাম।
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেসব পানীয় নেশা সৃষ্টি করে, তা হারাম।’ (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পবিত্রতা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ১৬৯, হাদিস: ২৪১, পৃষ্ঠা ১৪০)।
মাদকাসক্ত ব্যক্তির আত্মমর্যাদা বোধ থাকে না এবং লজ্জাও থাকে না। হাদিস শরিফে আছে, ‘লজ্জা ইমানের অঙ্গ। যার লজ্জা নেই তার ইমান নেই।’ (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : ৩, হাদিস : ৮, পৃষ্ঠা ১৭)।
আল-কোরআনে মাদক নিষিদ্ধ প্রসঙ্গ এসেছে- এভাবে প্রথমে বলা হয়েছে, ‘লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, দু’জনের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও; কিন্তু এগুলোর পাপ উপকার অপেক্ষা অধিক।’ (সূরা-২ [৮৭] বাকারা, রুকু : ২৭, আয়াত : ২১৯, পারা : ২, পৃষ্ঠা ৩৫/১৩)।
দ্বিতীয় ধাপে বলা হল, ‘হে মোমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সূরা-৫ [১১২] মায়িদা, রুকু : ১২, আয়াত : ৯০, পারা : ৭, পৃষ্ঠা ১২৪/২)।
চূড়ান্ত পর্যায়ে বললেন, ‘শয়তান তো মদ ও জুয়া দিয়ে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদিগকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না?’ (সূরা-৫ [১১২] মায়েদা, রুকু : ১২, আয়াত : ৯১, পারা : ৭, পৃষ্ঠা ১২৪/২)।
কোনো মুসলমানের জন্য মাদক ব্যবহার করা যেমন হারাম, তা সংগ্রহ করা, সংরক্ষণ করা ও বিতরণ করা এবং ক্রয় ও বিক্রয় করা সর্বতোভাবে সম্পূর্ণরূপে হারাম।
মাদক হারামের সঙ্গে সঙ্গে মাদকের পাত্র পর্যন্ত অন্য কাজে ব্যবহার করা হারাম। হাদিস শরিফে রয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) রবিআহ গোত্রের প্রতিনিধিদের চারটি কাজের নির্দেশ দিলেন এবং চারটি কাজ বারণ করলেন।
আল্লাহর ওপর ইমান আনা সালাত কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা এবং রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা; গনিমতের এক-পঞ্চমাংশ দান করা। নিষেধ করলেন : (মদপাত্র হিসেবে ব্যবহৃত) শুকনো লাউয়ের খোল, সবুজ কলস এবং আলকাতরার পলিশকৃত পাত্র। (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, ইলম অধ্যায়।
মিরাজের রজনীতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি দেখানো হল। তিনি মদ, মাদক ও নেশা গ্রহণকারীদের শাস্তি দেখলেন। তারা জাহান্নামিদের শরীর থেকে নির্গত বিষাক্ত নোংরা পুঁজ পান করছে।
নবী করিম (সা.) মালিক নামে জাহান্নামের রক্ষী ফেরেশতাকে দেখলেন মলিন মুখ, বলা হল, জাহান্নাম সৃষ্টির পর থেকে সে কখনও হাসেনি। (বুখারি ও মুসলিম, মিরাজ অধ্যায়)।