আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েন পাকিস্তানিরা- সৌদি সরকারের তরফ থেকে এমন অভিযোগের পর কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান। এখন থেকে হজে যাওয়ার আগে ‘ভিক্ষা করব না’ মুচলেকা দিতে হবে পাকিস্তানিদের।
দেশটির গণমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে সৌদি সংবাদমাধ্যম ‘সাবক’ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ জানিয়েছে, হজে যেতে ইচ্ছুক পাকিস্তানিদের জন্য নতুন নিয়ম জারি করেছে পাকিস্তানের ধর্ম মন্ত্রণালয়।
নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, পবিত্র হজব্রত পালন করতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ‘মক্কা গিয়ে ভিক্ষা করব না’ এমন মুচলেকা দিতে হবে।
পাকিস্তানের ধর্ম মন্ত্রণালয় সৌদি আরবকে জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে ৪ হাজার ৩০০ ভিক্ষুককে ‘এক্সিট কন্ট্রোল’ লিস্টে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে পাকিস্তান সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করেছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, যারা দল বেঁধে হজে যেতে ইচ্ছুক, তাদেরই অনুমতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া যেসব ট্রাভেল এজেন্সি হজ যাত্রীদের নিয়ে যায়, তাদেরকেও বলা হয়েছে প্রত্যেক পাকিস্তানি হজযাত্রীর কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়ার জন্য।
পাকিস্তানি ভিক্ষুকদের ঠেকাতে গত মে মাসে আইন জারি করে সৌদি সরকার। আইনে বলা হয়, পূর্ব অনুমতি ছাড়া কাউকে হজ পালন করতে মক্কা আসতে দেওয়া হবে না। অবৈধভাবে কেউ এল তাকে ১০ হাজার রিয়াল জরিমানা করা হবে এবং তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
এরপর গত সেপ্টেম্বরে হজের নামে ভিক্ষুক পাঠানোর এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পাকিস্তান সরকারকে কড়া ভাষায় চিঠি দেয় সৌদি আরব।
সৌদি সরকারে চিঠি পাওয়ার পর ধর্ম মন্ত্রণালয় নতুন করে ‘ওমরাহ আইন’ প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়, যার লক্ষ্য ওমরাহ ভ্রমণের সুবিধা দেওয়া ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাদের আইনি তত্ত্বাবধানে আনা।
এর আগেও সৌদি আরবে পাকিস্তানি ভিক্ষুক পাঠানো নিয়ে কথা উঠেছিল। তখন বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত নাওয়াফ বিন সাইদ আহমেদ আল-মালকির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, সৌদি আরবে ভিক্ষুক পাঠানোর জন্য দায়ী মাফিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই নেওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে (এফআইএ) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত বছর পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব জিশান খানজাদাও বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানি ভিক্ষুকেরা ওমরাহর আড়ালে মধ্যপ্রাচ্যে যাতায়াত করছে। বেশির ভাগ মানুষই ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরবে যান এবং তারপর ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েন।
পাকিস্তানের প্রবাসী কল্যাণসংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব আরশাদ মাহমুদ গত বছর বলেছিলেন, উপসাগরীয় বেশ কয়েকটি দেশ প্রবাসী পাকিস্তানিদের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের প্রবাসী পাকিস্তানি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মতে, বিভিন্ন দেশে আটক হওয়া ভিক্ষুকদের মধ্যে ৯০ শতাংশই পাকিস্তানের।