ঢাকা   ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংক মালিকদের এফবিসিসিআইতে সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই না: মাহবুবুর রহমান খান

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, নভেম্বর ১২, ২০২৪
  • 14 শেয়ার
মো. মাহবুবুর রহমান খান মাহবুব

সরকার প্রধানের অহংকার হলে, তিনি ভুল করলে, ওলামা মাশয়েকদের অত্যাচার করলে সেটা আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন না। তারা ফেরাউন, নমরুদদের কাতারে চলে যান। শেখ হাসিনা একুশ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আল্লাহতায়ালা তাকে সম্মান দিয়েছিলেন, আবার তার ভুলের কারণেই তাকে তার পর থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। অহংকার করে তার সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন শেখ হাসিনা পালায় না। তিনি তার লক্ষ কোটি কর্মীদের ফেলে চলে গেছেন। সারা পৃথিবী জানল তিনি পালিয়েছেন। এখন পত্রিকার টিভি টকশোতে তাকে নিয়ে কেউ কথা বলেন না। উরাধুরা অডিও ক্লিপিং দেখে অনেকেই এখন আতঙ্কিত হন। আমি বলব এগুলো দরকার কি? শেখ হাসিনার বয়স হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া তার ফাঁসি হতে পারে। নামাজ রোজা করে আল্লাহর কাছে কৃতকর্মের জন্য মাফ চান। কথাগুলো বলেন একসময় সিবিএ নেতা (সোনালী পেপার মিল), রূপগঞ্জ তারাবোর প্রথম নির্বাচিত মেয়র, মাহবুব খান শিল্প ইউনিটের চেয়ারম্যান গ্রে এন্ড ফিনিক্স ফেব্রিক্স মিলস এক্সপোর্ট এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও এফবিসিসিআই সদস্য মোঃ মাহবুবুর রহমান খান মাহবুব। গতকাল নিজ কার্যালয়ে দৈনিক বিজনেস ফাইল প্রতিনিধির মুখোমুখি হন তিনি। প্রতিবেদকের কাছে তিনি খোলামেলা অনেক কথাই বলেন। সেখান থেকে নির্বাচিত অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।
বিজনেস ফাইল : এফবিসিসিআই সদস্য বা জিবি সদস্য প্রসঙ্গে কিছু বলুন?
উত্তর: এক আজব জায়গা এফবিসিসিআই। আমার স্বপ্নের জায়গা এফবিসিসিআই এতটা দুর্বল, এতটা অস্বস্তিকর আগে জানতাম না। আজকে যারা নেতা তাদেরকে আমি জুতা টানতেও দেখেছি। আমাদের মত ব্যবসায়ীদের অনেক মিটিংয়ে তাদের পায়ের কাছে বসে থাকতে হয়। সালমান- এস আলমরা প্রায় দশটি ব্যাংকের মালিক হয়ে গেল হটাৎ। এতে শেখ হাসিনা ব্যবস্থা নেননি। টাকা লুট হল, ব্যাংকের ভোল্ট ভাঙলো, গভর্ণর সাহেব চুপ থাকলেন। বিজনেস ফাইলে এক সাক্ষাৎকারে তরুণ ব্যবসায়ী নেতা আবু সাদেক বলেছেন এফবিসিসিআই পরিচালকদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ালেখার যোগ্যতা থাকতে হবে। এটা তো অতিরিক্ত বা চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। কাজের জন্যই প্রয়োজন। যেমন ধরেন এশিয়ান টিভির চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ নয়বার পরিচালক হয়েছেন এখানে। উনি তো পড়াশোনা জানেন না তাকে দিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যবসায়ীদের কি উপকার হয়েছে? তিনি পাঁচটি অ্যাসোসিয়েশন লিড করেন। নির্বাচন আসলে ২৫ জনের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা করে ৫০ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেন। টেক্সটাইল রেডিও, সাইজিং, young মিল, স্পেশালাইজ মিল সহ আরো একাধিক সংগঠনের নেতৃত্ব রয়েছেন তিনি। পরিষ্কার বক্তব্য এসব সংগঠনগুলো ব্যবসা ক্ষেত্রে কোনো অবদান রাখছে কি? অবদান না রাখলে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এশিয়ান টিভিতে যিনি প্রথম অর্থ দিয়েছিলেন সেই মিজানূর রহমানকে জেলে পাঠিয়ে তার কাছ থেকে সকল শেয়ার ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি। তার কোনো রানিং বিজনেস নেই এটা আমি নিশ্চিত হয়ে বলছি।এফবিসিসিআই সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আমীন হেলালী বিষয়ে কথা বলতেও আমার লজ্জা হয়। তবুও বলি আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ ভারত সফরে যাবার জন্য ১৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলাম। ১০০০ টন তুলা এলসি করেছিলাম। সেই জন্যই মূলত আমার কাছে ভারত যাওয়ার কথা ছিল। বড় অংকের অনুদান চাওয়া হলো। আমি বললাম আমিতো জীবী সদস্য। একপর্যায়ে দেখলাম আমার নাম নেই শবর সংগীতের তালিকায়। আমাকে তিনি বললেন কার্যালয় থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নাসিমা আপাকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি বললেন আপনার নাম এখানে আসেনি। চীন সফরের যাওয়ার জন্য নাম দিয়েছিলাম। আমার মেশিন কেনার ব্যাপারে কথাবার্তা বলার জন্য যাবার দরকার ছিল । সেখানোও আমার নাম ছিল না। আমি বাম হাত দিয়ে একটা থাপ্পড় দিয়েছিলাম তাকে। আমি বলতে চাই যে আমার মত ব্যবসায়ীরা ও যখন সফর সঙ্গী হবার সুযোগ পায় না তাহলে সেখানে যায় কারা? আমিন হেলালির মত নেতৃত্ব এফবিসিসিআইতে থাকলে এখানে কি আর হতে পারে?
প্রশ্ন : এফবিসিসিআই কে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
উত্তর : ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সম্মানিত সংগঠন এফবিসিসিআই। বণিকদের প্রধান সংগঠন। আমার কাছে এটার অবস্থান প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারের পর এফবিসিসিআই সভাপতির স্থান।
জাতীয় সংসদের পর অর্থাৎপার্লামেন্টের পর এটা মিনি পার্লামেন্ট। বিগত দিনে যারা এফবিসিসিআইতে সভাপতি ছিলেন তাদের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বি। তাদের সফলতাশ মানুষ গর্ব করত। স্বাধীনতার পর ঐতিহ্যবাহী সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআই মর্যাদা পেয়েছিল। বিদেশে কোনো অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর পরই বক্তব্য রাখেন। এসব কারণে সভাপতি কে হতে হবে শিল্প বাণিজ্য বিষয়ে অত্যন্ত ডায়নামিক। কিছু পা চাটা ব্যবসায়ী যারা ব্যাংকের চেয়ারম্যান, শেয়ারবাজারের ব্রোকার, ভাড়া উঠিয়ে চলা ব্যক্তি যারা মানুষের সমস্যা সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। জসিম-মাহবুব গংএফবিসিসিআইকে গোলামীর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল।
প্রশ্ন : দ্রব্যমূল্য নিয়ে কিছু বলুন?
উত্তর : গত সরকার গরিবের জন্য অতটা ভাবেনি। কিছু উন্নয়ন করেছিল ঠিকই। ধরেন রুপগঞ্জে প্রচুর শাকসবজি উৎপাদন হয় ইসহাক আলী নামক স্থানে শত শত মন সবজি রাখা হয়। হাত বদল হয়ে ঢাকায় আসে এসব সবজি। কৃষকদের জিম্মি করে ১০ টাকার জিনিস আট টাকায় কিনে ঢাকায় এনে কি করে এসব সবজির দাম ৫০ টাকা হয় এটা এফবিসিসিআই কিংবা সরকার কখনো ভাবলো না। আমি কোরিয়ায় গিয়েছিলাম সেখানে কৃষকের মার্কেট আছে। কৃষকরা ভোক্তাদের কাছে সরাসরি পণ্য বিক্রি করছে এতে দ্রব্যের মূল্য ক্রেতারা ভালে পাচ্ছে । কৃষক ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রি করবে এ ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নৌকা যেমন ডুবেছে এ সরকার ও প্রকৃতির নিয়মে ডুববে।
প্রশ্ন: ব্যাংক সেক্টর বিষয়ে ইস্যূতে কি বলবেন?
উত্তর: মাতলুব আহমেদ ব্যবসায়ীদের জন্য সুদের হার নয় পার্সেন্ট নিশ্চিত করেছিলেন। অন্যরা ব্যাংকের মালিক ছিলেন তাই কমাতে পারেন নি। আগামীতে কোনে ব্যাংক মালিককে এফবিসিসিআই সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই না। হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে সুদের হার সিঙ্গেল ভিজিতে আনা দরকার। সালমান -এস আলম গংদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সরকারের কাছে এনে তার অর্থ জনগণের কাজে লাগাতে হবে। দেশে নীতিবান ভালো অত সলিড লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন সাজিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। তাহলেই সুষ্ঠুভাবে দেশ চালতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০