ঢাকা   ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
দৈনিক বিজনেস ফাইল ই-পেপার (বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪) আদানির সঙ্গে চুক্তি পুনর্মূল্যায়নে কমিটি গঠনের নির্দেশ সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ৮ দিনের রিমান্ডে টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষ, নিহত ৪ আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ তুললেন ভারতীয় সাংবাদিক, জবাবে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাসে সড়ক ছাড়লেন সাদপন্থীরা আর্থিক খাতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা চুনারুঘাটে ফাঁকা গুলি ছুড়ে জনতার হাতে পিস্তলসহ আটক নীলফামারী-৩ আসনের সাবেক এমপি মেজর রানা হাসিনা রেজিমের ‘ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট’ এখনো বহাল: পর্দার আড়ালে বাণিজ্য সচিব! দৈনিক বিজনেস ফাইল ই-পেপার (মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪)

বিএনপির ভারত বিরোধিতাকে পাত্তা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশিত : সোমবার, মার্চ ২৫, ২০২৪
  • 126 শেয়ার

বিজনেস ফাইল প্রতিবেদক
হঠাৎ করেই বিএনপির ‘ভারত বিরোধিতা’ ও ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের ইস্যুকে গুরুত্ব দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। তারা মনে করছে, আন্দোলনে ব্যর্থতাসহ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বিএনপি এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। এই পরিস্থিতিতে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতেই তারা ভারতবিদ্বেষের ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে এসেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, বিএনপির ভারত বিরোধিতার ইস্যুটি সম্পূর্ণ তাদের রাজনৈতিক কৌশল, যা রাজনৈতিক মহল তো বটেই, জনগণের কাছ থেকেও সমর্থন পাবে না। তাই এই মুহূর্তে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। তার পরও বিএনপি যাতে এ থেকে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ নিতে না পারে, সেজন্য সভা-সমাবেশ ও বক্তৃতা-বিবৃতিতে এর কঠোর সমালোচনা ও জবাব দেবে আওয়ামী লীগ। এই ইস্যুকে রাজনৈতিক বক্তব্যের মাধ্যমেই মোকাবিলা করবে ক্ষমতাসীন দল। এর বাইরে তাদের অন্য কোনো কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা নেই।
সরকার পতন আন্দোলন এবং ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই বিএনপি ও তার মিত্ররা এই নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফলতার জন্য ভারতকে সরাসরি ‘দায়ী’ করে আসছিল। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদ ও তাদের স্মরণে মসজিদে দোয়া মাহফিল করে বিএনপি। গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে ওঠা ‘ইন্ডিয়া আউট’ এবং ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’-এর কথিত আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ভারতের সহযোগিতায় নির্বাচনের নামে তামাশা করেছে। এটি বুঝতে পেরে বাংলাদেশের জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জন করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ভারতীয় পণ্য বর্জনকে বিএনপি যৌক্তিক মনে করে।

এর পর থেকেই বিএনপির ভারত বিরোধিতার ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসার বিষয়টিতে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন দেখা দেয়। যদিও এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে কর্মসূচি পালন করে আসছিল বিএনপির আন্দোলনের মাঠের মিত্র গণঅধিকার পরিষদের উভয় অংশ, ১২ দলীয় জোট এবং লেবার পার্টি। তবে অন্য শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এরই মধ্যে জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বিএনপি ভারত বিরোধিতার ইস্যু এবং ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সমকালের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, আসলে আন্দোলনের মাঠের ব্যর্থতা ঢাকতেই বিএনপি এমন একটা ‘হাস্যকর ইস্যু’ সামনে নিয়ে এসেছে। তারা হয়তোবা ভাবছে, এর মধ্য দিয়ে দেশের একটি অংশের মানুষের ‘ভারতবিদ্বেষী মনোভাবকে’ জাগিয়ে তুলে তাদের সমর্থন পাওয়া যাবে। রাজনীতির মাঠে নিজেদের অস্তিত্বের জানানও দেওয়া যাবে। তবে বৈশ্বিক রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘ভারত বিরোধিতার’ ইস্যুটি খুব বেশি কাজে আসবে না। কেননা, অতীতে নব্বই ও পরবর্তী দশকে আন্দোলন ঠেকাতে বিএনপিসহ স্বৈরশাসকরা ভারত বিরোধিতার এই অস্ত্রকে কাজে লাগাতে সক্ষম হলেও বর্তমান ভূরাজনৈতিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এমন ইস্যু একেবারেই অকার্যকর। ফলে এটিতে জনগণের পক্ষ থেকে যেমন কোনো সাড়া মিলবে না, তেমনি তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সীমিত থাকবে।
বিএনপির ভারতবিরোধী বক্তব্যে দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলেছেন, কোনো বাধাবিপত্তি ছাড়াই সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। আর নতুন সরকারকে চাপে রাখার মতো কর্মসূচিও বিএনপি দিতে পারেনি। এই কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে ভারত বিরোধিতার ইস্যু এবং ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারে সমর্থন জানানোর বিষয়টিকে তারা সামনে নিয়ে এসেছে। তবে তাদের এই অবস্থান সরকারকে চাপে ফেলতে পারবে না। মানুষকে উস্কে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা অর্জনের ষড়যন্ত্র হিসেবেও ভারত বিরোধিতার ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা বিএনপির ভারত বিরোধিতার ইস্যুর জবাবও দিতে শুরু করেছেন। রুহুল কবির রিজভীর ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলার পরদিন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এর কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর পর থেকে একাধিক সভা-সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনেও বক্তব্য রাখছেন ওবায়দুল কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারতীয় পণ্য বয়কটের নামে বিএনপি বাজারব্যবস্থাকে অস্থির করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু জনগণ তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। তিনি আরও বলেছেন, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার দুরভিসন্ধি বিএনপির মানসিক বৈকল্য ও দেউলিয়াত্বেরই বহিঃপ্রকাশ। তবে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দু’দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না। যারা ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে, জনগণ তাদেরই বয়কট করবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বিএনপি এখন সস্তা ইস্যু তৈরি করতে ভারতীয় পণ্য এবং ভারতের বিরোধিতা করছে। এটা তাদের রাজনৈতিক হালে পানি পাওয়ার জন্য অপচেষ্টা মাত্র। তারা জানে না, জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া ভারত ইস্যুকে ঘিরে যে ‘ভারত জুজুর রাজনীতি’ করেছিল, সেই বাংলাদেশ আজ আর নেই। মানুষ এখন অনেক সচেতন। তাই এ ধরনের প্রচারণা দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, এটা বিএনপির পুরোনো রাজনৈতিক কৌশল। যখনই সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার থাকে না, তখনই তারা ‘ভারত জুজুর’ ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসে। এই অপরাজনীতির ধারা পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকেই চলে আসছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও অতীতে এই খেলা খেলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এবারও বিএনপি ভারত বিরোধিতার নামে যেটা করছে, সেটা তাদের রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। এই স্ট্যান্টবাজিতে জনগণ সাড়া দেবে না। আওয়ামী লীগও বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০