ঢাকা   ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুপিসারে অতিবাহিত হলো আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস

নির্মল বার্তা
  • প্রকাশিত : শনিবার, অক্টোবর ৩, ২০২০
  • 184 শেয়ার
শামসুল হক বসুনিয়া
শামসুল হক বসুনিয়া

এবার চুপিসারে অতিবাহিত হলো ২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস। একদিকে বিশ্ব নেতাদের আগ্রাসী ও অসহিঞ্চু মনোভাব আর অন্যদিকে অতিমারি করোনার সভ্যতা বিধ্বংসী ছোবল — এই দিবসের মূল প্রতিবাদ্যকে শুধু ম্লানই করে নি, করেছে ভূলুন্ঠিত।

এ কারণে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে এই দিবসের কিছু কথা উচ্চারিত হলেও বিশালকায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় এই দিবসের বাণী হাই লাইট হয়নি এবার। অথচ এই বিষয়টি ছিল এই মুহূর্তের সবচে’ হাইলাইটের বিষয়। শক্তিধর দেশগুলো এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছে। করোনা যুগের মরণাপন্ন পরিস্থিতিতে এ অবস্থা বিশ্ববাসীকে করেছে উদ্বিগ্ন ও আতংকিত।

ধেয়ে আসছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানী ও বৃটেনের পর ভারত ও পাকিস্তান নতুন করে হয়েছে পারমাণবিক শক্তির অধিকারী। উত্তর কোরিয়া, ইরান ও তুরস্কও তলে তলে বানিয়ে ফেলছে পরমাণু অস্ত্র। তাহলে কি বাকি থাকলো এশিয়া, ইউরোপ আর আমেরিকার কোন দেশ? সেই সাথে যুক্ত হচ্ছে যুদ্ধ বেঁধে যাবার নানা উপসর্গ। কেউ বলছে আমার ভূখন্ড সম্প্রসারণ করতে হবে। আবার কেউ বলছে প্রতিবেশি জাতিগোষ্ঠীকে আরেক প্রতিবেশির হাত থেকে উদ্ধার করতে হবে। কেউ বলছে বিশ্বব্যাপী নিজের বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে হলে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে মন্দ কি। তাদের কাছে এসব কাজের যেন এক্ষুণিই মোক্ষম সময়।

ক্রমে তীব্রতর হচ্ছে যুুদ্ধ বেঁধে যাবার আলামত
ইরাক, আফগানিস্তান ও লিবিয়ায় আগ্রাসন থামতে না থামতেই ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন আর আজারবাইজানের নাগরনো-কারাবাখের ওপর নতুন করে আগ্রাসন শুরু হয়েছে। তুরস্ক ও গ্রীস সীমান্তে বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামা। এসব অঞ্চলে মানবতার আহাজারি ও রক্তপাতের দৃশ্য যেন গোটা বিশ্ব হা করে তাকিয়ে দেখছে। ভারত, চীন আর পাকিস্তান সীমান্তের উত্তেজনা এই থামে আবার শুরু হয় নতুন করে না থামার সকল কর্মকান্ড। চলে দু’দেশের বৈঠকে শান্তি শান্তি খেলা।

উত্তেজনা আর যুদ্ধ থামানোর উপায় কি
দুই দুইটি মহাযুদ্ধের ধ্বংস লীলা আর অশেষ ক্ষয়ক্ষতি এবং ভবিষ্যৎ যুদ্ধ পরিস্থিতি আগেভাগে আঁচ করে এই উপমহাদেশের কৃৃতি সন্তান মহাত্মা পরমচাঁদ গান্ধী তার মৃত্যুর আগে বিশ্বময় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে যে পথ বাতলে গেছেন সেই পথ ধরে মানবতাবাদীরা ২০০৭ সালের ১৫ জুন জাতিসংঘে যে অহিংস নীতি প্রস্তাব উত্থাপন করেন তা সর্বসম্মতক্রমে পাস হয়। সেই প্রস্তাব অনুসারে প্রতিবছর ২রা অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস।

এই অহিংস নীতি অনুসরণ করে আর্জেন্টিনার মানবতাবাদী নেতা মারিও লুইস রডারিগ কোবস সিলো বিশ্বশান্তির স্বার্থে বিশ্বময় পরমাণু অস্ত্র ও যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেন। যা আজ সারা দুনিয়ায় গতি সঞ্চার করছে। কিন্তু সেই গতি প্রয়োজনীয় সমর্থন ও সহযোগিতার অভাবে এখনও যুদ্ধের প্রস্তুতি ও সংঘাতের মনোভাব বিশ্ব থেকে নির্মূল করা সম্ভব হয় নি।

কি আছে মানবতাবাদী ‘সিলো’র শান্তি ফর্মূলায়
সিলো হিংসা, হানাহানি আর সংঘাতের পথ চিরতরে রুদ্ধ করতে মানবজাতিকে বর্ণবৈষম্য,ধর্মবিশ্বাস, সংস্কৃতির বিভাজন, ভৌগলিক সীমারেখা ভুলে এক ও অভিন্ন জাতিসত্তার আওতায় আসার আহবান জানিয়েছেন। সেই আহবানের ভিত্তিতে চলতে শুরু করলে আশা করা যায় মানুষ স্থায়ী শান্তির নাগাল পেতে পারে। পৃথিবী থেকে নিমূল হতে পারে যুদ্ধাতংক ও বৈষম্যবাদ আর ভেদাভেদ।

লেখক: সাংবাদিক, শামসুল হক বসুনিয়া

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০