ঢাকা   ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষককে থানায় নিয়ে রাজনৈতিক মামলায় চালান দিলেন ওসি

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশিত : সোমবার, নভেম্বর ৪, ২০২৪
  • 18 শেয়ার

বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ার শিবগঞ্জে মো. আব্দুর রশিদ (৪৫) নামে কৃষককে থানায় নিয়ে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় চালান দিলেন ওসি আব্দুল হান্নান। শনিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় আটক করে রোববার (৩ নভেম্বর) বেলা ৩ ঘটিকায় শিবগঞ্জ থানার মামলার (জিআর নং ৩৯৬/২৪, শিবঃ তাং ২৫-০৯-২০২৪) তাকে কোর্টে প্রেরণ করা হয়।

কৃষক মো আব্দুর রশিদ উপজেলার সদর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের মৃত খবির উদ্দিনের ছেলে।

আব্দুর রশিদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলার নয়আনা মাঝপাড়া গ্রামের মৃত আঃ কাদেরের ছেলে এমদাদুল হকের নিকট থেকে গুজিয়া বন্দরে ২ শতাংশ জমি বাজার মূল্যে ক্রয় করে আব্দুর রশিদ। এই জমিটি নয়আনা মাঝপাড়া গ্রামের মৃত মোবারক আলীর শফিকুল ইসলাম শান্তু ক্রয় করতে চেয়েছিল এবং রশিদকে জমি ক্রয় করতে নিষেধও করেছিল। কিন্তু শান্তু বাজার মল্যের চেয়ে টাকার পরিমান কম বলায় বেশি দামে আব্দুর রশিদের নিকট জমি বিক্রয় করে এমদাদুল হক। জমি বেশি দামে বিক্রয় করার পর থেকেই এমদাদুলের উপর চাপ সৃষ্টি করে শান্তু।

কিন্তু এমদাদুলের সাথে পেরে উঠতে না পেরে তার বিরুদ্ধে জমি বন্দকীর টাকা পরিশোধ না করে অন্যত্র জমি বিক্রয় করে’ মর্মে শিবগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করে শান্তু। এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ সাবুর মধ্যস্থতায় শিবগঞ্জ সদর ইউপি চত্ত্বরে একটি জেনারেল মিটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। মিটিংয়ে শফিকুল ইসলাম শান্তু উপস্থিত না হওয়ায় সেদিন মিটিং স্থগিত হয়। এরপর থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে এই বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা দরবার হয়। কিন্তু বিষয়টি অমিমাংসিত রয়ে যায়। এর এক পর্যায়ে হঠাৎ গত ২ রা নভেম্বর রোজ শনিবার সন্ধ্যা ৭ ঘটিকায় শিবগঞ্জ থানার এসআই আইনুল ইসলাম আব্দুর রশিদ কে আটক করে থানায় নেয়।

শিবগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) আইনুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওসি স্যারের নির্দেশে আব্দুর রশিদকে নিয়ে এসেছি।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুল হান্নানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই তাকে গ্রেফতারও করা হয়নি। একটা কাজের জন্য তাকে নিয়ে আসা হয়েছে’।

এরপর রোববার (৩ নভেম্বর) বেলা ১২:৫৫ মিনিটে ওসি কে পুনরায় জিজ্ঞেস করলে ওসি হান্নান বলেন, এখনো জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ২৪ ঘন্টা আমার সময় আছে। ২৪ ঘন্টা পর জানানো হবে তাকে কেনো নিয়ে আসা হয়েছে। একই দিনে বেলা ৩ ঘটিকার সময় আব্দুর রশিদকে শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের মৃত আ. হালিমের ছেলে বেলাল হোসেনের মামলায় (জিআর নং ৩৯৬/২৪ শিবঃ তাং ২৫-০৯-২০২৪) গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরন করা হয়। যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সে মামলায় আব্দুর রশিদ এজাহার ভুক্ত কোনো আসামী নয়।

এদিকে শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ সাবু বলেন, এমদাদুল হক ও শফিকুল ইসলাম শান্তুর জমি বন্ধকের টাকা নিয়ে দ্বন্দের এই বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মিটিং এর আয়োজন করা হয়। সেখানে বিবাদী শফিকুল ইসলাম শান্ত উপস্থিত না হওয়ায় মিটিংটি স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে শান্তু ও এমদাদুল হক বন্ধকি টাকা দিচ্ছে না মর্মে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েক দফা থানায় ওসির চেম্বারে দরবার হয়। ওসি সাহেব উভয়ের পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনার জন্য নেয়ার পরে এখনো কোনো মিমাংসা হয় নাই। এর মধ্যেই গত শনিবার সন্ধায় জমির ক্রেতা আব্দুর রশিদকে পুলিশ আটক করে নিয়ে একটি রাজনৈতিক মামলায় কারাগারে প্রেরণ করেছে।

মামলার বাদী বেলাল শেখ বলেন, আমি রশিদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করিনি এবং আমার মামলায় তার নামও নেই। রশিদ আমার বন্ধু মানুষ তার সাথে আমার কোনো প্রকার কলহ নেই। ওসি কেনো এই মামলায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে এটা ওসির ব্যক্তিগত বিষয়।

মামলার আইও শিবগঞ্জ থানার এসআই রিপন মিয়া বলেন, ওসির নির্দেশে বাদী বেলাল শেখের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চালান দেয়া হয়েছে।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুল হান্নানের কাছে মুঠোফোনে মামলার বিষয় জানতে চাইলে বক্তব্য না দিয়ে বলে ভালো থাকেন বলে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেয়। পুনরায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে মুঠোফোন রিসিভ করেননি তিনি।

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০