বাংলাদেশের অনেকেই হয়তো ‘সুপার চ্যাট’ নামটি শোনেননি, অথবা শুনেছেন—এটি প্রযুক্তির একটি নতুন ধারা। চ্যাটের মাধ্যমে বা প্রশ্নের বিনিময়ে আয়ের নতুন একটি মাধ্যমও বটে। সহজ কথায় সুপার চ্যাট হলো— ইউটিউবের একটি ফিচার, যার মাধ্যমে সহজেই আয় করা সম্ভব। ফিচারটির সাহায্যে কোনও ইউটিউব লাইভে দর্শকরা অর্থের বিনিময়ে কমেন্ট করতে পারেন। আর দর্শকদের দেওয়া এই অর্থ পান কনটেন্ট ক্রিয়েটর।
স্বাভাবিকভাবে যেকোনও লাইভে দর্শকরা কমেন্ট করেন এবং সেগুলো লাইভে আসা ব্যক্তির (কনটেন্ট ক্রিয়েটর) নজরে নাও আসতে পারে। কিন্তু সুপার চ্যাটের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে কমেন্ট করলে সেটি অন্যদের কমেন্ট থেকে সম্পূর্ণ আলাদা দেখাবে। ওই কমেন্টের রঙ হবে ভিন্ন এবং সেটি পিন হয়ে থাকবে। ফলে সুপার চ্যাটের মাধ্যমে করা কমেন্ট ওই কনটেন্ট ক্রিয়েটরের (ভিডিওর মালিক) নজরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিভিন্ন খবরের কাগজে প্রকাশিত শ্রেণিভুক্ত বিজ্ঞাপনের মধ্যে কিছু বিজ্ঞাপন থাকে বক্স করা বা বোল্ড করা। এভাবে বিজ্ঞাপন দিলে সহজে তা লোকজনের চোখে পড়ে। এজন্য অবশ্য বিজ্ঞাপন বাবদ অর্থ বেশি ব্যয় হয়। ইউটিউবে কোনও লাইভে এই চোখে পড়ার মতো কমেন্ট করা যায় অর্থের বিনিময়ে।
জানা যায়, সুপার চ্যাট চালু হয় ২০১৭ সালের শুরুর দিকে। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশে ফিচারটি চালু থাকলেও বাংলাদেশে এখনও চালু হয়নি। অবশ্য পাশের দেশ ভারতে এটি চালু হয়েছে অনেকদিন আগে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে এটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যাদের বয়স ১৮ বছরের ওপরে শুধু তারাই ইউটিউবের এই ফিচারটি ব্যবহার করতে পারেন।
দর্শক হিসেবে এই ফিচার ব্যবহার করতে প্রয়োজন হবে ক্রেডিট কার্ড। অন্যদিকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে সুপার চ্যাট ব্যবহার করতে হলে ইউটিউবের নির্দিষ্ট করে দেওয়া অঞ্চলের বাসিন্দা এবং বয়স ১৮-এর বেশি হতে হবে। ‘এজ রেস্ট্রিক্টেড’, ‘প্রাইভেট’ ও ‘মেড ফর কিডস’ আইটেমের ক্ষেত্রে এই ফিচার কার্যকরী হবে না।
সুপার চ্যাট যেভাবে কাজ করে
কেউ একজন লাইভে এলে দর্শক হিসেবে আপনি চ্যাট উইন্ডোর পাশে একটি ‘ক্যাশ সিম্বল’ বা ডলারের প্রতীক দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করে ভিডিও ক্রিয়েটরকে (লাইভে আসা ব্যক্তি) নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া যাবে এবং এই টাকার বিনিময়েই কমেন্ট সবার ওপরে থাকবে (পিনড হয়ে থাকবে)। এছাড়া টাকার বিনিময়ে করা কমেন্টের রঙও হবে ভিন্ন, যেন সহজেই সেটি কনটেন্ট ক্রিয়েটরের চোখে পড়ে।
অন্যদিকে লাইভে আসা ব্যক্তি ‘সুপার চ্যাট’ অপশনে ক্লিক করলেই টাকার বিনিময়ে করা সব কমেন্ট একসঙ্গে দেখতে পাবেন। এতে ওইসব কমেন্টের উত্তর দেওয়া সহজ হবে। তবে সুপার চ্যাটে কমেন্টের উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
দর্শক হিসেবে সুপার চ্যাট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। যেকোনও লাইভে আপনার কমেন্ট পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত সবার ওপরে থাকবে। কমেন্ট কতক্ষণ পিনড থাকবে তা নির্ভর করবে প্রদেয় অর্থের ওপর। মনে রাখতে হবে, কোনও লাইভে আপনি চাইলেই যেকোনও কমেন্ট করতে পারবেন না। কারণ, কনটেন্ট ক্রিয়েটর কিছু কি-ওয়ার্ড ব্ল্যাকলিস্টে রাখতে পারেন। আর ওই ধরনের কি-ওয়ার্ড আপনি ব্যবহার করতে চাইলেও সেটি সম্ভব হবে না।
সুপার চ্যাটের অর্থ কে পাবেন?
দর্শকরা টাকার বিনিময়ে ইউটিউব লাইভে কমেন্ট করলে সেই টাকা কে পাবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছে— সুপার চ্যাটের বেশিরভাগ অর্থ কনটেন্ট ক্রিয়েটরই পাবেন। এটি মূলত ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের আরেকটি মাধ্যম। অবশ্য সুপার চ্যাট থেকে কিছু অর্থ ইউটিউব কর্তৃপক্ষ নিয়ে থাকে।
ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা গেছে, জনপ্রিয় মোবাইল গেম ফ্রি ফায়ার খেলে সম্প্রতি এক অসুস্থ নেপালি শিশুর জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হয়। নেপালের ছোট্ট শিশু সায়োনা শ্রেষ্ঠা কঠিন রোগে আক্রান্ত। তাকে বাঁচাতে প্রয়োজন ২৩ লাখ ডলার অর্থ। এই অর্থ সংগ্রহে মাঠে নেমেছেন ফ্রি ফায়ার গেমাররাও। তারা লাইভে এসে ফ্রি ফায়ার খেলছেন আর ফ্রি ফায়ার প্রেমীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন, সুপার চ্যাটের মাধ্যমে সায়োনার চিকিৎসার জন্য অর্থ অনুদান দিতে। যে যেমন পারছে দিচ্ছে। কেউ ২০, কেউ ৪০, ১০০, ১ হাজার রুপিও অনুদান দিচ্ছে। #সেভসায়োনা নামে তারা অর্থ সংগ্রহ করে সায়োনার জন্য খোলা ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দেবে। ইউটিউব নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কমিশন বাবদ কেটে নেওয়ায় লাইভ স্ট্রিমাররা দর্শকদের অনুরোধ করেন সুপার চ্যাটে অর্থ না দিয়ে সরাসরি ব্যাংক হিসাবে দিতে।
বাংলাদেশে কবে চালু হবে সুপার চ্যাট
বাংলাদেশে সুপার চ্যাট কবে চালু হবে সে বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। ইউটিউব কর্তৃপক্ষ নতুন করে আরও কোনও দেশে ফিচারটি চালু করবে কিনা, সেটিও নিশ্চিত নয়। তবে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, শিগগিরই হয়তো বাংলাদেশে সুপার চ্যাট ফিচার চালু হবে। এতে বাংলাদেশের জনপ্রিয় তারকা, খেলোয়াড়, যাদের ফ্যান ফলোয়ার বেশি— তাদের আয়ের নতুন একটি পথ খুলতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রেনিউর ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আরিফ নিজামী বলেন, ‘আমাদের দেশে সুপার চ্যাট সম্ভবত ওপেন নয়। বাইরের দেশে অনেকেই করে। বেশ ভালো চলছে, জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।’ তিনি জানান, বাংলাদেশে মনিটাইজেশন অন হয়নি। যতদূর জানতে পেরেছি, আমাদের দেশে অনেকে ভারতের ঠিকানা দিয়ে মনিটাইজ করে।