কেমন আছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসরত উর্দুভাষী বিহারী সম্প্রদায়

Dainik Business File: মার্চ ৩, ২০২৫

কেমন আছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসরত উর্দুভাষী বিহারী সম্প্রদায় পলাশ চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হওয়ার সাথে সাথে দেশের সার্বিকভাবে উন্নতি হলেও - জেনেভা ক্যাম্পের উর্দুভাষী বিহারী সম্প্রদায় অন্ধকারেই ডুবে আছে। এই হতভাগ্য বিহারী সম্প্রদায়ের জীবন মানের বিন্দুমাত্রও উন্নয়ন ঘটেনি। তারা দারিদ্র সীমার নিচে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারা এদেশে অত্যন্ত বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। তারা সরকারের কাছে পাচ্ছেনা কোন ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা। জেনেভা ক্যাম্পে অন্যান্য জায়গার তুলনায় লোডশেডিং অনেক বেশি হয় এবং সব সময় পানীও থাকেনা। যার জন্য তারা দীর্ঘদিন যাবত অত্যন্ত দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। জেনেভা ক্যাম্পে সরু সরু গলি দিয়ে তাদের চলাচলের অনেক অসুবিধা হয়। কোন মানুষ মারা গেলে লাশ নিয়ে বের হতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাদের ছোট্ট একটা ঘরে নিচে - উপরে মাচা বানিয়ে অনেক সদস্য একসাথে বসবাস করে। দেখা গেল ছেলে বিয়ে করেছে কিন্তু জায়গার অভাবের কারণে বাবা-মা, ভাই-বোনের সাথেই ছেলেকে স্ত্রী- নিয়ে থাকতে হয় যা মানবতার চরম পরিপন্থী। সবচাইতে সমস্যা হয় যুবতী মা-বোনদের, জায়গার অভাবের কারণে বাধ্য হয়ে একসাথেই বসবাস করতে হয়। তারা পাচ্ছেনা কোন লেখাপড়া করার সুযোগ সুবিধা, না পাচ্ছে কোন কর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধা, না পাচ্ছে কোন পুনর্বাসনের সুযোগ সুবিধা। কাজেই বাধ্য হয়ে তারা মাদক বিক্রির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। তাদের ওখানে প্রকাশ্য দিবালোকে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি হচ্ছে অহরহ। যার দরুন প্রতিনিয়ত দাঙ্গা হাঙ্গামা সহ বিভিন্ন অপকর্মে জেনেভা ক্যাম্পের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে থাকে। একশ্রেণীর স্বার্থন্বেষী মহল তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য জেনেভা ক্যাম্পকে মাদকের আখড়ায় পরিণত করে রেখেছে। মাদককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রশাসনিক কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না জেনেভা ক্যাম্পে। এমতাবস্থায় জেনেভা ক্যাম্প তথা মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন জায়গায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ সন্ত্রাসী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে জেনেভা ক্যাম্প তথা আশপাশের এলাকা গুলোতে মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা থাকবে না বলে একটি সূত্র জানায়। জেনেভা ক্যাম্পের পাশেই বসবাসরত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মোঃ শামসুল হুদা জানায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাবে জেনেভা ক্যাম্পের অনেক মানুষ মাদককে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাদের প্রতিবাদ করতে গেলে সবাই একসাথে এসে দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু করে দেয়। তারা রাস্তার দুই পাশে অবৈধভাবে দখল করে আছে। শামসুল হুদা সাহেব আরো বলেন - জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসকারীদের অভাবের কারণে স্বভাব নষ্ট হয়ে গেছে। ক্যাম্পের আশেপাশে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিলাসবহুল অনেক ঘরবাড়ি এবং অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবার রয়েছে। কিন্তু জেনেভা ক্যাম্পের মধ্যে মাদকের রমরমা ব্যবসার কারণে আশেপাশের মানুষ-জনও মাদকমুখী হয়ে পড়ছে যা অত্যন্ত বিপদজনক ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈষম্যবিরোধী অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত অতি সত্বর ক্যাম্পে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়ন করা এবং তাদেরকে পুনর্বাসন করে স্বাভাবিক জীবন যাপন প্রদান করা। আর রাস্তার দুই পাশে অবৈধ দোকান ও হকার উচ্ছেদ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা। ক্যাম্পের গাফফার, রাসেল সহ আরো অনেকে সরকারের কাছে তাদের পুনর্বাসন করা এবং মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। বাংলাদেশে বসবাসরত উর্দুভাষীদের বৃহত্তম সংগঠন এসপিজিআরসি'র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদকে জেনেভা ক্যাম্পের সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন - বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর হতে এদেশের ১৩ টি জেলায় ৭০ টি ক্যাম্পে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীরা মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। আমরা শুধু আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাই না। উর্দুভাষীদের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্ট্যাটাসকো বিধি-বিধান প্রণয়ন থাকলেও প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাবাসিরা বিভিন্ন রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে - উচ্ছেদ আতঙ্ক ও বিনামূল্যে সরবরাহকৃত পানি ও বিদ্যুৎ কেটে দেওয়ার ভয়। ইতিপূর্বে সিটি কর্পোরেশন রাস্তা প্রশস্ত করার নামে জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসকারীদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য মৌখিকভাবে বলে গেছেন। এ নিয়ে আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। এসপিজিআরসি'র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ আরো বলেন - বৈষম্য বিরোধী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বিশ্বখ্যাত নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস স্যারের কাছে আমরা আকুল মিনতি জানাই যে, ঢাকা এবং অন্যান্য জেলায় মহাজির অধ্যশিত পরিত্যক্ত জমি রহিয়াছে। সেখানে ক্যাম্পে বসবাসরত উর্দুভাষীদের পুনর্বাসন করা হোক এবং প্রত্যেকটি পরিবারকে আর্থিক সুবিধা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হোক। যাতেকরে আমরা চরম বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি। তাছাড়া আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অনেক প্রতিবাদ করেছি কিন্তু একশ্রেণীর স্বার্থন্বেষী মহল কোনভাবেই মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়নি। প্রতিবাদ করলেই তারা আমাদের বিরুদ্ধে ভয় দেখায় যে মিথ্যা আওয়ামীলীগ বানিয়ে মামলা করে দিবে। অথচ আমরা কখনোই কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলাম না। বৈষম্য বিরোধী অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রাণের দাবি এইসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত কঠোরভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে জেনেভা ক্যাম্পের মাদক নিয়ন্ত্রণ করা হোক। অত্যন্ত দুঃখের সহিত তিনি আরো বলেন অতীতে মাদকের ব্যাপারে পুলিশকে অনেকবার জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। আমাদের বিশ্বাস একমাত্র সেনাবাহিনীই পারে মাদকের করাল গ্রাস থেকে আমাদের রক্ষা করতে। আমরা বৈষম্য বিরোধী অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আশাবাদী যে স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কোন সরকার আমাদেরকে চরম বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি কিন্তু একমাত্র বৈষম্য বিরোধী অন্তর্বর্তী সরকারই আমাদেরকে সকল বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা করবেন এবং আমাদের সঠিক পুনর্বাসন করে দীর্ঘদিনের বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে নতুন সূর্যের সন্ধান দেখাবেন বলে উর্দুভাষী বিহারী সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন।

সম্পাদক- অভি চৌধুরী।

যোগাযোগ: ৫১/৫১/এ রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (লেভেল-৩), স্যুট-৪০৫, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
ফোন:০২-২২৩৩৫৭০৭৩ মোবাইল: ০১৭১১-৫২০০৪৬, ০১৮১৯-২২৬১৬০। ই-মেইল: dainikbusinessfile@gmail.com