শেখ হাসিনা দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় ছিলাম: বিজনেস ফাইলকে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান
Dainik Business File: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫
বিজনেস ফাইল ডেস্ক
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যে নামটি ঘুরেফিরে আসছে যিনি সৎ, সততার আদর্শিক চেতনা ধারণ করে বঙ্গবন্ধুকে নেতা মেনে রাজনীতির কথা বলছেন তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের অন্যতম উপদেষ্টা। তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের নানা ত্রুটির কথা তুলে ধরেছেন সাহসের সাথে। সাড়ে ১৫ বছর শেখ হাসিনা সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেছেন একসময় আওয়ামী লীগ দেশে অপরিহার্য হলেও এখন তা নয়? এছাড়াও সমসাময়িক আরো কিছু প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। কালকে সেখান থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ বিজনেস ফাইল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :
বিজনেস ফাইল: বর্তমানে রাজনীতি কি অবস্থায় আছে?
অ্যাড.ফজলুর রহমান: বর্তমান রাজনৈতিক যে প্রেক্ষাপট তাতে সত্য কথা বলার মত লোক একেবারেই নেই। আমার ৭৭ বছরের দীর্ঘজীবনে অনেক কিছুই দেখেছি। তৎকালীন ইয়াহিয়া, চেঙ্গিস খানের মতো পাকিস্তানি শাসকদের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। মায়ের কোলে সন্তানের লাশ,বাবার কাঁধে ছেলের লাশ, মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণ, মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণ, এইযে বাংলাদেশ যেখানে ৩০ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগ, ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম হানি হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য এত রক্ত, আমাদের ভাষার জন্য রক্ত এগুলো ভাবলো আমার শরীরের লোমকূপগুলো দাঁড়িয়ে যায়। শেখ হাসিনার দুঃশাসনে মানুষ অসহায় ছিল।অন্তবর্তী কালিন সরকারের উপর আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল তা ভেস্তে গেছে। সমন্বয়করা যখন বলে জুলাই আগস্ট আন্দোলনে আমাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ছিল ছাত্রশিবির, তারাই আমাদের সহযোগিতা করেছে। এরকম কথা শোনার জন্য আমার জন্ম হয়নি। শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমি রাজপথের সক্রিয় ছিলাম। আমার স্পষ্ট কথা ৭১ আমাদের অস্তিত্ব। এটাকে যারা অসম্মান করে তারা বাংলাদেশ মানে না। আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে হাত উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।যতক্ষণ বেঁচে আছি সত্যের পক্ষে বলে যাব। আমি আবারও বলছি আমার অস্তিত্ব, আমার দেশের অস্তিত্ব, যে কোন মূল্যে রক্ষা করব। লক্ষ্য শহীদের রক্তে ভেজা একাত্তর বিপন্ন হতে দেব না। যারা অন্যায় করেছে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে নিরপেক্ষ বিচার অন্যদের মতো আমিও চাই। যারা নির্দোষ তাদের কোনো ক্ষতি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন নাগরিক মেনে নিতে পারব না। এখন রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে ফিরিয়ে দিতে দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। যা আমার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো চাচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি। সরকারের সবুজ সংকেত পেলেই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করতে পারে।
বিজনেস ফাইল : ছাত্ররা দল গঠন করছে তাদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?
ফজলুর রহমান : ছাত্ররা দল গঠন করলে অভিনন্দন জানাবো। কিন্তু আমি তখন আনন্দিত হব যখন দেখব অন্য মানুষ তাদের ভালো বলছে। সমালোচনা হয় এমন কাজ তাদের করা উচিত হবে না। তারা আমাদের সন্তান। নাগরিক হিসেবে দেশের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব তাদেরও আছে। মুখে যা খুশি বললাম, ক্রমাগত সিনিয়রদের অসম্মান, রাজনৈতিক শিষ্টাচার হারিয়ে ফেলে এটা কোনভাবেই মেনে নেব না।
বিজনেস ফাইল : দেশটা কিভাবে চলছে?
ফজলুর রহমান : দেশের ১৮ কোটি মানুষ তাকিয়ে আছে একটা ভালো নির্বাচনের জন্য। ১৯৭১ সালে তামাবিলে ২১ জুন তৎকালীন মেজর মীর শওকত আলির নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই। দেশকে রক্ষার জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নেই। ফিরে আসবো ভাবিনি। এত বছর যখন বেঁচে আছি মহান আল্লাহতালা নিশ্চয়ই আরো ভালো কিছুর জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমি ভালো আছি। স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে আমার বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারব। শেষ নিঃশ্বাস না নেওয়া পর্যন্ত পারলে মানুষের পাশে থাকবো। প্রতি মাসেই অন্তত দশটি জনসভায় বক্তব্য করেছি। ঐসব জনসভায় ৬০/৭০ হাজারের মতো লোক উপস্থিত ছিল। দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি এমন কথা যারা বলেন তাদের উদ্দেশ্যে বলবো আপনাদের দেশে থাকার কোন অধিকার নাই। মুক্তিযুদ্ধ সবার আগে। দেশের নাগরিক হতে হলে একটা স্বাধীনতা দেশ সবচেয়ে আগে প্রয়োজন। বাবা ছাড়া যেমন সন্তান ভাবা যাবে না।তেমনি স্বাধীন দেশ ছাড়া স্বাধীন নাগরিক অসম্ভব নয়। আমি এক মিটিং এ বাঘ আর বিড়ালের গল্প বলেছি। এটা অনেকে জানেন।বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমি খুনি মোশতাক এর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। সাধারণ মানুষের সাথে আমার চলাফেরা তাই আমি শ্রমিক রাজনীতি করেছি। একসময় কিশোরগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলাম। আমার ছাত্রলীগ করা কিংবা পরের ইতিহাস প্রায় সবাই জানেন। এখন শুধু এটুকু বলব মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস আপনাকে সম্মান দিয়ে বলছি আপনি অনন্তকালের জন্য আসেন নি। যেকোনো মানুষ তার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে। নিজের সংসার কিভাবে চলবে ভাবে। ঢাকার বাতাস দূষিত, নিত্যপনের বাজারে আগুন, ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারছে না, কৃষকরা কপি টমেটো বাজারে রেখে চলে আসছে,যানজট।
আপনি সময় চান ছ'মাসে কি করেছেন জনগণ তা দেখেছে।আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই শেখ হাসিনার তিনটা নির্বাচন এতটাই বিতর্কিত ছিল যে জনগণ তা মেনে নেয়নি। তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। বাঙালি দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝেনা। আপনার জন্য যেন এটা প্রযোজ্য না হয়। (চলবে)