সিরামিক শিল্প রক্ষায় জ্বালানি গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি

Dainik Business File: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫

সিরামিক শিল্প রক্ষায় জ্বালানি গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি বিজনেস ফাইল প্রতিবেদক দেশীয় সিরামিক শিল্প রক্ষায় জ্বালানি গ্যাসের মূল্য পুনরায় বৃদ্ধি না করাসহ ৩ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এসব দাবি জানান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মইনুল ইসলাম। অ্যাসোসিয়েশনের অন্য ২টি দাবি হচ্ছে—সিরামিক শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্কহার প্রত্যাহার করা। সংবাদ সম্মেলন মইনুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, গ্যাস নির্ভর এই শিল্পে ক্রমাগত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া একটি প্রধান সমস্যা। বিগত ৯ (২০১৫-২০২৩) বছরে শিল্পখাতে প্রায় ৩৪৫ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ২০২৩ সালে শিল্পখাতে প্রায় ১৫০ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে প্রতি কেজি সিরামিক পণ্যের গড় উৎপাদন ব্যয় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। গ্যাসে মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তৈরি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বিদেশি পণ্যের সঙ্গে মূল্য প্রতিযোগিতার করে দেশীয় তৈরি পণ্যের মূল্য ইচ্ছেমতো বৃদ্ধি করা যায় না। ফলে প্রতিযোগী বাজারে উৎপাদককে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তিনি বলেন, অতি সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায় যে, সরকার আরেক দফা গড়ে ১৫২ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে শিল্প ও কেপটিভ প্লান্টের জন্য যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটার ৩০ থেকে ৭৫.৭২ টাকা হতে পারে। ফলে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় আরও ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। জ্বালানি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ব্যয়সহ সব ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সিরামিক শিল্প। এতে করে দেশীয় তৈরি-পণ্যের মূল্য প্রতিযোগিতায় বিদেশি পণ্যের সঙ্গে টিকে থাকতে না পারার কারণে উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি দেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিসিএমইএ সভাপতি বলেন, সিরামিক একটি গ্যাস নির্ভর প্রসেস ইন্ডাস্ট্রি। সিরামিক শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাস কাঁচামালের উপকরণ হিসেবে গণ্য হয়। এই শিল্পে গ্যাসের বিকল্প কোন জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ নেই। পণ্য প্রস্তুত করতে নির্দিষ্ট মাত্রার চাপে কারখানায় ২৪ ঘণ্টাই নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ থাকতে হয়। নির্দিষ্ট মাত্রার চাপে গ্যাসের সরবরাহের ঘাটতি হলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় থাকা সব পণ্য তৎক্ষণাৎ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কোম্পানির বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়। এরপরেও কারখানায় নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ না থাকা সত্ত্বেও আমাদের গ্যাসের বিল দিতে হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপের অভাবে সময়মত পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় বিশ্ববাজারে নামি-দামি কোম্পানি আমাদের থেকে অর্ডার বাতিল করেছে। বিগত প্রায় ১ বছর ধরে ঢাকা জেলার মিরপুর, সাভার, ইসলামপুর, ধামরাই ও কালামপুর; নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ, মেঘনাঘাট; গাজীপুর জেলার টঙ্গী, কাশিমপুর, ভবানীপুর, ভাওয়াল মির্জাপুর, শ্রীপুর, মাওনা; নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা; এবং ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা ও ত্রিশাল এলাকায় অবস্থিত ২২ থেকে ২৫টি সিরামিক তৈজসপত্র, টাইলস্, স্যানিটারিওয়্যার সিরামিক ব্রিকস্ কারখানায় তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সিরামিক কারখানায় যেখানে গ্যাসের ১৫ পিএসআই প্রেসার প্রয়োজন হয়, সেখানে গ্যাসের প্রেসার কখনো কখনো ২/৩ পিএসআই থেকে শূন্যের কোঠায় পর্যন্ত নেমে আসছে। এতে করে প্রতিদিন ওই সব এলাকায় উৎপাদন ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি টাকার অধিক। ফলে উৎপাদকগণ ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। মইনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সব দেশীয় টাইলস উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক এবং দেশীয় স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন পর্যায়ে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপিত রয়েছে। সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্য এখন আর বিলাস দ্রব্য হিসেবে বিবেচিত হয় না। পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে সাধারণ লোক স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এটি সরকারের ঘোষিত ‘সকলের জন্য স্যানিটেশন’ কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সিরামিক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিতে যে বিরূপ প্রভাব পড়বে তা অনুধাবন করে দেশীয় সিরামিক শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মেইড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সিরামিক শিল্পে ব্যবহৃত জ্বালানি গ্যাসের মূল্য পুনরায় বৃদ্ধি না করা, সিরামিক শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং সিরামিক টাইলস্ ও স্যানিটারি পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্কহার সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মীর নাছির হোসেন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশীদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল হাকিম সুমন, ডিরেক্টর রাশীদ মাইমুনুল ইসলাম, ফারিয়ান ইউসুফ এবং জিএস ইরফান উদ্দিন।

সম্পাদক- অভি চৌধুরী।

যোগাযোগ: ৫১/৫১/এ রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (লেভেল-৩), স্যুট-৪০৫, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
ফোন:০২-২২৩৩৫৭০৭৩ মোবাইল: ০১৭১১-৫২০০৪৬, ০১৮১৯-২২৬১৬০। ই-মেইল: dainikbusinessfile@gmail.com