পৃষ্টপোষকতা করলে কুমারখালী হতে পারে দেশের অন্যতম শীর্ষ অর্থনৈতিক স্থান: আফজাল হোসেন
Dainik Business File: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৫
বিজনেস ফাইল প্রতিবেদক কুষ্টিয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা কুমারখালী। এ মাটির রূপ, রস, গন্ধে আলোকিত বিশ্বে খ্যাতিমান অনেক মনীষী। বিশ্বের প্রথম বাঙালি হিসেবে নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ উপজেলার শিলাইদহের কুঠিবাড়ীতে বসেই লিখেছিলেন গীতাঞ্জলি কাব্য। এটার ইংরেজি অনুবাদই (যেটা রবীন্দ্রনাথ নিজেই করেন) সমগ্র বিশ্বে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয় এবং নোবেল কমিটি সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথকে নির্বাচিত করেন। যেটা কুমারখালীবাসীর জন্য বিশাল গর্বের বিষয়। ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী বাঘা যতীন, গগন হরকরা, উপমহাদেশের প্রথম প্রেস এম এন প্রেস কাঙাল কুঠির প্রতিষ্ঠাতা কাঙাল হরিণাথ মজুমদার, বিশ্বে আলোচিত বিষাদসিন্ধু রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন, প্যারী সুন্দরীসহ অগণিত কৃতিত্বমান ব্যক্তি এ মাটির সন্তান। উল্লেখিত কথাগুলো দৈনিক বিজনেস ফাইলকে বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুমারখালী উপজেলা শাখার নায়েবে আমীর মো. আফজাল হোসেন। কুমারখালী-খোকসার রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নয়ন, অগ্রগতি কিংবা সমস্যা প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, অনেক কথা। সেখান থেকে নির্বাচিত অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো: বিজনেস ফাইল: কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা)’র রাজনীতিতে আপনার অবস্থান কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? মো. আফজাল হোসেন: ১৯৮৬ সাল থেকে আমি কুমারখালীর রাজনীতির সাথে আছি। কুমারখালীর মাটিতে বিগত দিনে অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদ এসেছেন। আমাদের এ এলাকার রাজনীতি ও সংস্কৃতি প্রায় ১০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। দেশ বিভাগের আগে কৃষক আন্দোলনে কুমারখালীর সামসুদ্দিন আহমেদ যিনি শেরে বাংলা একে ফজলুল হক অর্থাৎ হক মন্ত্রী সভার প্রভাবশালী সদস্য ও কৃষক প্রজা পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৮৫৬ সালে কুমারখালী, খোকসা, পাংশা, বালিয়াকান্দি থানা নিয়ে পাবনা জেলার অধীন কুমারখালী মহকুমা গঠিত হয়। ১৮৬৯ সালে কুষ্টিয়া কুমারখালী পৌরসভা স্থাপিত হয়। ১৮৭০ সালে কুষ্টিয়া ও চড়াইকোল রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে গড়াই নদীর উপরে রেল সেতু নির্মিত হয়। ১৯০৮ সালে পূর্ব বাংলার ১ম কাপড়ের কল মোহিনী মিল প্রতিষ্ঠা করেন অবসরপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট কর্মবীর কুমারখালীর অধিবাসী মোহিনী মোহন চক্রবর্তী। ইতোমধ্যে ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আমি কুমারখালী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সকল শ্রেণীর মানুষের ভালোবাসায় অনেক ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হই। সে সময় ফেয়ার নির্বাচন না হলেও আমি প্রায় ৮০ হাজার ভোট পেয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম। এ এলাকার প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এমনকি গ্রাম পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর শাখা কমিটি রয়েছে। আমরা কাউকে প্রতিপক্ষ ভাবি না। শুধু এটুকু বলা যায় এলাকার মানুষের ভালোবাসায় আমরা আদৃত। এ এলাকায় কারিগর সম্প্রদায়সহ সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় প্রতিনিধিত্বশীল যোগ্য জনপ্রতিনিধি প্রত্যাশা করে। আমার প্রিয় জন্মভূমি কুমারখালীতে ১৯৭৫ সালে তৎকালীন রানিং সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়াকে ঈদে নামাজরত অবস্থায় দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করে। একটা শ্রেণী ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে চাঁদাবাজি, জমি দখল, অবৈধ বালি উত্তোলন ইত্যাদি করেছে। আমি শুধু এটুকু ইনফরমেশন দিতে চাই জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় কুমারখালী থানায় আক্রমণের চেষ্টা করা হয়। জানতে পেয়ে আমাদের কর্মীসহ ছাত্র-জনতা সাথে নিয়ে সেটা প্রতিহত করি। হিন্দু সম্প্রদায়ের পুজার সময় আমাদের কর্মীরা বেশ সতর্ক অবস্থায় ছিল। এলাকায় আমাদের সাথে অন্য সম্প্রদায়ের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। কুমারখালী-খোকসার সাধারণ মানুষের সাথে আমার এবং আমার সংগঠনের দূরত্ব নেই। জনগণের সাথে আমাদের সবসময় ভালো যোগাযোগ রয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে তারা কাছে পায়। আমার পার্শ্ববর্তী উপজেলা খোকসা এলাকায় ও আমার প্রায় ৩০ হাজার আত্মীয়স্বজন রয়েছে। দু-উপজেলাতেই আমাদের সার্বিক অবস্হা বেশ ভালো। দু-এলাকার কোনো মানুষ বলতে পারবে না তারা আমাদের পাশে পায়না। বিজনেস ফাইল: এলাকার মানুষের কি ধরনের সমস্যা রয়েছে? মো. আফজাল হোসেন: কুমারখালীতে বিসিকের মেশিন অকেঁজো অবস্থায় রয়েছে। বিসিক শিল্প আমাদের কোনো উপকারে আসছে না। কুমার খালী শহরে কিংবা বাইরের অনেক রাস্তা চলার অনুপযোগী। আমাদের কারিগরদের কাছে সুতার প্রচন্ড চাহিদা। দেশের সিংহভাগ চাদর, লুঙ্গী, তোয়ালে (সিরাজগঞ্জের ছাড়া) কুমারখালীতে উৎপাদন হয়। এখানকার তাঁতীরা দরিদ্র। তাদের পুঁজি কম। মহাজনদের দ্বারা তারা কোণঠাসা। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়াতে তাদের লাভ কম। এখানে যদি নিজস্ব সুতা তৈরির সুযোগ থাকতো তাহলে তাঁতীরা ভালোভাবে বাঁচত। সুতা ক্রয় এবং উৎপাদনের খরচ বাদে মহাজনরা লাভের সিংহভাগ নিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু কুমারখালীতে দেশের বৃহত্তম কাপড়ের হাট রয়েছে এবং এখানে উৎপাদনের কোয়ালিটি ভালো। তাদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি বিশেষ করে কমসুদে ঋণ দিলে তারা অনেক ভালো করবে। বিগত কোনো সরকারই আমাদের প্রিয় তাঁতীদের জন্য কোনো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করেনি। বর্ষা মৌসুমে এখানে জলাবদ্ধতা থাকে। ড্রেনেজ ব্যবসা খুবই খারাপ। মানুষ আমোক/ আমাদের আস্থার প্রতীক হিসেবে ভাবে। তাদের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার রয়েছে। কুমারখালীর তাঁতি বা কারিগরদের ভালোভাবে পৃষ্টপোষকতা করলে দেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনীতি স্থান হবে এই এলাকা। একই সাথে এই জায়গাটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিজনেস ফাইল: এলাকায় জামায়াত ইসলামীর রাজনৈতিক স্ট্যাটেজি কি? মো. আফজাল হোসেন: আমরা চাই, পবিত্র কোরআনের আলোকে দেশ শাসন করতে। সকল ধর্মের মানুষ সমান অধিকার পাক এটা আমরা বিশ্বাস করি। কাউকে প্রতিপক্ষ না ভেবেই আমরা দেশ গড়তে চাই। জামায়াত নীতির প্রশ্নে আপোষ করে না। অন্যায় নীতির কাছে মাথানত করে না, জামায়াত অলোয়েজ সত্যের সাথে থাকবে। ইসলামে সকল মানুষ সমান সুযোগ পায়। আমাদের পার্শ্ববর্তী উপজেলা খোকসার নায়েবে আমির মামুনার রশিদ যথেষ্ট যোগ্য এবং সাংগঠনিক ব্যক্তি। তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এ কারণে যে তিনি আমাদের সংগঠনকে দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে এগিয়ে নিচ্ছেন। আগস্ট বিপ্লবে আমাদের এ এলাকার ৪ জন শহীদ হয়েছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারকে অর্থ সহায়তা (দুই লক্ষ করে) দিয়ে পাশে থেকেছি। অসুস্থ/আহতদের পাশে আমরা আছি। আমাদের কেন্দ্রিয় শীর্ষ নেতা জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুল ইসলাম অতন্দ্র প্রহরির মতো মাঠে রয়েছেন। তার নির্দেশ ও পরামর্শে ত্রাণ, কম্বল বিতরণে আমরা মাঠ পূজায় কাজ করছি। অর্থাৎ যেকোনো দুর্যোগ, দুর্ভোগে আমরা জনগণের পাশে আছি। নিজের এলাকার মানুষের সাথে এমনকি অন্য ধর্মের মানুষের সাথেও আমার সুসম্পর্ক বিদ্যমান। সাম্প্রতিককালে সাবেক পৌর কাউন্সিলর নবকুমার দত্তের শেষ কৃত্য অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলাম। আমাদের প্রিয় নেতা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির ড. শফিকুল ইসলাম সম্প্রতি কুষ্টিয়া সফর করেন। গত ৪ জানুয়ারি কুষ্টিয়াতে যে জমায়েত হয়েছে স্বাধীনতার পর এত বড় জমায়েত কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারেনি। এখানে সবার অংশগ্রহণ ছিল স্বতস্ফূর্ত। হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক মানুষও এ সমাবেশে অংশ দেন। বিজনেস ফাইল: সর্বশেষ আর কিছু বলবেন? মো. আফজাল হোসেন: কুমারখালী-খোকসাকে সকল ধর্ম-বর্ণ মানুষের সম্প্রীতির এলাকার হিসেবে গড়তে চাই। সকলের সুবিধা অসুবিধায় পাশে থাকতে চাই। বড়দের আগলে রাখতে চাই। ছোটদের ভালোবাসা, স্নেহ দিতে চাই। পদের কারণে অনেক সিনিয়ররা যখন আমাকে আপনে বলে ডাকেন, তখন আমি নিজের থেকে বলি-আমাকে আপনি তুমি বলে ডাকবেন। এলাকার আরেক টি সমস্যার কথা না বললেই নয়। পাবনা যেতে শিলাইদহ থেকে দুটো নদী পার হতে হয়- অর্থাৎ পদ্মা নদীর পর আরেকটা খাল আছে। এখানে দ্রত একটি ব্রিজ করা দরকার। যেটা বিগত আওয়ামী লীগ সরকার করেনি। কুমারখালীর ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের হাটের বাস্তব অবস্থা ভালো নয়। অনেক জায়গা দখল হয়ে গেছে। আশপাশের জায়গা, পাশের পুকুর ভরাট (প্রয়োজনে কিনে), যেটুকু দখল হয়েছে সেগুলো দখলমুক্ত করে এরিয়া বাড়ানো দরকার। যেহেতু ঘর সীমিত। বাইরে থাকা ব্যবসায়ীদের জন্য আরো কিছু শেড নির্মাণ করা গেলে ব্যবসা অনেক বেশি হতো। বৃষ্টির সময় হাটে ঢোকা সমস্যা। সমস্যার কারণে অনেকে আমাদের এখান থেকে সিরাজগঞ্জ, পোড়াদহ, বাবুর হাট চলে গেছে। বিগতদিনের জনপ্রতিনিধিরা এগুলো লক্ষ্য রাখেনি। এখনো গ্রামে গেলে মানুষ আমাকে দেখতে আসে। খোঁজ খবর নেয়। অনেকে দোয়া করে। অনেকে আমার জন্য মোনাজাতও করে। এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলবো, যতদিন জীবিত আছি আপনাদের পাশে আছি-থাকবো। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। দৈনিক বিজনেস ফাইলকে ধন্যবাদ।সম্পাদক- অভি চৌধুরী।
যোগাযোগ: ৫১/৫১/এ রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (লেভেল-৩), স্যুট-৪০৫, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
ফোন:০২-২২৩৩৫৭০৭৩ মোবাইল: ০১৭১১-৫২০০৪৬, ০১৮১৯-২২৬১৬০। ই-মেইল: dainikbusinessfile@gmail.com