নিকলীতে কিশোরী ধর্ষণ! ৬ দিনেও মামলা আমলে নেননি পুলিশ
Dainik Business File: জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
আলি জামশেদ হাওর অঞ্চল থেকে নিকলীতে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে মুখে মাফলারের মাধ্যমে হাতে মুখ চেপে ধরে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে রাতে ফিসারিজের পাড়ে উঠিয়ে নিয়ে ধর্ষক করে মাদকাসক্ত রাসেল (২৬) নামের এক যুবক। কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার হাওর বেষ্টিত গুরই ইউনিয়নের ছেত্রা গ্রামের উত্তর পাড়ার মোস্তফা ওরফে কডু মিয়ার ছেলে রাসেল (২৬)এলাকার একজন চিহ্নিত মাদকসেবী। নেশা ও বদ চরিত্রের কারণে একাধিক বিয়ে করলেও কোন স্ত্রীই তার সাথে চিরস্থায়ী সংসার বন্ধনে থাকতে আগ্রহ দেখায়নি বলে প্রতিবেশী ও তার স্বজনদের দেয়া তথ্যমতে সরেজমিনে উঠে আসে। স্ত্রীদের কর্তৃক তালাকপ্রাপ্ত এ যুবককের ২য় স্ত্রীর সাথেও ১বছর আগে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। কন্যা সন্তান নিয়ে নির্যাতনের মুখে বাড়ি ছাড়ে স্ত্রীরাও। এলাকাবাসী ও প্রতিবেশীরা এমন তথ্য নিশ্চিত করে। সরেজমিনে ১৮ জানুয়ারি গুরই ইউনিয়নের ছেত্রা উত্তর পাড়া গ্রামে গেলে অসংখ্য নারী ও পুরুষেরা অসহায় পরিবারের ১৫ বছরের এক কিশোরীকে বাড়ির ভেতর থেকে মুখে চেপে ধরে টেনেহিঁচড়ে উঠিয়ে নিয়ে পাশ্ববর্তী একটি ফিসারিজের পাড়ে অস্ত্রের মুখে ভয় ভীতি দেখিয়ে নোংরা কাজ করায় ঘৃণা ভরে দেখছেন। এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে এ নিয়ে। থানায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলেও তাদের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। গুঞ্জন উঠেছে আলামত নষ্টের লক্ষ্যে এমনটি হয়ে থাকতে পারে বলে। তাছাড়া মামলা আমলে না নেওয়ার বিষয়েও এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই বিষয়ে ভিকটিমের সাথে সরাসরি কথা হলে তাকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে নিকটস্থ ফিসারিজের পাড়ে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে মুখে মাফলার ও হাতে মুখ চেপে ধরে টেনেহিঁচড়ে উঠিয়ে নিয়ে যায় বলে জানায়। সেখানে নিয়ে ছুড়ি দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকিতে তাকে ধর্ষণ করে বলেও স্বীকার করে। এক পর্যায়ে মায়ের মাছ কাটা শেষে মেয়কে খুঁজাখুঁজি করে। খুঁজে না পেয়ে ডাক চিৎকার করলে এলাকাবাসী ফিসারিজের পাড় থেকে উদ্ধার করে প্রায় আধাঘণ্টা পরে। এলাকাবাসীর ডাক চিৎকার শুনে ধর্ষক রাসেল তার জুতা ও মাফলার ফেলে রেখেই পালিয়ে যায়। কিশোরীর বাবা এ সময়ে মসজিদ থেকে হৈচৈ শুনে বাড়ি আসে। এ সময়ে মেয়ের জবানবন্দি শুনে আর আলামত দেখে রাসেলের কথা বলাবলি করাতে রাসেলের বাবা কডু মিয়া ও তার ভাই জাকির এসে জীবননাশের হুমকি দিয়ে যান বলে উল্লেখ করেন ধর্ষিতার পরিবার। পরিবারের ভাষ্য: ভয় আর লজ্জায় মেয়েটির ভবিষ্যৎ ভাবনায় ধর্ষণের কথা বলতেও নারাজ ছিলেন। তবুও প্রভাবশালী পরিবারের পক্ষ থেকে হুমকি ধামকি অব্যাহত থাকে। ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মা চাপা কান্নায় বলেন, এখন আর লজ্জা করে কি লাভ হবে। এলাকার সব লোকেরা ঘটনা জেনে গেছে। সহজ সরল মেয়েটিকে নেশাখোর রাসেল জোড় পূর্বক বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেছে। উল্টো আমার স্বামীকেই হত্যার হুমকি দিচ্ছে। রাসেলদের শক্তি আছে, ওদের বাপ-চাচারা ৬ ভাইসহ গোষ্ঠীর অনেক লোক আছে, তাদের টাকাও আছে। আমার স্বামী তরকারি বিক্রি করে, গরীব মানুষ, শক্তি নাই। আইনেও সঠিক বিচার পাইতেছি না। একথা বলে আফসোসে ফেটে পড়েন। সরেজমিন অনুসন্ধান ও এলাকাবাসীর তথ্যমতে জানা গেছে নেশাগ্রস্ত বদ চরিত্রের অধিকারী রাসেল। যে কারণে আপন চাচী প্রবাসি লিটুর স্ত্রী সংলগ্ন ঘরের জোসনা, পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গুর মিয়ার স্ত্রী হেলেনা এবং বয়োবৃদ্ধ মিলন আক্তারসহ অসংখ্য নারীরা রাসেলের এ ধরণের একাধিক ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করেন। রাসেলের মা নাসিমা আক্তারের ভাষ্য: ছেলের এ ঘটনার পর থেকে স্থানীয়ভাবে মিমাংসার লক্ষ্যে চেষ্টা করে চলেছেন। তবে মেয়েটির মা-বাবা মিমাংসা করতে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। তারা মামলা করতে চান বলেও উল্লেখ করেন। অত্র এলাকার ইউপি সদস্য আবু মিয়ার কাছে ধর্ষক রাসেল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন পাশ্ববতী বাড়ির আবু কালামের বোনের সাথেও এ ধরণের ঘটনার বিষয়ে এলাকায় দরবার সালিশ করেছেন। পুনরায় একই ধরণের আচরণের বিষয়টি দুঃখজনক বলেও উল্লেখ করেন। নিয়মিত নেশা পানির সাথে জড়িত থাকার বিষয়টিও ইউপি সদস্যসহ অসংখ্য স্থানীয়রা স্বীকার করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সোবহানের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে আসামিকে গ্রেফতার করে মামলা রুজু করা হবে বলে তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এমন তথ্য উপস্থাপন করেন প্রশ্নবিদ্ধ জবাবের মুখে। ওসি কাজী আরিফ উদ্দিনের সাথে এই বিষয়ে কথা হলে তিনি ধর্ষণের বিষয়টি পূর্বে শুনেনি। যৌন হয়রানির কথা শুনেছেন বলেও উল্লেখ করেন। তবে আলামত নষ্ট হবে এমন ইঙ্গিত করায় আর উর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরপরই ঘটনাস্থলে এসে কিশোরীকে নিয়ে যায় ধর্ষণ মামলার প্রস্তুতির লক্ষ্যে। এই বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চোধুরী (বিপিএম) এর কাছে শনিবার দুপুরের দিকে চলতি মাসের ১৩ তারিখের ঘটনায় লিখিত অভিযোগের পরেও রহস্যজনক কারণে থানাপুলিশ মামলা নেয়নি বলে স্থানীয় পর্যায়ে গুঞ্জন উঠেছে। এমন তথ্য উপস্থাপন করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে নিকলী থানার ওসির সাথে কথা বলে দেখবেন বলেও জানান।সম্পাদক- অভি চৌধুরী।
যোগাযোগ: ৫১/৫১/এ রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (লেভেল-৩), স্যুট-৪০৫, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
ফোন:০২-২২৩৩৫৭০৭৩ মোবাইল: ০১৭১১-৫২০০৪৬, ০১৮১৯-২২৬১৬০। ই-মেইল: dainikbusinessfile@gmail.com