বালু খেকোদের অভয়ারণ্য বাজিতপুরের দিলালপুর

Dainik Business File: জানুয়ারি ১৫, ২০২৫

বালু খেকোদের অভয়ারণ্য বাজিতপুরের দিলালপুর আলি জামশেদ, হাওর অঞ্চল থেকে বালু খেকোদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার দিলালপুরের নদীতীর এলাকা। চোখ মেললেই ধরা পড়ে দিলালপুর বাজারের উপর দিয়ে মোটা পাইপের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলনের দৃশ্য। লাখ লাখ ঘনফুট বালি বাজারের পূর্ব দিকেও লোহার মোটা পাইপের মাধ্যমে নিয়মিত আনলোড করা হচ্ছে। বাজারের উত্তর দিকে ব্রীজ সংলগ্নে দীর্ঘদিন ধরে বিশাল বালির স্তূপ। বিভিন্ন স্থান থেকে উত্তোলন পরবর্তী জমাকৃত এ সব বালি বিক্রি করে থাকে আশেপাশের এলাকাসহ দূর-দূরান্তে। স্থানীয়দের ভাষ্য এমনটি দৃশ্যমান হলেও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে উন্নয়নমূলক কাজের অজুহাতে অগনিত ঘনফুট বালি অবৈধ ড্রেজারের সাহায্যে স্টিলের বড় সাইজের নৌকার মাধ্যমে রাতের আঁধারে নদীর বুক থেকে উত্তোলনের সুযোগ তৈরি করে নেয় উত্তোলন কাজে জড়িতদের মাধ্যমে নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালী অসাধু রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। ওরা ম্যানেজ করে নেয় স্থানীয় প্রশাসনকেও। যে কারণে স্থানীয়দের প্রতিবাদের ভাষ্য প্রভাবশালী বালু খেকোদের ভয়ে চাপা পড়ে। বাধা দিলে রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে সাধারণকে হয়রানির শিকার হতে হয়। এই কারণে সচরাচর বাধা দেয়ারও সাহস দেখায় না বলে উল্লেখ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালি বিক্রেতা অনেকটা ক্ষোভের ভাষায় উল্লেখ করেন, সরকারিভাবে বালি-মাটি উত্তোলনে বাধা দেয়া হয় বলেই প্রশাসন ম্যানেজ করে নদীর বুক থেকে বালি তোলা হয় রাতের আঁধারে। এ সব বালি সকালের দিকে স্টিলের বোট থেকে মেশিনের সাহায্যে পাইপের মাধ্যমে নামানো হয়। এ সব কি অগোচরে হচ্ছে! বালু তোলার ক্ষেত্রে এলাকার নেতা ও আইনের লোকদের ম্যানেজ করতে হয় বলেই বেশি দামে এ সব বালি মাটি বিক্রি করতে হয়। উল্টো জবাবে তিনি প্রশ্ন রাখেন ‘সরকার যদি একেবারে বালি তোলা বন্ধ করে দেয় তাহলে জনগণ এবং সরকারের কাজ করবে কি দিয়ে?’ সরকারিভাবে আমাদের এলাকার নদীর চর থেকে বালু তোলার পরে যদি বিক্রি করতো তাহলে সব ঠিক থাকতো আর সরকারও লাভবান হতো। এখনতো পেট ভরে নেতা আর প্রশাসনের! প্রকাশ্যে বালি উত্তোলনের দৃশ্যে স্থানীয়দের আফসোসের ভাষ্য: প্রশাসনকে বলে লাভ হয় না বরং স্থানীয় শত্রুতা বেড়ে যায়। যা পরবর্তীতে ক্ষতি হয়। স্থানীদের দেয়া তথ্যমতে, দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ সময়ের ব্যবধানে আ’লীগ স্থানীয় নেতাকর্মীরা বালি উত্তোলন করে কোটিপতি বনে গেলেও এবার স্থানীয় বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এর সাথে জড়িত। বাজিতপুর উপজেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা দাবিদার তানজিদ হোসেন শুভ্রর সাথে কথা হলে তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারের নামে নয় বরং ব্যক্তিগতভাবে এই বালির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলগির চর কিনে নিয়ে আসার কথা জানান। এলোমেলো ঠিকানায় এমনটি উল্লেখ করেন। তবে রাতে নদী থেকে বালু তোলেন এমনটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। স্থানীয় ওসি এবং ইউএনওর সাথে কথা বলেই কাগজপত্র ঠিক করে তিনি এ বালি ব্যবস্থা করছেন বলেও এক পর্যায়ে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি হিলচিয়ার তোফাজ্জলসহ বাকী বেশ কয়েকজনের এই ব্যবসার কাগজপত্র ঠিক নেই বলে উঠে যেতে হয়েছে এমনটিও স্পষ্টভাবে তোলে ধরেন। বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিরের সাথে দিলালপুরে বালি উত্তোলনের হিড়িক বিষয়ে কথা বলা হলে তিনি নিজে এসবে জড়িত নন বলে দাবি করেন। এমনকি যারা বালু নিয়মিত আনলোড করে চলেছেন তারা রায়পুরা থেকে কিনে নিয়ে এসে আনলোড করে বলে উল্লেখ করেন। দিলালপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সবুজ মিয়া বলেন, ঘটনাস্থলে ইউএনও এবং আমি পরিদর্শক করেছি। বুধবার (১৫) জানুয়ারি বিকালে বালি আনলোড হতে দেখা যাচ্ছে এটা সত্য। তবে কোথা থেকে কে নিয়ে এসেছে তা তার জানা নেই। দীর্ঘদিন থেকেই এমনটি হচ্ছে জবাবে আগে জানতেন না বলেও দাবি করেন। বাধা এবং কাগজ বিষয়ে বৈধ-অবৈধ বিষয়টি তার এখতিয়ারে নেই বলেও উল্লেখ করেন। বাজিতপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ফারাশিদ বিন এনাম বলেন, তার জানামতে বাজিতপুরের কোথাও বালু উত্তোলন হয়নি। এমনকি তোলার দৃশ্য কখনো চোখেও পড়েনি। তবে সুনির্দিষ্টভাবে ঘটনার বিবরণ দেয়া হলে তিনি জেলা পর্যায় থেকে নির্দেশনা আছে বুটে করে বালি মহাল থেকে কেউ নিয়ে আসলে আর এসবের সঠিক কাগজ থাকলে এক্ষেত্রে বিক্রি করতে পারবেন। জেলার কোথাও বালু মহাল নেই স্বীকার করলেও উপজেলা প্রশাসন ম্যানেজ করে অবৈধ উপায়ে রাতের আঁধারে বালু তোলার পরে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে আনলোড করার বিষয়টি সম্পূর্ণই অস্বীকার করেন। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজিয়া খানের কাছে জানতে চাওয়ার জবাবে কিশোরগঞ্জের কোথাও বালি মহল নেই বলে স্বীকার করেন। তবে বাজিতপুর উপজেলার দিলালপুরের বালি উত্তোলন বিষয়ে ইউএনওর কাছে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানান তিনি।

সম্পাদক- অভি চৌধুরী।

যোগাযোগ: ৫১/৫১/এ রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (লেভেল-৩), স্যুট-৪০৫, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
ফোন:০২-২২৩৩৫৭০৭৩ মোবাইল: ০১৭১১-৫২০০৪৬, ০১৮১৯-২২৬১৬০। ই-মেইল: dainikbusinessfile@gmail.com