মানবপাচার চক্রের সদস্য বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম এয়ারপোর্টে গ্রেফতার

দৈনিক বিজনেস ফাইল: November 11, 2025

মানবপাচার চক্রের সদস্য বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম এয়ারপোর্টে গ্রেফতার বিজনেস ফাইল প্রতিবেদক জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার বহুল আলোচিত সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম ১০ নভেম্বর বিমানবন্দরে গ্রেফতার হয়েছেন। ফখরুল ও তার সহযোগী জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মানবপাচার এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা রয়েছে। প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মঙ্গলবার মামলাটি করেছেন আরইউএল ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার মো. রুবেল হোসেন। বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সরোয়ার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এজহারে বলা হয়েছে, বাদী রুবেল হোসেন আরইউএল ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির ম্যানেজিং পার্টনার। তিনি বারিধারার হিউম্যান রিসোর্স ডেভলপমেন্ট সেন্টারের (আরএল-৪৫২) প্রোফাইটার ফখরুল ইসলাম ও তার সহযোগী জসিম উদ্দিনের সঙ্গে অনুমানিক ৫ বছর আগে ব্যাবসায়িক সুবাধে পরিচিত হন। তাদের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক ছিল। ২০২৩ সালের মে মাসে ফখরুল ইসলাম ও জসিম একত্র হয়ে রুবেলকে বলেন, তাদের কাছে মালয়েশিয়ার ভালো ভালো কোম্পানির ভিসা আছে। রুবেল ওইসব ভিসায় লোক পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করলে ওই বছরের ২৫ মে ফখরুল ও জসিম বনানীর মেসার্স আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল নাম অফিসে দেখা করেন। ফখরুল ও জসিম বলেন, মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন কোম্পানি যেমন নিউ ভিশন গ্রীন ল্যান্ড এসএনডি, প্রিমভিনান ডান কেজুরটিউরান এসইইএ এসনডি, চাই চাং ফুড ইন্ডাস্ট্রি এসএনডি কোম্পানিতে শ্রমিকর ডিমান্ড আছে বলে জানায়। তারা শ্রমিকদের পাসপোর্ট থাকলে জমা দিতে বলে। ফখরুল ও জসিম শ্রমিক পাঠাতে পাসপোর্ট প্রতি ৫ লাখ ৫০ হাজার দিতে হবে মর্মে মৌখিক চুক্তি করে। বাদী চতুর আসামীদের কথায় সরল বিশ্বাসে চুক্তি অনুযায়ী আসামীদেরকে ২০২৩ সালের ২৭ মে বনানী থানাধীন আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল অফিসে বসে ৫৫ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় প্রেরণের জন্য কথা বলে। পাসপোর্ট সহ কর্মীপ্রতি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে নগদ তিন কোটি দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা আসামীদেরকে দিয়েছেন। ২০২৩ সালের ২৭ জুন আসামীরা মালয়েশিয়ার ইকো ইন্টেরিয়র্স ইন্টারন্যাশনাল নামক কোম্পানিতে চাকুরী দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ২৪ জন কর্মীর পাসপোর্টে নেয়। ওই ২৪ কর্মী হচ্ছেন রফিকুল ইসলাম, সাগর আলী, রাজু আহমেদ, ইয়াসিন আরাফাত, রাকিব হাসান, আব্দুল আলিম, আলমগীর হোসেন, এনামুল হক, রইজুল ইসলাম, শরিফ আহমেদ, আসাদুল ইসলাম, রাসেল ব্যাপারী, লিটন মিয়া, জামাল শাকি, মোঃ হুমায়ুন কবির, মোস্তফা আলী, সাগর মিয়া, আব্দুল আলীম, আমিরুল ইসলাম, মোহাব্বত আলী, শিহাব উদ্দিন, আলীফ আহমেদ, চনু মিয়া ও সজিব হোসেন। এছাড়াও বিভিন্ন তারিখে চাই চাং ফুড ইন্ডাস্ট্রি এসএনডি কোম্পানিতে চাকুরী দেয়ার মিথ্যাআশ্বাস দিয়ে সুজন খান ও নূর আলম খানকে এবং এলবিএস ইন্ডাস্ট্রিজে বাবলু ও বাদল নামে আরও ৪ জনসহ মোট ২৮ জন কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠান। কিন্তু আসামীরা উল্লেখিত শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। চুক্তি মোতাবেক কোম্পানিতে চাকুরী না দিয়ে অন্যত্র নিয়ে আটকে রাখে। ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে পুন:রায় টাকা দাবী করে। বাদী বিষয়টি জানতে পেরে তার এজেন্সির মাধ্যমে আসামীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আসামীরা তাদের লোকজনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মীদের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়। এপর্যায়ে আসামীরা বাদীর চাপের মুখে শ্রমিকদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। আসামীরা চুক্তি মোতাবেক শ্রমিকদের কাজ দেয়নি। প্রেরিত শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করলেও আসামীরা বিভিন্ন তালবাহানায় বাদী ও তার লোকজনদের ঘুরাতে থাকে। পরবর্তীতে বাদী রুবেল আসামীদের নিকট বিভিন্ন মাধ্যমে পাঠানো ২৮ জন কর্মীর সমস্যা সমাধান কিংবা পাঠানো শ্রমিকদের দেশে ফেরত নিয়ে আসার কথা বলে। অন্যদের শ্রমিকদের জন্য জমা দেওয়া আরও ১ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত চান বাদী। কিন্তু আসামীরা টাকা না দিয়ে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধমকি এবং টাকা না দেওয়ার জন্য নানা রকম টালবাহানা করে যাচ্ছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বাদী ও শ্রমিকদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে ভালো কাজের আশ্বাস দিয়ে মালয়েশিয়ায় (বিদেশী) কর্মীদের প্রেরণ করে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে চুক্তি মোতাবেক কাজ প্রদান না করে আটকিয়ে রেখে নির্যাতন করেন। এছাড়াও আসামীরা মালয়েশিয়ান শ্রমিক পাঠানোর কথা বলে বাদীর কাছ থেকে বড় অংকের টাকা নিয়েছে। আসামীদের কাছে বাদীর এখনো ১ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। জানা গেছে, বিতর্কিত ব্যবসায়ী ফকরুল আগেও বহু মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়েছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ দেয়নি। তার বিরুদ্ধে আগেও প্রতারণা ও মানবপাচার আইনে মামলা হয়েছে। চতুর ফকরুল সেগুলো থেকে আইনের ফাঁকফোকরে বেরিয়ে গেছেন।

প্রকাশক ও সম্পাদক : অভি চৌধুরী।

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ৫১/৫১-এ রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (লেভেল-৩, স্যুট-৪০৫), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।।
হটলাইন: ০১৭১১-৫২০০৪৬, ০১৮১৯-২২৬১৬০ । ই-মেইল: businessfile2022@gmail.com