নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা তারেক আজিজ লক্ষ্মীপুরের ডিসির ড্রাইভার

দৈনিক বিজনেস ফাইল: September 13, 2025

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা তারেক আজিজ লক্ষ্মীপুরের ডিসির ড্রাইভার লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুরের তারেক আজিজ এলাকাবাসীর এক আতঙ্কের নাম নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের লক্ষীপুর পৌর শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তারিক আজিজ দুর্দান্ত প্রভাবশালী এক ড্রাইভার। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী হলেও তিনি লক্ষ্মীপুরের ডিসির ড্রাইভার পদে বহালতবিয়তেই আছেন। পত্র পত্রিকায় তাকে নিয়ে ইতিপূর্বে অনেক লেখালেখি হলেও তার গায়ে কোন আঁচড়ও লাগেনি। উল্টো সে স্থানীয় সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে বেড়ায়। গণমাধ্যমকে তাচ্ছিল্য করে আজকের পত্রিকা আগামী দিনের ঠোঙ্গা হিসেবেও কটাক্ষ করে। তারেক আজিজের দাম্ভিকতার খবর সংশ্লিষ্ট জেলা, বিভাগ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সচিবালয়ের উপর মহলের অনেকেই অবগত। অথচ কী এক রহস্যজনক কারণে ২৪ গণভ্যুত্থানেরপরেও সৈরাচারের সক্রিয় দোসর তার স্বীয় পদে দাম্ভিকতার সাথে বহাল তবিয়তে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তা নিয়ে জেলা ডিসি অফিস থেকে শুরু করে গোটা লক্ষীপুর বাসীর মনে হাজারো প্রশ্ন। অনেকের মন্তব্য, তাহলে গোটা দেশ এখনো কি সৈরাচারের দোসর তারেক আজিজদেরই নিয়ন্ত্রণে? এ বিষয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা গেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জেলা প্রশাসকের আর্থিক কেলেঙ্কারির অন্যতম অংশীদার ছাত্রলীগ নেতা তারেক আজিজ উপরমহলের যোগসাজশে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর পৌর শিশুপার্ক, গরুর হাট ইজারায় বড় অংকের লেনদেন হয়ে থাকে। যার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা আছে তারেক আজিজের। পাঁচ উপজেলার ভূমি অফিসের তহসিলদার, অবৈধ ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করে থাকেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা, লক্ষীপুর ডিসির ড্রাইভার তারেক আজিজ। এ ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, ইউনিয়ন পরিষদের টিআর, কাবিখা, এলজিইডি প্রকল্প, পৌরসচিবদের নিয়োগ-বদলিসহ বিভিন্ন খাত থেকেও নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকেন তারেক আজিজ। ছাত্রলীগ নেতা তারেক আজিজ এলাকার তিনতলা ভবনসহ স্থাবর-অস্থাবর অনেক সম্পত্তির মালিক। এদিকে, পরিবহনপুল থেকে তারিক আজিজের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চেয়ে ইতিপূর্বে লক্ষীপুর ডিসিকে চিঠি দেয়া হয়। বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য তারেক আজিজ চেষ্টা তদবিরের ত্রুটি রাখেননি। কথিত আছে, সরকারি কোন যানবাহন যা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কোন ড্রাইভার বা চালক সরকারি কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য ব্যবহার ব্যতিত ব্যক্তিগত কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবেনা। অথচ, তারেক আজিজ লক্ষীপুরের ডিসির ব্যবহারের সরকারী গাড়িটি অহরহ নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে থাকে। বিষয়টি নিয়ে ডিসি অফিসে যোগযোগ করা হলে, লক্ষীপুর জেলার এনডিসি মীর মেজবাহীজ্জুলাম চৌধুরী বলেন ডিসি স্যার ও পরিবহন পোলর কমিশনার সার বিষয়টি তদন্ত করছেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন কথিত আছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ করা অবস্থা থেকেই তারেক আজিজ এবং তার পরিবারের অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী। অভিযোগ রয়েছে, তারেক শুধু একা নন। পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। রাজনৈতিক বিতর্কিত তারেকের নিয়োগ ইস্যুটি লক্ষ্মীপুর জুড়ে টক অব দি কান্ট্রি। তারেক আজিজের ভাই সাদ্দাম লক্ষীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে প্রভাব খাটিয়ে একচ্ছত্র সিন্ডিকেট তৈরি করে দালালী কার্যক্রম করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসীর কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের উপর নেমে আসে অসহনীয় অত্যাচার। মামলা, হামলা এমন কি প্রাণনাশের ভয়ে অনেকেই এলাকা ছাড়া হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী একজন বলেছেন: ২০২৩ সালে দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে তারেক আজিজের ভাই সাদ্দামের নামে লক্ষীপুরের কমল নগর উপজেলায় তোরাবগঞ্জ মৌজায় সরকারী জায়গায় একটি দোকান বরাদ্ধ নেয়। যার স্থানীয় মূল্য কোটি টাকারউর্ধ্বে। তারেকদের পরিবার লক্ষীপুর সদরের স্থায়ী বাসিন্দা। দোকান নিয়েছে কমল নগর উপজেলায়। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী একউপজেলার স্থায়ীবাসিন্দা কি অন্য উপজেলায় দোকান বরাদ্ধ নিতে পারে? ৫ আগস্ট সৈরাচারের পটপরিবর্তনেরপর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে সৈরাচারের দোষর হিসেবে নাশকতার কাজে সক্রিয় থাকায় তারেক আজিজ এবং তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার এজাহারের একটি খসড়া হয়। যার মধ্যে তারেক আজিজের ভাই সাদ্দামকে ৬৭ এবং তারেককে ৮৩ নাম্বার আসামীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই খসড়া এজাহারের একটি কপি হাতে এসেছে। কিন্তু এলাকায় কথিত আছে, তারেক এবং তার ভাই সাদ্দামের নাম খসড়া এজাহারে থাকায় তা থানায় প্রভাব খাঁটিয়ে পুলিশের সাথে যোগসাজসে মামলার বাদীকে ভয়ভীতি এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে থানায় নথিভুক্ত করতে দেয়া হয়নি। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদধারী তারেক আজিজকে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মানে ডিসি’র গাড়িচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে ২০২৫ সালেই। সূত্র মতে, ডিসির ড্রাইভার হওয়ার জন্য একজন ড্রাইভারের অভিজ্ঞতার সঙ্গে ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী হওয়া এবং গ্রেড-১৫ প্রয়োজন। এগুলোর কোনোটিই নেই তারেকের। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আস্থাভাজন এমন বিতর্কিত চালককে পাশে রেখে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম চালানোয় জেলা প্রশাসক নিজেই তার ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা। সচিবালয়ের পরিবহণ পুলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি গাড়িচালক হিসেবে ৩১ মার্চ ’২৪ তারিখে চাকরিতে যোগদান করেন তারেক আজিজ। কয়েক মাসের ব্যবধানে এ বছরের ২৫ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর ডিসি অফিসে পদায়ন করা হয় তাকে। আর চাকরির এক বছরের কম সময়ের ব্যবধানে ডিসির আস্থাভাজন তারেক ড্রাইভার এখন লক্ষ্মীপুর পৌরসভা ৬নং ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এদিকে, আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য ও দলটির পদধারী হওয়া সত্ত্বেও পদ-পদায়নে বঞ্চিত অনেককে পেছনে ফেলেছেন তারেক আজিজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকতের কাছের বন্ধু হিসেবে এলাকায় সবার কাছে পরিচিত তিনি। তার ভাই সাদ্দাম পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং গত পৌরসভা নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। ভাই ডিসির চালক হওয়ার সুবাদে যুবলীগের পদধারী সাদ্দাম এখন স্থানীয় বিআরটিএ'র বড় দালাল। তার পিতা ছৈয়দ আহাম্মদ পৌর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সদস্য। ২০১৪ সালে মাস্টার রোলে লক্ষ্মীপুর সদর ইউএনও'র গাড়িচালক হিসেবে তারেক আজিজের হাতেখড়ি। এসময় তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ইউএনও তাকে সরিয়ে দেন। পরবর্তীতে মাস্টার রোলে কমলনগর এসিল্যান্ডের গাড়িচালক হন। অতীত অনিয়ম, আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা এবং চাকরির শর্তের বেড়াজাল কোনোটিই লক্ষ্মীপুরের ডিসির চালক হওয়ার পথে অন্তরায় হয়নি। এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কাছাকাছি রাখায় এলাকায় নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনিয়ম করার পরেও শাস্তির বদলে একটার পর একটা পুরস্কার পেয়ে যাচ্ছেন তারেক আজিজ। তারেকের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিরও অভিযোগ রয়েছে। তিনি লক্ষ্মীপুর সদর ইউএনওর গাড়িচালক থাকা অবস্থায় মেয়ে নিয়ে মজু চৌধুরীর হাটে জনতার হাতে ধরা পড়ে ১০ হাজার টাকায় মুচলেকা দিয়ে লক্ষ্মীপুরের সাবেক মেয়র এমএ তাহেরের ছেলে লক্ষীপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন টিপু তাকে ছাড়িয়ে আনেন। শুধু তাই নয়, কমলনগর উপজেলার এসিল্যান্ডের গাড়িচালানোর সময় উপজেলা পরিষদের ব্যাচেলর কোয়ার্টারে মেয়ে নিয়ে অবৈধ কাজ করার সময় জনতার হাতে ধরা পড়েন। মেয়ের পরিবার ও স্থানীয় জনতা বিয়ে করিয়ে দিতে চাইলেও ইউএনও, এসিল্যান্ড ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি নুরুদ্দিন চৌধুরী নয়নের হস্তক্ষেপে ছাড়া পায়। স্থানীয়দের প্রশ্ন, একজন গাড়ি চালক এত দাম্ভিকতা কিভাবে দেখায়? অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার মূল শক্তি লক্ষ্মীপুরের ডিসি। দু’জনের রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল থাকায় বহাল তবিয়তে থেকে একের পর এক অপকর্ম করে পাড়পেয়ে যাচ্ছে তারেক। এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতারা ডিসি অফিস ঘেরাও করলেও নড়েনি ডিসি রাজীব কুমার এর গদি। উল্টো তার চালক আস্কারা পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে দেশের উপর মহল, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুরবাসী। স্বৈরাচারের দোসর গাড়ি চালকের অপকর্মের তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে তারা আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

প্রকাশক ও সম্পাদক : অভি চৌধুরী।

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ৫১/৫১-এ রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (লেভেল-৩, স্যুট-৪০৫), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।।
হটলাইন: ০১৭১১-৫২০০৪৬, ০১৮১৯-২২৬১৬০ । ই-মেইল: businessfile2022@gmail.com