প্রকৃতির বিচার ( Justice of Nature)

Dainik Business File: জুলাই ১৫, ২০২৪

প্রকৃতির বিচার ( Justice of Nature)

আব্দুল কুদ্দুছ

পাপ যত সংগোপনেই করা হউক না কেন। প্রকৃতি সব কিছুর নিরব স্বাক্ষী। প্রকৃতি সব কিছু দেখতে পায়,শুনতে পায় এবং বুঝতে পারে।প্রকৃতি সব সময় তার নিয়মে সাবলিলভাবে বিচার করে থাকে।প্রকৃতির বিচারটা খুব কঠিন। এতটা কঠিন যেটা কঠিনের কঠিনকেও হার মানায়। সেটা দেখার জন্য প্রতীক্ষা করতে হয়। অনেকটা প্রতীক্ষা। যেখানে সময় এসে প্রকৃতির সঙ্গে দাঁড়িয়ে যায়। সে সময়টা এতটাই কঠিন হয় যা কঠিনকে ভেঙে খণ্ডিত বিখণ্ডিত করে দেয়। প্রকৃতির বিচারটা খুব নীরবে, নিঃশব্দে হয়। সব মানুষ সে বিচারের ফলাফলটা বুঝতে পারে না। প্রকৃতি সেটা মানুষকে সঙ্গে সঙ্গে বলতে চায় না। প্রকৃতি মানুষকে আগে তৈরি করে, সময়কে চেনাতে চেনাতে মানুষকে একটা শূন্যতার জায়গায় টেনে নিয়ে যায়। তারপর সময় সেটা মানুষকে একসময় জানিয়ে দেয়। তখন হয়তো সেটা ইতিহাস। কিংবা একখণ্ড মমি। পাপের মুখোশটা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়, ধসে পড়ে জনপদের পরে জনপদ মানবিক মূল্যবোধ। পাপের পরিণতির আগে প্রকৃতি পাপীদের পরীক্ষা নেয়। সে পরীক্ষাটা মানুষের পরীক্ষার চেয়ে অনেক কঠিন হয়। সেটা জীবনের পরীক্ষা, যা তিলে তিলে পাপীদের আঘাত করে। অনুশোচনার কঠিন আগুনে দগ্ধ করে। প্রতিদিন তাদের পুড়িয়ে পুড়িয়ে তাদের বিশ্বাসঘাতকতার নগ্ন দেহটাকে তাদের সামনে ব্যবচ্ছেদ করে। এভাবে অনেক দিন ধরে প্রকৃতি তাদের অবিচারের বিচারটা করতে থাকে, যা একদিন চূড়ান্ত হয়। সেখানে মানুষের পৃথিবীর মতো আইন-আদালত থাকে না। পক্ষ-বিপক্ষ থাকে না। সেখানে ঠাঁই কংক্রিটের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে প্রকৃতি। ক্রমাগত বোবা কান্নাকে চেপে রাখা প্রকৃতি সরব হয়। প্রকৃতির অদৃশ্য মানসপটে ভেসে উঠে বিদীর্ণ মহাকাল। অপরাধী, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাত তার অপরাধের চিহ্ন রাখতে চায় না । মুছে ফেলার চেষ্টা করে এবং এক সময় ভুলে যায়। মনে করে আর কোন দিন এর বিচার হবে না। প্রকৃতি সেদিন নিস্তব্ধ হয়ে থাকে যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়।আছাড়ি-বিছাড়ি করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে। সেদিনের অপরাধ প্রকৃতি কখনো ভোলে না। সময় প্রকৃতিকে সাহস দেয়। প্রকৃতি পাপ আর অপরাধের শাস্তি নিজ হাতে দেয়। প্রকৃতি তাকে তিল তিল করে হত্যা করে। সবাই তাকে ছাড় দিলেও প্রকৃতির বিচার তাকে ছাড় দেয়নি। আপনি ‘যদি রাস্তা থেকে কোনো ক্ষুধার্ত কুকুরকে বাড়িতে নিয়ে যান এবং লালনপালন করেন তবে কুকুরটি কখনো তোমাকে কামড়াবে না।কিন্তু পৃথিবীর আশরাফুল মাখলুকাত খ্যাত সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে উপকার করলে তা মনে রাখতে চায় না। এটাই হলো মানুষ ও কুকুরের মধ্যে পার্থক্য। বর্তমান জগতে মানুষ তো আর মানুষ নেই। মানুষের এখন দেশের প্রতি মায়া নেই। মমতা, ভালোবাসা নেই। তাদের ভিতর নাই কোন সততা ন্যায় নিষ্ঠা। আছে শুধু অর্থ লিপ্সা, স্বার্থপরতা,ঘুষ, দুর্নীতি। মানুষ এখন প্রকৃতির মতো করে পৃথিবীকে দেখে না। মানুষ পৃথিবীকে দেখে তার স্বার্থের মতো করে। আপনজনের টান মানুষকে কাঁদায় না। কারণ মানুষ যে প্রকৃতির কাছে উদারতার শিক্ষাটা নিতে পারে না। সেটা নেওয়ার মতো যে একটা বড় মন থাকতে হয়, সেটাও এখন তো মানুষের মধ্যে নেই। না আছে মানুষের বিবেক, না আছে আবেগ না আছে মানুষে প্রতি ভালোবাসা। আছে শুধু মানুষে মানুষে হানাহানি, হিংসা, বিদ্বেশ, অপ্রীতি, শুত্রুতা এবং ঈর্ষা। সব যেন ভেঙেচুরে ওলটপালট হয়ে গেছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘ বলেছেন, ‘আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি—তার ভেতরের কুকুরটা দেখব বলে।’ প্রকৃতি আমাদের মধ্যে এমন বোধশক্তি গড়ে তুলুক। প্রকৃতি এমন একটা শক্ত মাটির মতো মনের কাছে এসে দাঁড়াক। বদলে ফেলুক মানুষ। জাগিয়ে তুলুক মানবিক মূল্যবোধের একটি দেশ। যেখানে পাপ, পাপী, অপরাধ, অপরাধী সবটাই এক সমীকরণে এসে বলবে, ‘অশুভ চিন্তা হারিয়ে যাক, শুভ চিন্তা বেঁচে থাক।’ সব অপরাধ পাপ নয়, সব পাপ অপরাধ নয়। দর্শনটা যে কারো হতে পারে। তবে প্রকৃতির দর্শন আর চিন্তার হাতকে কখনো ছেড়ে দেওয়া ঠিক না। প্রকৃতি সব জানে, সব দেখে, সব বুঝে। প্রকৃতির বিচার কেউ এড়াতে পারে না। লেখক: জিএম, সোনালী ব্যাংক পিএলসি।

সম্পাদক- অভি চৌধুরী।

যোগাযোগ: ৫১/৫১/এ রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (লেভেল-৩), স্যুট-৪০৫, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
ফোন:০২-২২৩৩৫৭০৭৩ মোবাইল: ০১৭১১-৫২০০৪৬, ০১৮১৯-২২৬১৬০। ই-মেইল: dainikbusinessfile@gmail.com