এফবিসিসিআইয়ের সকল পরিচালক পদে সরাসরি নির্বাচন দাবি ব্যবসায়ীদের

Dainik Business File: মে ১৮, ২০২৪

এফবিসিসিআইয়ের সকল পরিচালক পদে সরাসরি নির্বাচন দাবি ব্যবসায়ীদের বিজনেস ফাইল প্রতিবেদক বাণিজ্য সংগঠন খসড়া বিধিমালা-২০২৪ এর সংশোধনী চেয়ে এফবিসিসিআইয়ের সকল পরিচালকপদে সরাসরি নির্বাচন চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন বিধিমালা কার্যকর হলে চাইলেই আর বাণিজ্য সংগঠন করা যাবে না। এ জন্য অনেক কঠিন শর্ত পূরণ করতে হবে। সংশোধিত আইন ও বিধিমালাটি প্রণয়নের আগে খাতভিত্তিক এ্যাসোসিয়েশন এবং জেলা চেম্বারের মতামত নেওয়া হয়নি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা চাচ্ছেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় এফবিসিসিআইয়ের অধিভূক্ত সকল এ্যাসোসিয়েশন এবং চেম্বারের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। এলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার মতিঝিলের এফবিসিসিআই ভবনে জরুরি আলোচনা সভা ও বৈঠক করে সংগঠনটির পরিচালকরা। মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবং নিজাম উদ্দিন রাজেশের নেতৃত্বে এফবিসিসিআইয়ের প্রায় ২৫ জন পরিচালক এবং বিভিন্ন এ্যাসোসিয়েশনের দুই শতাধিক নেতারা সভায় অংশগ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, আলোচনা সভা এক পর্যায়ে প্রতিবাদ সভায় রূপ নেয়। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, বাণিজ্য সংগঠন খসড়া বিধিমালা-২০২৪ ব্যবসায়ীদের পাশ কাটিয়ে করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআই থেকে শুরু করে কোন একটি স্টেক হোল্ডারের মতামত নেওয়া হয়নি। তাই এ বিধিমালাটি আরও সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। যদি সংশোধন না করে তড়িঘড়ি করে আইনটি পাস করানো হয় তাহলে ব্যবসায়ীরা তা মানবে না। তাদের মতে, বর্তমান যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রতিটি পদে সরাসরি নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় ব্যবসায়ীরা এই কালো আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতির স্বার্থেই যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী এবং সব সময় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাশে থাকেন তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। বক্তারা অভিযোগ করেন, কাউকে ধরে এনে এফবিসিসিআইয়ের নেতা বানানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। গণতান্ত্রিক উপায়ে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবেন। এটাই ব্যবসায়ীদের চাওয়া। অনেক পরিচালক আছেন যারা এফবিসিসিআইয়ের বোর্ড মিটিংয় আসেন না, তাদের কেউ চিনেনা। আবার ওইসব নেতারা ও কাউকে চেনেনা। এ ধরনের ব্যবসায়ীর নেতা হওয়ার সুযোগ নেই। কেউ মানবে না। এ অবস্থায় সরাসরি ভোট বাতিল করে কোন বিধিমালা করা হলে মানা হবে না। সম্প্রতি পরিচালকদের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমকে দেওয়া এ সংক্রান্ত একটি চিঠিতে বলা হয়, আমরা গভীরভাবে উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এফবিসিসিআইয়ের সাথে কোনরূপ বাস্তবসম্মত আলোচনা না করেই তড়িঘড়ি করে একতরফাভাবে নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-২০২৪ খসড়া আইনে পরিণত করার অপতৎপরতা শুরু করেছে। এটি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি কালো আইন হিসেবে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-২০২৪ সংশোধনের লক্ষ্যে সদস্য সংগঠনগুলোর নিকট মতামত গ্রহণের জন্য শুনানির ব্যবস্থা করা এবং যুগোপযোগী আইন বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই কালো আইন প্রণয়নের উদ্যোগ সংশোধন করে যুগোপযোগী আইন করার জন্য এফবিসিসিআই হতে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। জরুরিভিত্তিতে বোর্ড সভা আহবান করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানাতে হবে। বৈঠকে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, নিজাম উদ্দিন রাজেশ, মো. সহিদুল হক মোল্যা, হাফেজ হারুন, আবু মোতালেব, মো. আবুল হাশেম, আমির হোসেন নূরানী, মো. আফতাব জাভেদ, তপন কুমার মজুমদার, মো. সিরাজুল ইসলাম, সালমা হোসেন এ্যাশ প্রমুখ। মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন বিধিমালা পাস হলে আর কোনদিন সরাসরি ভোট হবে না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলার কেউ থাকবে না। তাই আইনটি সংশোধন করতেই হবে। সবার মতামত নিতে হবে। এই কালো আইনের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলবোই। গত নির্বাচনে ভোটারদের কাছে এটি আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল। নিজাম উদ্দিন রাজেশ বলেন, আমরা বর্তমান নিয়মে ভোট চাই। সেক্টরভিত্তিক বন্টন সঠিক হয়নি। এতে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। মো. সহিদুল হক মোল্যা বলেন, ব্যবসায়ীদের মতামত না নিয়ে তাদের পাশ কাটিয়ে এ ধরনের একটি আইন পাস হতে পারে না। এটি রুখে দিতে হবে। আমরা সকল পরিচালক পদে সরাসরি ভোট চাই। মো. আফতাব জাভেদ বলেন, এফবিসিসিআই সভাপতিসহ প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো জরুরি হয়ে পড়ছে। আমরা এ ধরনের কালো আইনের বিপক্ষে। আবু মোতালেব বলেন, এফবিসিসিআইকে পাশ কাটিয়ে কোনভাবেই বাণিজ্য সংগঠন আইন সংশোধন করা যাবে না। ব্যবসায়ীরা এই কালো আইনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জানা গেছে, তিন দশক পর এবার আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। আইনের খসড়ায় এফবিসিসিআইর পরিচালক ৮০ জন থেকে কমিয়ে ৬৮ জন করার কথা বলা হয়েছে। বিদ্যমান আইন ও সংশোধনীর খসড়ায় এবার অনেক শর্ত পূরণের কথা বলা হয়েছে, যা আগে ছিল না। দেশে এখন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ১৯৯৪ কার্যকর রয়েছে। এটি করা হয় ১৯৮৫ সালের বিধিমালা বাতিল করে। উভয় বিধিমালাই করা হয় ১৯৬১ সালের বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশের ভিত্তিতে। সেই অধ্যাদেশ বাতিল করে ২০২২ সালে নতুন বাণিজ্য সংগঠন আইন প্রণয়ন করে সরকার। এ আইনের ভিত্তিতেই নতুন বিধিমালা করা হচ্ছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, বর্তমানে দুই বা এর বেশি বাণিজ্য সংগঠন যদি একই উদ্দেশে লাইসেন্স নেয়, তাহলে বাণিজ্য সংগঠন মহাপরিচালক এগুলোর লাইসেন্স বাতিল করে একত্রীকরণের আদেশ দিতে পারবেন। কোনো বাণিজ্য সংগঠন বা এফবিসিসিআই একত্রীকরণের জন্য আবেদন করলেও এ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন মহাপরিচালক। বর্তমানে এফবিসিসিআইর পর্ষদ ৮০ জনের। এসব পদ আবার দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে জেলাভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন বা চেম্বার থেকে ৪০ জন পরিচালক হয়েছেন। বাকি ৪০ পরিচালক পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনের। তবে ৮০ জন পরিচালকের মধ্যে ৩৪ জন মনোনয়নের মাধ্যমে ভোট ছাড়াই পদ পান। বাকি ৪৬ জনকে সরাসরি সদস্যদের ভোটে জিতে আসতে হয়। নতুন বিধিতে চেম্বার গ্রুপ থেকে ৩২ জন ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৩২ জন করে মোট ৬৪ জন পরিচালক এবং দুটি সংগঠন থেকে সরকার মনোনীত দু’জন করে চারজন পরিচালক অর্থাৎ মোট ৬৮ জন পরিচালক নিয়ে এফবিসিসিআইর পর্ষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

সম্পাদক- অভি চৌধুরী।

যোগাযোগ: ৫১/৫১/এ রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (লেভেল-৩), স্যুট-৪০৫, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
ফোন:০২-২২৩৩৫৭০৭৩ মোবাইল: ০১৭১১-৫২০০৪৬, ০১৮১৯-২২৬১৬০। ই-মেইল: dainikbusinessfile@gmail.com