পরকীয়া কী? ‘জড়িয়ে’ ধরবে কিন্তু ‘জড়িয়ে’ পড়বে না!
দৈনিক বিজনেস ফাইল: July 16, 2025
বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ—সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনে যেমন অভাবনীয় যোগাযোগের সুযোগ এনে দিয়েছে, তেমনি এক অদৃশ্য চ্যালেঞ্জও হাজির করেছে সম্পর্কের জগতে। আগের তুলনায় অনেক বেশি দম্পতি আজ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। গবেষণা বলছে, এর পেছনে বড় ভূমিকা নিচ্ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।
সহজলভ্যতা ও নতুন ‘অপশন’
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পুরনো প্রেমিক/প্রেমিকার সঙ্গে যোগাযোগ পুনরায় শুরু হওয়া যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়াও অত্যন্ত সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ইন্টারনেটে অসংখ্য এক্সট্রাম্যারিটাল ডেটিং অ্যাপ এবং সাইট পাওয়া যায়, যেগুলো বিয়ের বাইরের সম্পর্ক খুঁজতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নানা ধরনের সুযোগ দেয়। এ যেন সম্পর্কের বাজার—যেখানে পুরনো সম্পর্কে অসন্তুষ্ট মানুষজন এক ক্লিকে নতুন সম্পর্ক খুঁজে পায়।
গোপনীয়তা ও ছদ্মনামের সুযোগ
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত প্রোফাইল তৈরি করা যায়, ছদ্মনাম ব্যবহার করে পরিচয় গোপন রাখা যায়, এমনকি গোপন বার্তালাপও চালানো সম্ভব। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য এক ধরনের নিরাপত্তার মিথ্যা অনুভব তৈরি করে, যা মানুষকে এমন আচরণে উৎসাহিত করে—যা তারা বাস্তব জীবনে কখনও করতেন না।
মানসিক সংযোগ থেকে শারীরিক সম্পর্কে রূপান্তর
মানুষ নিজের অনুভূতি, দুঃখ-কষ্ট, অবহেলার কথা শেয়ার করতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ায়। একজন অপরিচিত ব্যক্তি যদি সেই শুনতে চায়, মনোযোগ দেয়, তখন এক মানসিক ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এই ঘনিষ্ঠতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোমান্টিক বা যৌন সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যেতে পারে—বিশেষ করে যখন কেউ নিজের বৈবাহিক সম্পর্কে অবহেলিত বা অপূর্ণ বোধ করেন।
নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগের ফাঁদ
হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম—এই প্ল্যাটফর্মগুলো যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে যোগাযোগের সুযোগ দেয়। নিয়মিত, নিরবিচ্ছিন্ন বার্তালাপ অনেক সময় সম্পর্কের গভীরতা বাড়িয়ে দেয়, যা সন্দেহের বাইরে থেকে যায়। এই সহজ যোগাযোগই অনেক সময় পরকীয়াকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
প্রলোভন ও সুযোগের মিলনক্ষেত্র
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত আকর্ষণীয় ছবি, ফ্লার্টি বার্তা ও তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া যায়। এই প্রবল প্রলোভনের পরিবেশে যারা ইতিমধ্যেই দাম্পত্যে একাকী বা সংযুক্তিহীন বোধ করেন, তারা সহজেই অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
সমাজ ও মূল্যবোধের চ্যালেঞ্জ
এখনও অনেকেই পরকীয়াকে নৈতিক অবক্ষয় হিসেবে দেখে থাকেন, তবে অনেকেই এটিকে মানসিক-আবেগজনিত পরিপূরক হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তবে একথা অস্বীকার করা যায় না যে, প্রযুক্তির যুগে সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক বেশি জটিল, ঝুঁকিপূর্ণ এবং অস্থির হয়ে পড়েছে। মনোবিদরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে ‘অপশন’ নয়, বাস্তব জীবনের ‘সংযোগ’ই হোক সম্পর্কের ভিত্তি। যতই প্রযুক্তি এগিয়ে যাক, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার উপায় একটাই—সময়, মনোযোগ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা। সম্পর্ককে বাঁচাতে চাই প্রযুক্তি নয়, মানবিক অনুভব। প্রকাশক ও সম্পাদক : অভি চৌধুরী।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ৫১/৫১-এ রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (লেভেল-৩, স্যুট-৪০৫), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।।
হটলাইন: ০১৭১১-৫২০০৪৬, ০১৮১৯-২২৬১৬০ । ই-মেইল: businessfile2022@gmail.com
