ঢাকা   ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই: ফখরুল ক্রিকেটার সাকিবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি গাজার ধ্বংসস্তূপে অবিস্ফোরিত বোমা সরাতে লাগবে এক দশক সরকারের ঘোষিত সময়েই নির্বাচন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু সোমবার দলিল জালিয়াতির অভিযোগ: বাজিতপুরে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা কামারখন্দে দলীয় প্রভাবে জলাধারের মুখ বন্ধ করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন নায়েব রেজাউল করিম বিএভিএস হাসপাতাল বন্ধের ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্ধোধন বনশ্রী আফতাবনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি বাবলু পন্ডিত, সম্পাদক জহির রাজধানীতে কালকিনি ও মাদারীপুরের বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে মাহামুদ আলম সরদারের মতবিনিময়

কামারখন্দে দলীয় প্রভাবে জলাধারের মুখ বন্ধ করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন নায়েব রেজাউল করিম

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশিত : রবিবার, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
  • 7 শেয়ার

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার দশশিকা গ্রামে সরকারি জলাধারের মুখ বন্ধ করে বাড়ি নির্মান করেছেন রেজাউল করিম তালুকদার নামে একজন ইউনিয়ন উপ-সহকারি ভুমি কর্মকর্তা। জলাধারের মুখ বন্ধ হওয়ায় সমান্য বৃষ্টি হলে আবাদি জমিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা ,বছরের ১২ মাসই পানিবদ্ধ থাকে জমিগুলো। গত ৫ বছর ধরে জলাবদ্ধতার করানে প্রায় এক শতাধিক বিঘা তিন ফসলী আবাদি জমিতে চাষাবাদ করতে পারছে না কৃষকরা ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক। একসময় এই জমিগুলোতে ইরি,বুরো ধান,পাট,সরিষয়া,তীল আবাদ করে জীবীকা নির্বাহ করতো অর্ধশতাধিক কৃষি পরিবার। কামারখন্দের দশশিকা ও কর্ণসুতি মৌজার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এই জলাধারটি।
কৃষকদের অভিযোগ পতিত সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নায়েব রেজাউল করিম তালুকদার জলাধারের মুখ বন্ধ করে দেন, এরপর অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা চেয়ারম্যান,ইউএনও, এসিল্যান্ড,কৃষি অফিসার এসে জলাধারের মুখ খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দিলেও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় তিনি জলাধার উন্মুক্ত না করে সেখানে বাড়ি নির্মান করেন।
কৃষক নুর নবী অভিযোগ করে বলেন রেজা এক সময় এনজিও তে চাকরি করতো পরে ভুমি অফিসে নায়েবের চাকুরি পান এর পর তিনি যেন আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ পেয়ে যান রাতারাতি হয়ে যান কোটি পতি,পরে তার পৈত্রিক সম্পত্তির পাশে আরো জমি কিনেন এর পর সেই জমিতে মাটি ভারাট করতে গিয়ে সরকারি জলাধারের মুখ বন্ধ করে দেন। এসময় আমরা প্রতিবাদ করলে তিনি আওয়ামীলীগের ক্ষমতা দেখিয়ে আমাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। জলাধারের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ইউএনও বরাবর একং কৃষি অফিস বরাবর এর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছি তারা সরজমিনে এসেছেন কিন্ত কোন কাজ হয় নি। আমরা জলাবদ্ধতার নিরসন চাই জমিতে আবাদ করতে চাই।
কৃষক মোহাম্মদ অভিযোগ করে বলেন কামারখন্দ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার শেখ কে কথিত ভাস্তি জামাই বানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে রেজা নায়েব সরকারি জলাধার এবং জমি দখল করে বাড়ি বানিয়েছে। তার ক্ষমতার দাপট এতই যে সে সরকারি নির্দেশনাও মানে না। উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ সবুজ জলাধারের পানি চলাচলের জন্য মাটি সরিয়ে দিতে বললে রেজা সেটা মানে না পরবর্তীতে তার বাড়ির নিচ দিয়ে পাইপ বসিয়ে দেওয়া হয় জলাধার সচল হতে পারে কিন্ত রেজা নায়েব সেই পাইপের মুখও বন্ধ করে দিয়েছে। সরজমিনে দেখা গেছে কয়েকটি পাইপ আছে যেগুলোর মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আবু সাইদ নামে এক কৃষক জানান রেজা একজন দুর্নীতিবাজ নায়েব এবং ভুমিদস্যু সে তার বাড়ির পাশে জমি কিনে তার চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সাথে জলাধারের মুখ বন্ধ করে দেওয়াতে আবাদও করতে পারছেন না। আবু সাইদ জানান তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আর রেজা আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে তাই নানা ভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। পতিত সরকারের দোসর রেজা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আব্দুল লতিফ হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী। কিন্ত তিনি এখনো দাপটের সাথে সরকারি চাকরি করছেন। তিনি বলেন রেজার বেতন হবে ২৬/২৭ হাজার টাকা অথচ তিনি ভাড়া থাকেন শহরের একটি অভিযাত ফ্লাডে,শহরে বিভিন্ন স্থানে নিজের নামে,স্ত্রীর নামে এবং সন্তানের নামে জমি কিনেছেন,এই গ্রামে দশশিকা ব্রীজের নিকট মাজেদ তালুকদারের নিকট থেকে ৩০শতক, কর্ণসুতি বাগারে ৬০ শতক আফাজের নিকট থেকে ২৬শতক, বাদশা মুন্সীর নিকট থেকে ১৬ শতক এবং কামাল তালুকদারের নিকট থেকে ২০ শতক জমিসহ আরো অনেক জমি কিনেছেন। টাকার বিনিময়ে তিনি এখানে ত্রাসের রাজত্ব করেছেন তার হাতে প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই জিম্মি,তা না হলে লাল নিশানা গাড়ার পরেও তিনি জমি ছারেন নি। হত্যা মামলার আসামী হয়েও চাকুরিতে বিদ্যমান আমরা তার শাস্তি চাই আর জলাধার অবমুক্ত চাই।


কৃষক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান রেজা নায়েব একজন ভুমিদস্যু এবং চতুর মানুষ তিনি দশশিকা গ্রামের মতিন চৌধুরীর হাত ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেন পরবর্তীতে মতিন চৌধুরীর সাথে বিবাদে লিপ্ত হন এবং উপজেলার আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি আনোয়ার শেখের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন পরিচয় দেন ভাস্তি জামাই হিসেবে পরবর্তীতে তার দাফটেই রেজা এখানে মানুষকে নির্যাতন করেন। আওয়ামীলীগের ক্ষমতা খাটিয়ে তিনি আমাদের কৃষকদের আবাদি জমির পানি নিস্কাসনের রাস্তা বন্ধ করে বাড়ি নির্মান করেছেন। আমরা আমাদের জমিতে ফসল উৎপাদন করতে চাই প্রশাসনের নিকট আবেদন করবো স্বৈরাচারের পতন হয়েছে তাদের দোসরদের দখলদারি মুক্ত করতে হবে এবং তার শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
কামারখন্দ উপজেলা কৃষি অফিসার রতন চন্দ্র বর্মন জানান দশশিকা ঐ জমির যে অভিযোগ সেটা আমার যোগদানের আগেই হয়েছে আমি ঐ ঘটনা স্থলে যায়নি তবে সহকর্মীদের নিকট শুনেছি একজন সরকারি কর্মকর্তা জলাধারের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে ফলে জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে এতে কৃষক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঠিক তেমনি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আমরা চাই সকল কৃষি জমিতে চাষাবাদ হোক। যেহেতু এটি ভুমি সংক্রান্ত বিষয় তাই আমি দ্রুত এসিল্যান্ড এবং ইউএনও মহোদায়ের সাথে কথা বলে দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা করবো এবং কৃষি জমি আবাদযোগ্য করে দিবো।


কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীন সুলতানা জানান উপজেলার দশশিকা এবং কর্ণসুতি গ্রামের কৃষকরা জলাধারের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছিলো সে বিষয় আমরা সরজমিনে গিয়ে দেখেছি কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং রেজা তালুকদারে বাড়িতে কিছু সরকারি জমি মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়ে ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা তাকে ঐ জমি ছারার জন্য নোটিশ দিয়েছি লাল নিশানা লাগিয়ে দিয়েছি এবং পানি প্রবাহ যেন বন্ধ না হয়ে থাকে সেজন্য কৃষকের সুবিধায় তার বাড়ির নিচ দিয়ে পাইপ বসিয়ে দিয়ে এসেছি। কিন্ত তিনি পাইপের মুখ গুলো বন্ধ করে দিয়েছেন এবং জমি এখনো ছারেন নি। আমরা বার বার তাগিদ দেওয়ার পর তিনি আমাদের কথা শুনেন নি। আমি আবার তাকে নোটিশ করবো যদি এবার তিনি জমি না ছারেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০