ঢাকা   ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ বিএনপি সভানেত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিন

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৫, ২০২৪
  • 129 শেয়ার

আজাহার আলী সরকার
বিশ্ব শান্তির বিরল মুহূর্তে দিনাজপুরে যার জন্ম । নাম তাঁর খালেদা, ১৯৪৫ সালের ১৫ই আগস্ট। মজুমদার পরিবারের জন্য এক খুশীর দিন। ইস্কান্দর মজুমদার ও বেগম তৈয়বা মজুমদারের একটি কন্যা সন্তান সদ্য জন্মলাভ করেছে। সে তার মা-বাবার মতোই ধবধবে ফর্সা এবং সবল। ভূমিষ্ট হয়েই আপ্রাণ কাঁদছিল। নতুন শিশুর জন্য পেয়ালায় আগেই থেকেই রাখা ছিল মধু। বৃদ্ধা ধাত্রী শিশুর মুখে মধু তুলে দিতেই কান্না থেমে গেলো। এরপর শান্ত শিশু বড় বড় চোখে তাকাল এদিক-ওদিক। দেখল এক রহস্যময় পৃথিবী।
খালেদার যখন জন্ম হয়, তখন ছিল এক ভিন্ন পৃথিবী। বলা যায় নতুন এক পৃথিবী। পৃথিবী সবেমাত্র বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা থেকে মুক্ত হয়েছে। খালেদা খানম জন্মের মাত্র ৫দিন আগেই বিশ্বে ঘটে গেছে তোলপাড়। ৬ই আগষ্ট হিরোশিমায় এবং ৯ই আগষ্ট নাগাসাকিতে আণবিক বোমার বিষ্ফোরণ ঘটে। মারা যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ। সমগ্র এলাকা পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে। এরপরই ৫ বছর স্থায়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে।
পৃথিবীর চারদিকেই তখন শান্তির জয়গান। শান্তির বাণী নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় বের হচ্ছে শান্তি মিছিল। যুদ্ধ নয়, শান্তি- এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে উদ্যোগী হন নেতারা। এমন পরিবেশেই খালেদা খানমের জন্ম হয়।
খালেদার যখন জন্ম ,তখন শরতের স্নিগ্ধ ভোর। নতুন শিশুর আগমনে পরিবারের সবার মধ্যে এলা খুশীর বান। শিশুর বড়বোন খরশীদ জাহান আতুড় ঘরে গিয়ে দেখল সদ্যাজাত বোনকে। আনন্দে সে দিশেহারা। ছোট বোন বিউটি তখনও ঘুমিয়ে। খুরশীদ দৌড়ে গেলো তার কক্ষে। ঘুম থেকে ডেকে তুলে তাকে বলল, ‘দেখ এস বিউটি, আমাদের কি সুন্দর বোন হয়েছে!’ আকস্মিক খবরে ছোট্ট বিউটি হকচকিয়ে গেলো। ওর বয়স তখন আড়াই বছর। চোখ কচলাতে কচলাতে সেও গেলো আতুড় ঘরে। নতুন বোনকে দেখে মহাখুশী। আবেগে বলেই ফেলল-‘ওটা আমার পুতুল। আমি ওর সঙ্গে খেলব। মাটির পুতুল নিয়ে আর খেলব না।’
খুশীতে বাবা ইস্কান্দর মজুমদার দোকানে গেলেন মিষ্টি আনতে। পাশের বাড়ির বউ-ঝিরাও এলো মজুমদার বাড়িতে। এলো নতুন শিশুকে দেখতে। কাপড় জড়িয়ে শিশুকে দেখে কেউ বলল-রাজকন্যা, কেউ বলল পরীর মতো সুন্দর লাল টুকটুকে মেয়ে!তারা কামনা করল নতুন শিশুর দীর্ঘজীবন।
খুশীর খবর পেয়ে মজুমদার সাহেবের বন্ধু ডাক্তার অবনি গুহ নিয়োগিও এলেন ঐ বাড়িতে। তিনি মজুমদার সাহেবের শুধু বন্ধুই নন, এ বাড়ির নিয়মিত চিকিৎসকও। উঠোন থেকেই ডাকলেন মজুমদার সাহেবেকে। বললেন, ‘আগে মিষ্টি চাই। তোমার মেয়ে এমন সময় জন্ম নিয়েছে যখন সর্বত্র শান্তি। এই সৌভাগ্যবান মেয়ের নামটাই রেখে দাও ‘শান্তি’।’
মায়ের কোলে, বোনদের আদরে বড় হতে থাকলো খালেদা জিয়া। একদিন দু’দিন করে তার বয়স হলো সাতদিন। এবার নামা রাখার পালা। মহা উৎসাহে চললো আয়োজন। ভাল খাবারের আয়োজন করা হলো। আত্মীয় -স্বজনকে দাওয়াত করা হলো। এভাবেই সম্পন্ন হলো তার আকিকা।
সেদিন বাবা তার তৃতীয় কন্যার নাম রাখলেন খালেদা খানম। সন্তানের নাম সাধারণত তিনিই রেখে থাকেন। তবে বিপত্তি দেখা দিল ডাকনাম নিয়ে। কি নামে ডাকা হবে তাকে। শান্তি, টিপ্সি না পুতুল? শান্তি নামটি পছন্দ করেছে পারিবারিক চিকিৎসক ডাক্তার অবনি গুহ নিয়োগী। টিপসি নামটি দিয়েছিলেন বাবা ইস্কান্দর মজুমদার। আর পুতুল নামটি আগেই দিয়ে রেখেছে মেজো বোন বিউটি। অবশেষে বিউটিরই জয় হলো। তার পছন্দ করা পুতুল নাম রাখারই সিন্ধান্ত হলো। খালেদা জিয়ার ডাকনাম সেদিন থেকেই পুতুল।
খালেদা খানম পুতুল যখন জন্ম নিলেন,সেই মধুময় স্মৃতি নিয়ে খালেদার মা বেগম তৈয়বা মজুমদার বলেছিলেন, ‘আমাদের বাড়িটি ছিল গাছগাছালিতে ভরা। ভোরে ঘুঘু, বউ কথা কও প্রভূতি পাখির ভৈরবী আলাপে আমরা শয্যাত্যাগ করতাম। এক ধরনের পাখির ডাকে আমরা বুঝতাম এখন মাগরেবের আজানের সময় হয়েছে। রাতে কুরুয়া পাখির ডাকে বুঝতাম এখন মধ্যরাত। আবার রোজার দিনে মোরগের ডাকে আমরা সেহেরী খেতে উঠতাম। আমাদের বাড়িটি ছিল টিন চালার। কোন পুকুর ছিলনা। ছিল একটি গভীর কুয়া। লম্বা দড়িতে বালতি বেধে পানি তোলা হতো। সেই পানিতেই রান্নাবান্না, গোসল ও খাবারের কাজকর্ম চলত। কুয়ার পানি ছিল স্বচ্ছ ও ঠান্ডা। আমাদের বাড়ির এক পাশে ছিল একটি বাগান। আমরা এর নাম দিয়েছিলাম ‘কিচেন গার্ডেন’। গোলাপ, গাঁদা,বকুল প্রভূতি ফুল বাগানটি ছিল অপূর্ব। সেসময় সস্তায় নানা খাবার পাওয়া যেতো। ফলমূলের অভাব ছিলনা।
পুতুলের জন্মের আগে যুদ্ধের খুব বিভীষিকা ছিল। মানুষ শুধু যুদ্ধের গল্প করতো। পুতুলও জন্ম নিল, যুদ্ধও থেমে গেলো। আমাদের পারিবারিক ডাক্তার অবনি গুহ এবং প্রতিবেশীরা বলত পুতুল খুব সৌভাগ্যবান। আমার খুব আনন্দ লাগত। পুতুলের যেদিন জন্ম হলো, সেদিন থেকেই আমার মেজো মেয়ে বিউটি ওকে পুতুল নামে ডাকতে শুরু করলো। বিউটির মাটির একটি পুতুল ছিল। একদিন পুতুলটির হাত-পা ভেঙ্গে যায়। ফলে বিউটির বিউটি খুব কান্নাকাটি করেছে। এরপরই আমার ছোট মেয়ে জন্ম নেয়। বিউটি মাটির পুতুলের কথা ভুলে যায়। বিউটি তখন থেকেই পুতুলকে নিয়ে সারাক্ষণ খেলত পুতুল ছিল ওর সারাক্ষণ খেলার সাথী।’
খালেদার বাবা জনাব ইস্কান্দার মজুমদার আদি নিবাস ফেনী ।তার বাড়ি ফেনীর শ্রীপুর উপজেলার ফুলগাজী গ্রামে। ফুলগাজীর বিখ্যাত মজুমদার ফ্যামিলির সন্তান তিনি। ১৯০৫ সালের ২৫ই আগস্ট তার জন্ম।
খালেদার দাদা হাজী সালামত আলী ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ। তিনি ছিলেন দীর্ঘদেহী, গায়ের রং ফর্সা। এলাকার মানুষ তাকে দরবেশ হিসাবেই আখ্যায়িত করত। তিনি যেমন ছিলেন দানশীল, তেমনি আল্লাহওয়ালা। শেষ বয়সে সারাক্ষণ তিনি মসজিদে কাটাতেন। নামাজ, তাসবীহ এবং আল্লাহ-আল্লাহ জিকিরেই তিনি নিয়োজিত থাকতেন।
হাজী সালামত আলীর পাঁচ ছেলে দুই মেয়ে। ছেলেমেয়েদের মধ্যে সায়েরা খাতুন সবার বড়। এরপরই খালেদার বাবা ইস্কান্দর মজুমদার। তাদের ছোট হল: মোকাদ্দেস হোসেন মজুমদার, আওলাদ হোসেন মজুমদার, জামশেদ হোসেন মজুমদার, রওশন আরা বেগম ও দেলোয়ার হোসেন মজুমদার।
খালেদার মা বেগম তৈয়বা মজুমদার বুদা চন্দনবাড়ির মেয়ে। বর্তমানে এটি দিনাজপুর জেলায় পড়েছে। এ পরিবার বিখ্যাত ‘টি-ফ্যামিলি’ নামে পরিচিত। খালেদা জিয়া মীর জুমলার বংশধর।
খালেদা জিয়ার বাবা ইস্কান্দর মজুমদার ১৯৮৭ সালের ১৫ই নভেম্বরে ইন্তেকাল করেন। খালেদা জিয়ার নানা তোয়াবুর রহমান ছিলেন একজন সাব রেজিস্ট্রার। দেশ বিভাগের পর ইস্কান্দর মজুমদার দিনাজপুর মুদিপাড়ায় জায়গা কিনে বসবাস শুরু করলেও পরবর্তীতে তারা দিনাজপুর শহরেই বালুবাড়ী শহীদ মিনারের কাছে স্থায়ী হয়ে যান।
বালুবাডীর চারতলার বাড়িতে শুরু থেকেই তারা কেউ তেমন থাকতেন না। দু’টো কক্ষ নিজেদের ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছে। এ দুটো কক্ষ ছাড়া পুরো বাড়িই দুস্থ মহিলাদের প্রশিক্ষণের জন্য দেয়া হয়েছে। একশ’জন দুস্থ মহিলাকে এখানে সেলাই শেখা, বাঁশবেত দিয়ে নানা জিনিসপত্র তৈরী এবং অন্যান্য হাতের কাজ শেখানো হচ্ছে। বেগম তৈয়বা মজুমদার এটি পরিচালনা করতেন।
১/১১’র জরুরি অবস্থার সরকারের সময় কারন্তরীণ থাকা অবস্থায় আদরের মেয়ে খালেদা জিয়াকে দেখতে অসুস্থ শরীর নিয়ে ঢাকায় আসলেও ১/১১ সরকার তাঁকে মেয়ের সাথে দেখা করতে দেয় নাই। মনোকষ্ট নিয়ে তাঁকে ফিরে যেতে হয়েছে দিনাজপুরে। দিনাজপুর শহরে জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০০৮ সালের ১৮ জানুয়ারি তাঁর মা তৈয়বা মজুমদার ইন্তেকাল করেন। এ সময় খালেদা জিয়াসহ তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান পিনো ও আরাফাত রহমান কোকো সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারাগারে বন্দি ছিলেন।
তৈয়বা মজুমদার লাশ হয়েও ঢাকায় দেখতে এসেছিলেন আদরের কন্যা তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দী খালেদা জিয়া এবং অত্যন্ত স্নেহভাজন ও আদরের নাতি তারেক রহমান পিনো ও আরাফাত রহমান কোকোকে। তখন কথিত প্যারোলে কিছুক্ষনের জন্য মুক্তি পেয়ে লাশ দেখেন খালেদা জিয়া, তারেক রহমান পিনো ও আরাফাত রহমান কোকো।
এই হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী ঘটনার কয়েক দফা বর্ননা নিজেই আমি করেছি পুতুল আপার সম্মুখে। তৈয়বা মজুমদারকে অনেকেই নানী বলেও তিনি ছিলেন আমাদের বড় মা ।
জীবিত অবস্থায় তাঁকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, তাঁর লাশ কাঁদে নেয়া এবং দাফনে সহায়তা করাসহ ঢাকা থেকে দিনাজপুরে লাশ অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়ার সময় আমিও ছিলাম ।ঢাকা থেকে দিনাজপুরে লাশ অ্যাম্বুলেন্স নেয়ার সময় মরহুমার দুই ছেলে ও তাদের বউ এবং তাদের সন্তানসহ মেজো মেয়ে বিউটির ছেলে প্রকৌশলী তুহিনও ছিলেন । আর অ্যাম্বুলেন্সে ড্রাইভারের সিটের পাশে বসে মিলন নামে একজন সাবেক ছাএ নেতাও দিনাজপুরে গিয়েছিলেন ।
বড় মা তৈয়বা মজুমদার জানিয়েছিলেন, তার তিন কন্যা
এবং দুই ছেলের সব নাতি- নাতনির জন্ম দিনাজপুরেই । নাতি তারেক রহমান পিনো এবং সাইফুল ইসলাম ডিউকে তিনি তুলনামূলক বেশী আদর স্নেহ ও পছন্দ করতেন। ঠিক তেমনি এই দুজনেই তুলনামূলক তাকেও ( নানীকে ) একটু বেশী পছন্দ করতেন । এদের দুজনের কাছেও নানীর আবদারও ছিল একটু বেশী । নানীর হাতের রান্না করা ডাল ডিম ভাজি ও ভাত খেতে খুবেই পছন্দ করতেন তারেক রহমান পিনো। তাই যখনেই পিনো বগুড়ায় যেতেন, তখনেই অল্প সময়ের জন্য হলেও ছুটে যেতেন নানীকে দেখতে দিনাজপুরে। সেটা বেশীর হয়েছে রাতের বেলায়। এমনো হয়েছে, দিনাজপুরে এসে একনজর নানীকে দেখে ১৫/২০ মিনিটের মধ্যেই আবার ফিরে গেছেন বগুডা বা ঢাকার উদ্দেশ্যে। তবে নানীকে দেখতে যাবার আগেই সব সময় খবর দিতেন ভাত ডাল ডিম ভাজি তৈরি রাখতে । প্রায় সময় নিজের হাতে না খেয়ে নানীর হাতে খেতেই বেশী পছন্দ করতেন পিনো।
ফেনীর ফুলগাজী গ্রামে হাজী সালামত আলীর বংশধরদের আদি বাড়িটিও খুব সুন্দর। বাড়ির সামনে বিশাল দীঘি। দীঘির পাড়ে গম্বুজ ওয়ালা মসজিদ ও টিনের বাংলো। ভেতরে প্রশস্ত উঠোনওয়ালা বাড়ি। বাড়িতে তিনটি ঘর। একটি চাচা জামশেদ হোসেন মজুমদারের, অপরটিতে তার ছেলে-মেয়েদের। একটি টিনের ঘর খালি পড়ে আছে। এটাই খালেদা জিয়ার পিতৃভিটা।
১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে দিনাজপুরে কর্মরত সেনাবাহিনীর তৎকালীন তরুণ ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সাথে খালেদা খানম ওরফে পুতুলের বিয়ে হয়। তারা দুরসম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন। আত্মীয়তার সূত্রে বিয়ের প্রস্তাব, অত:পর বিয়ে।
পরবর্তীতে ঢাকার তৎকালীন শাহবাগ হোটেলে (বর্তমানে পিজি হাসপাতাল) তাদের বিবাহত্তোর সম্বর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
যুদ্ধের সঙ্গে খালেদা জিয়ার যেনো কোথায় একটা যোগসূত্র রয়েছে।১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও শেষ হলো, খালেদা জিয়াও জন্ম নিলেন। ঠিক তেমনি ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারী খালেদা জিয়াও নির্বাচনে বিজয়ী হলেন একই দিনে ভয়াবহ উপসাগরীয় যুদ্ধও থেমে গেলো। শুধু তাই নয়। ১৯৬৫ সালে তার স্বামী জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ভারত যুদ্ধে অংশ নিয়ে কৃতিত্ব দেখান। তখন তার বিয়ের মাত্র পাঁচ বছর।।
১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ চট্টগ্রামে তার স্বামী মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন এবং নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হয়। এ সময় খালেদা জিয়াও বন্দী হন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে। সবচেয়ে বড় যুদ্ধ তিনি করেছেন নিজে। ১৯৮১ সালে ৩০ মে তাঁর স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রামে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে খালেদা জিয়ার ওপর। দলের অগণিত নেতা-কর্মীদের আহ্বান সত্ত্বেও তিনি স্বামী হত্যা কান্ডের পর রাজনীতিতে অনগ্রহ দেখান। প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন তিনি।
এরপর তিনি যখন দেখলেন তাঁর স্বামীর রেখে যাওয়া বাংলাদেশের বৃহৎ দল বিএনপিকে এবং একই সাথে তাঁর স্বামীর প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে, তিনি তখন বসে থাকতে পারেন নাই। নেতা-কর্মীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদ গ্রহণ করেন। এরপর তাঁকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত করা হয়।
এরমধ্যে ১৯৮২’র ২৪ শে মার্চ বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে তৎকালীন সেনা প্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বন্দুকের নলের মুখে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। বেগম খালেদা জিয়া সেদিন এই অবৈধ ক্ষমতা দখল মেনে নিতে পারেন নাই।
১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ বছরের আপোষহীন সংগ্রামে তিনি রাজপথে থেকে আপষহীনভাবে আন্দোলন করেছেন। উপাধী পান দেশনেত্রীর। স্বৈরাচারী এরশাদকে পতনে বাধ্য করেন। এরপরেই আসে তাঁর বিজয়। তিনি হন বাংলাদেশের শাসনকর্তা, দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী।এরপর আরো দুবারসহ তিনবার প্রধানমন্ত্রী হবার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন তিনি।দুই বার জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
১৯৯১ সাল থেকে যে কয়টি সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, সেখানে কোনো একটিতে পরাজয়ের রেকর্ড নেই তাঁর। তিনি জনগণের আস্থা ভালোবাসায় সিক্ত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার দুই সন্তান। তাঁর বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ১/১১ পর কারান্তরীণ থাকা অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ২০১৫ সালে ২৪ জানুয়ারী মালয়েশিয়ায় চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন আরাফাত রহমান কোকো। তাঁর স্ত্রী-দুই কন্যাসহ সন্তান বর্তমানে লন্ডনে আছেন।
অন্যদিকে ১৯২১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন খালেদা জিয়ার মা তৈয়বা মজুমদার। খালেদা জিয়ারা তিন বোন এবং দুই ভাই। তিন বোনেই বড় ও দুই ভাই ছোট । সবার বড় বোন ছিলেন চারদলীয় জোট সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী খুরশিদ জাহান হক । তিনি ২০০৬ সালের জুন মাসে ইন্তেকাল করেন।
মেজো বোন সেলিমা ইসলাম বিউটী ঢাকায় বসবাস করছেন। বোনদের মধ্যে ছোট হলেন খালেদা জিয়া । দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় জন হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) সাইদ এস্কান্দার ( সাবেক এমপি) ও ছোট ভাই প্রকৌশলী শামীম এস্কান্দার একজন ব্যবসায়ী। ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সাঈদ এস্কান্দারও ইন্তেকাল করেন।

খালেদা জিয়ার ৭৯ জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করবে বিএনপি কাল ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৭৯ তম জন্মদিন উপলক্ষে তার সুস্বাস্থ্য কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করবে বিএনপি।
কাল বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এই মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০