হাওর অঞ্চল থেকে আলি জামশেদ
কিশোরগঞ্জের একাধিক হাওর এলাকায় ঘটছে তুলনামূলক অধিকহারে চুরি ডাকাতির ঘটনা। বিক্ষিপ্ত স্থানের দোকানে, হাট-বাজারে, রাস্তা-ঘাটে, ঘর-বাড়িতে এমনকি মসজিদেও চুরির ঘটনার খবর মিলছে। বাড়ছে অটোরিক্সাসহ হাওরের বুক থেকে সেচ মটার মেশিন উধাও হওয়ার ঘটনাও।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে নিকলীতে শীত মৌসুমে অধিক পরিমাণে চুরির ঘটনা ঘটে চলেছে। বিক্ষিপ্ত স্থানের চুরির ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকেরা। শান্তিপ্রিয় সাধারণ জনগণের দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা জোরদার করা খুবই প্রয়োজন। অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে নৌ পথে ঘোড়াউত্রা নদীর বুকে ছাতিরচর এলাকা সংলগ্ন অংশে নৌ সেবাদানের লক্ষ্যে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়েও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসংখ্য লোকের ভাষ্য ২০ টাকা আদায়ের নামে চলছে অতিরিক্ত আদায়। নানান সমস্যার কথা ভেবে অভিযোগ দিতেও নারাজ দূর দূরান্তের নদীর বুক দিয়ে চলাচলকারী নৌ মালিক ও মাঝিরা। তবে প্রশাসনের ভাষ্য চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিকলীর জারইতলা ধারীশ্বর কামালপুরের রোকন মিয়া জানান, ৭ জানুয়ারিতে ঢাকা শেওয়া বাসায় চলে যাওয়ার সুযোগে রাতে মেইন গেটের তালাসহ মোট ৩টি তালা ভেঙ্গে একাধিক সুকেজ থেকে ৭০ হাজার টাকা মুল্যের জিনিসপত্র নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। হয়রানির আশঙ্কা থেকে আইনের দ্বারস্থ হননি বলেও তিনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন।

জারইতলা ইউনিয়নের একাধিক বারের ৪নং ইউপি সদস্য আবু বাক্কার, সাবেক ইউপি সদস্য দীন ইসলাম, ৫নং ওয়ার্ডের চান মিয়া, ৬নং ওয়ার্ডের গিয়াস উদ্দিনসহ বেশ কিছু জনপ্রতিনিধিরা অতিরিক্ত চুরি ঘটনা তুলে ধরেন।
নিকলীর সদরের অটোরিকশা চুরির ঘটনায় জারইতলা ৫নং ইউপি সদস্যের ছেলে খাইয়্যুম ও গরু চোর খ্যাত বাদশাহসহ চারজনের নামে নিকলী থানা ও সেনা ক্যাম্পে রয়েছে চলতি মাসের মাঝামাঝিতে অভিযোগ। কয়েক দফায় সালিশ দরবার হয়েছে বলেও জানান আবু বক্করসহ একাধিক ইউপি সদস্য। আবু বাক্কারের ভাষ্যমতে ২৯ জানুয়ারি দিবাগত রাতেও ঘটেছে সুন্নাত আলীর ঘরে সিধকেটে চুরির ঘটনা, গত সপ্তাহে দক্ষিণ হাঁটির খোকনের দোকান ঘরে চুরি, মেওড়া হাওর থেকে ইস্রাফিলের সেচ মেশিন চুরির ঘটনাসহ চলতি মাসের অসংখ্য চুরির ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন।
এছাড়াও ২৯ জানুয়ারি দিবাগত রাতে বনমালীপুর নয়া হাঁটির নুর মিয়ার সেচ মেশিনসহ একই ইউনিয়নের আঠার বাড়িয়ার আলী হোসেনের পানির মটর, ১৪ জানুয়ারিতে আঠার বাড়িয়া হাওর থেকে তানজিলের সেচ প্রকল্পের মটরও অসংখ্য মটর নিয়ে যায়। এক মাসের ব্যবধানে অত্র ইউনিয়নের রসুলপুর ও বনমালীপুর থেকে একাধিক সেচ মটার এবং অটোরিকশাসহ মসজিদের জেনারেটর ও ব্যাটারি চুরির ঘটনা ঘটে চলেছে অত্র ইউনিয়নের বিক্ষিপ্ত স্থানে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অসংখ্যা জনগণের ভাষ্যমতে, এটা শুধু জারইতলা ইউনিয়ন চলতি মাসের সংক্ষিপ্ত একটি খন্ড চিত্র। এমন অসংখ্য ঘটনা অহরহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘটে চলেছে।
শুধু নিকলী উপজেলাণেই নয় বরং পাশ্ববর্তী উপজেলাতেও একই চিত্র প্রায়। বাজিতপুরে চুরির পাশাপাশি ডাকাতির ঘটনা ঘটে চলেছে একাধিক সময়ে, বিক্ষিপ্ত স্থানে।
জানা গেছে সরারচর ইউনিয়নের বুড়িকান্দা এলাকাসহ সরারচর টু হিলোচিয়া মূল রাস্তায় ২৮ জানুয়ারি ভোর রাতে ঘটেছে একটি ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা। এ ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন রাস্তাটি দিয়ে চলাচলকারী চালক ও যাত্রীরা। জানা গেছে গত ২৮ জানুয়ারি রাত ১২টা ৩০ মিনিটে ঢাকা কামরাঙ্গীরচর থেকে কাওরান বাজার হয়ে, রামপুরা, ডেমরা, হাতিরঝিলের উপর দিয়ে হায়েছ গাড়িটি অন্যান্য সময়ের মতো ১৪ জন যাত্রী নিয়ে গন্তব্যস্থল হিলোচিয়া বাজারে পৌঁছার আগেই বুড়িকান্দা এলাকায় দস্যুদের কবলে পড়ে। চালক ও যাত্রীরা জানান, বুড়িকান্দা এলাকার ফাঁকা জায়গায় মূল রাস্তার উপরে কলাগাছ ও অটোরিকশা দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে মাইক্রোটি থামাতে বাধ্য করে। এ সময়ে প্রথমে আটজন ডাকাত এসে একেক করে যাত্রীদের নামিয়ে অস্ত্রের মুখে তল্লাশি করে। এ সময়ে ডাকাতরা গাড়িতে উঠে সকলের ব্যাগও তল্লাশি করে। অতিরিক্ত আরও ডাকুদের অটোরিকশায় দেখতে পান। এ সময়ে মোবাইল, টাকা ও স্বর্ণালংকার দিতে আপত্তি জানালে মারধর করে। চালক নজরুলকে দাড়ালো দায়ের বিপরীত অংশ দিয়ে আঘাত করে। নজরুলের ১২ হাজার টাকা মূল্যের বিভো এন্ড্রয়েড মোবাইলটি কেড়ে নেয়। এছাড়াও ডালিম নামের এক নারীর কানের দূল ও তার পুত্র বধুর স্বর্ণের চেইন কেড়ে নেয়। এ সময়ে ডালিম আপত্তি জানালে থাপ্পড় মারে বলেও জানান চালক নজরুল। নজরুলের ভাষ্যমতে, নগদ আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকাসহ অতিরিক্ত দেড় লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকারও এ সময়ে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। তবে এখন পর্যন্ত ডাকাতদের বিরুদ্ধে মামলা করার কেউ সাহস দেখায়নি বলে জানা গেছে।
২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরও ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে হিলোচিয়ার বাশ মহলে ডাকাতের কবলে পড়ে চালক নজরুল। এ নিয়ে বাজিতপুর থানায় নজরুল একটি ডাকাতি মামলা করেছেন বলে উল্লেখ করেন।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক অসংখ্য ভুক্তভোগীর সাথে কথা হলে ন্যায় বিচার বহির্ভূত আর উল্টো হয়রানির ভয়ে মামলা মোকাদ্দমার দিকে এগুতে চাননি এমনি তথ্য মিলে সরেজমিনে।
নিকলী থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই রিয়াদ উদ্দিনের কাছে ৩০ জানুয়ারী বিকালে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হয় ‘চলতি মাসে নিকলীর কোথাও চুরির কোন অভিযোগ থানায় এসেছে কি না? জবাবে কোন অভিযোগ না থাকার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন।

নিকলী থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী উদ্দিন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, চুরি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির বিষয়ে বিষয়ে পুলিশ সদা তৎপর রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। নৌপথে সেবাদানের লক্ষ্যে জেলা থেকে ২০ টাকার অনুমতি আনা হয়েছে এমনটি উল্লেখ করেন। তবে কেউ যদি চাঁদাবাজি করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে মামলা নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন।
বাজিতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মুরাদ হোসেন বলেন, সরারচর ডাকাতির ঘটনার কোন অভিযোগ তার কাছে পৌঁছেনি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানান।