বিশেষ প্রতিনিধি
ধানমন্ডি ৩২-এ ফুলেল শ্রদ্ধা, বঙ্গবন্ধু কর্ণার নির্মাণে ভূমিকা রাখা , মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নিকট থেকে আওয়ামী ব্যাংকার হিসেবে সম্মাননা গ্রহণ, গ্রামের বাড়িতে কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদ নির্মাণ, গ্রামে দাতা হাতেমতাই সেজে অর্থ বিলানোসহ নিজেকে উচ্চবংশীয় আওয়ামী লীগ নেতা সেজে কাউকে গুরুত্ব না দেয়া, দুই ছেলেমেয়েকে কানাডায় লেখাপড়া করানো- তেজি আওয়ামী ব্যাংকার থেকে কঠিন বিএনপি ব্যাংকার সেজেছেন অগ্রণী ব্যাংকের জিএম শামীম রেজা। অগ্রণী ব্যাংকের মূলভবনের চতুর্থ তলায় তিনি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
সময়ের সাথে সাথে চোখের পলকে নিজের রং বদলে পরিবেশের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে এমন প্রাণীর নাম গিরগিটি। মূলত শিকারি থেকে বাঁচতে তারা নিজের শরীরের এমন বিবর্তন ঘটায়। বিপদের আঁচ পেলেই মুহূর্তের মধ্যেই সবুজ, হলুদ, নীল রঙে নিজেকে পাল্টে ফেলে এরা। এই প্রাণী টিও যেন হার মানেঅগ্রণী ব্যাংকের জিএম শামীম রেজার কাছে।
বিগত ১৬ বছরে অগ্রণী ব্যাংকের সবচেয়ে বড় আওয়ামীপন্থী শামীম রেজা এখন বিএনপিপন্থি ব্যাংকার । নিজকক্ষে বসেই এখন হাসিনার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধারে ব্যস্ত তিনি। নিয়মিত তারেক রহমানের জয়গান গেয়ে নিজেকে বিএনপি প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অনেকটা গাঙ শালীকের মত ভাব তার।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাতারাতি বিএনপি হয়ে যাওয়া এই শামীম রেজা এখন নিজেকে আরো বেশি পাওয়ারফুল ভাবছেন। আওয়ামী লীগ আমলে ব্যাংকিং খাতে সুবিধাভোগীদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তি কিভাবে এখনো গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে আছেন এটাই অনেক অফিসারের মন্তব্য। ব্যাংকপাড়ায় অর্থ লুটপাটের পাশাপাশি বদমেজাজি ও নারীলোভী হিসেবে দুর্নামও রয়েছে তার।
গত ১৬ বছরে একের পর এক প্রমোশন হাতিয়ে প্রিন্সিপাল অফিসার থেকে হয়েছেন জিএম। ব্যাংকের একটি সূত্র জানায় তিনি নিজেকে এখন বিএনপির পরিচয় দিয়ে আবারও সাম্রাজ্য গড়ার অপচেষ্টা করছেন।
ঘুষ, দুর্নীতি, অধীনস্থ নারী আমি সহকর্মীর সাথে যৌন কেলেঙ্কারি- শামীম রেজার নানা অপকর্মের ঝুলিতে সব অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগের পরও কিভাবে যেন সবই ম্যানেজ করে ফেলেন তিনি। এখন বিএনপি দলীয় পরিচয়ে ডিএমডি হবার দৌড় শুরু করেছেন।
বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের পক্ষে দলবাজি আর গলাবাজির নানা প্রমাণপত্র আর ভিডিও দেখলে তার প্রমান মেলে।
প্রমোশন বাগিয়ে নিতে একসময় বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে কটাক্ষ ও স্বাধীনতার শত্রু আখ্যায়িত করে বক্তব্য দিলেও বর্তমানে ডিএমডি পদে আসীন হতে তিনি বিএনপির পরিচয় ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক সিইও এবং এমডি মোরশেদুল কবিরের সিনেট নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন শামীম রেজা । এসময়ে অগ্রণী ব্যাংকের সব শাখা থেকে কোটি কোটি টাকার চাঁদা তুলে আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া বঙ্গমাতা পরিষদ নামে একটা কমিটি করে প্রমোশন, পোস্টিং নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অবৈধ পথে কানাডায় অর্থপাচার আর সেই টাকায় তার দুই সন্তানকে সেখানকার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাচ্ছেন বলেও কানাডার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে । সম্প্রতি তার কানাডা সফরের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার করেছেন বলেও কানাঘুষা চলছে অগ্রণী ব্যাংকে। একজন জিএম কত টাকা অবৈধ পথে উপার্জন করলে তার দুই ছেলে-মেয়ে কানাডায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে- এমন প্রশ্ন তুলছেন শামীম রেজার সহকর্মীরা।
এছাড়াও পাচারকৃত এসব অর্থ দিয়ে তিনি কানাডার বেগম পাড়ায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। শামীম নিজের কালো টাকা সাদা করতে জামালপুরের সরিষাবাড়ি হরখালী গ্রামে তাকওয়া মসজিদ কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছেন। যার নেপথ্যে রয়েছে কালো টাকা সাদা করা।
শামীম রেজার বিরুদ্ধে ঢাকা সার্কেল-১ এর জিএম থাকাকালীন দুই জুনিয়র কর্মকর্তাকে বিভিন্নভাবে নিপীড়ন, যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলে তাকে তাৎক্ষণিক বদলী করা হয়। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব অভিযোগ ধামাচাপা দেন তিনি।
যৌন হয়রানি বিষয়ে ভুক্তভোগী এক নারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি শেষ হয়ে গেছে। তিনি অনুরোধ করে বলেন, এ নিয়ে লেখালেখি হলে আমার ক্ষতি হবে, অসুবিধায় পড়তে হবে। কারণ তিনি এখন বিএনপি পন্থী ব্যাংকার নেতা।
এদিকে ময়মনসিংহ সার্কেলের জিএম থাকাকালীন অনেক ভুয়া ঋণ অনুমোদন করেছেন যা এখন খেলাপী হয়ে পড়েছে। অগ্রণী ব্যাংকে পল্টিবাজ শামীম রেজার দৌরাত্ম্যের শেষ দেখতে চান ভুক্তভোগীরা। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম সার্কেলেরও দায়িত্বে। এই সার্কেলের বিভিন্ন শাখা থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেন বলে অভিযোগ আছে। আবার রিকভারি বিভাগের জিএম তিনি। এই সুযোগে বিভিন্ন বড় বড় পার্টির কাছ থেকে ঋণ আদায় না করে তাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা আদায় করেন। দ্রুত এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহিত দিয়ে
সঠিক তদন্ত পূর্বক উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে ব্যাংকের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে বলে মনে করেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।
উল্লিখিত প্রশ্নের জবাব পেতে শামীম রেজা এবং তার স্ত্রী রূপালী ব্যাংকের ডিজিএম আফরোজা রেজাকে বারবার ফোন করলেও তারা রিসিভ করেননি।
বিষয়টি অর্থ উপদেষ্টা ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নজর দেওয়া হল।
শামীম রেজার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় তার স্ত্রীর কাছেও। তিনি জানান, অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাদের সন্তান তার মামায় বাসায় থেকে চাকরি করে পড়াশোনা খরচ চালায়।