ঢাকা   ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
দৈনিক বিজনেস ফাইল ই-পেপার (বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪) আদানির সঙ্গে চুক্তি পুনর্মূল্যায়নে কমিটি গঠনের নির্দেশ সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ৮ দিনের রিমান্ডে টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষ, নিহত ৪ আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ তুললেন ভারতীয় সাংবাদিক, জবাবে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাসে সড়ক ছাড়লেন সাদপন্থীরা আর্থিক খাতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা চুনারুঘাটে ফাঁকা গুলি ছুড়ে জনতার হাতে পিস্তলসহ আটক নীলফামারী-৩ আসনের সাবেক এমপি মেজর রানা হাসিনা রেজিমের ‘ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট’ এখনো বহাল: পর্দার আড়ালে বাণিজ্য সচিব! দৈনিক বিজনেস ফাইল ই-পেপার (মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪)

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে গুরুত্বহীন বললেন যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশিত : রবিবার, জানুয়ারি ১৪, ২০২৪
  • 531 শেয়ার

যশোর প্রতিনিধি
বনের বাঘ আর মনের বাঘ এক নয়। মনের বাঘে ধরেছে যশোরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশীদের। তিনি দুর্নীতির মোহে এতোটাই আবিষ্ট যে, খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকেই বললেন গুরুত্বহীন প্রতিষ্ঠান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনের মাত্র দুদিন আগে তরিঘড়ি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুসরণ না করে এবং পরিকল্পনা কমিশনের সিপিটিইউ-এর কোনো গুরুত্ব না দিয়ে নিজেই ই-টেন্ডার সম্পন্ন করে এ অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। যে ঘটনা পুরো যশোর জেলাতেই টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ) ডা. ফরিদা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত গত ৯ নভেম্বর ২০২৩ স্মারক নং-তত্ত্বাবধায়ক ২৫০ শঃ বিঃ জেঃ হাসঃ যশোর/২০২৩-২০২৪ এর গুরুত্ব না দিয়েই বর্তমান তত্ত¡াবধায়ক ডা. হারুন উৎকোচ গ্রহণ করে নজিরবিহীন দুর্নীতি করেছেন বলে জানা যায়, তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ পেয়ে এ কাজটি করেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাকে কোনো বাধা দিতে পারে না। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কথা আমি শুনবোই বা কেন? এ প্রতিষ্ঠান গুরুত্বহীন। এ প্রতিষ্ঠান আমার কিছুই করতে পারবে না।
জানা যায়, মেসার্স নিউ আহমেদ ফার্মেসি নামের একটি প্রতিষ্ঠান সবকিছুতেই যোগ্যতার পরিচয় দিলেই কেবলমাত্র উৎকোচ নিয়েই এমএসআর সামগ্রী ক্রয়ের দরপত্রটি অন্যদের দেয়ার চেষ্টারত ডা. হারুন। ডা. হারুনের বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপমান-অপদস্ত করাসহ হাসপাতালের বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী বিক্রি করার অভিযোগও রয়েছে। ডা. হারুনকে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্তা না নিলে সরকারের ভাবমূর্তি হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে এলাকাবাসী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। একই সাথে উল্লেখিত দরপত্রটি বাতিল করে নতুন দরপত্র আহ্বান করার অনুরোধ জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা লুটপাটের অভিযোগে সাবেক তত্ত্বাবধায়কসহ ৭ কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি টিম গত রোববার এ তদন্ত শুরু করেছেন। তদন্ত টিমের সভাপতি খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের উপপরিচালক ডা. ফেরদৌসি আক্তার। একই দপ্তরের সহকারী সদস্য পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. অর্পনা বিশ্বাস ও যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস। অভিযুক্তরা হলেন হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আক্তারুজ্জামান, প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ ডা. মো. হাসান আব্দুল্লাহ, মেডিকেল ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. গোলাম মোস্তফা, স্টোর কিপার মো. সাইফুল ইসলাম, সাবেক হিসাব রক্ষক মো. মনিরুজ্জামান, সাবেক ক্যাশিয়ার বর্তমানে হিসাব রক্ষক ইস্রাফিল হোসেন ও ওয়ার্ড জমাদ্দার মো. ইমরান হোসেন। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন অনেক লোক চিকিৎসা নিতে আসেন। এতে রোগীর প্রচন্ড ভিড় হয়। এ ভিড়ের মধ্যে সুযোগ সন্ধানি কিছু ত কর্মকর্তা-কর্মচারী হাসপাতালটি ব্যবহার করে বিভিন্ন উপায়ে যে যার মতো শোষণ করছেন এবং অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অবৈধ উপায়ে লাখ লাখ টাকার অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করছেন।
খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের বর্তমান সহকারী পরিচালক এ হাসপাতালে ২০২১ সালের ১ জুন তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন অবৈধ অর্থনৈতিক বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েন। বহির্বিভাগের রোগীদের ৫ টাকার টিকিট ১০ টাকায় বিক্রি করে সেখান থেকে অর্জিত অর্থ, বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের উন্নয়নের জন্যে বরাদ্দকৃত সরকারি বা অনুদানের অর্থ কিছুটা হাসপাতালের নামে ব্যয় করেন এবং বাকি অর্থ তার সহযোগীদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। প্যাথলজি পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটিস্ক্যান, এক্সরে-ইসিজি ইত্যাদি খাত থেকে অর্জিত অর্থের একটি অংশ তার পকেটে যায়। সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টারে এক্সরে, প্রতিদিন ৬০টির বেশি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা যাবে না বলে নিয়ম করেছেন। ৮ জনের অতিরিক্ত রোগী রুমের ভেতরে নিয়ে টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা- নিরীক্ষা করানো, হাসপাতালের ১৭টি বিভাগ থেকে টাকা, প্রতি সপ্তাহে ওটি ইনচার্জের মাধ্যমে হিসেব করা ও স্টোরকিপার সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে কালেকশন করা, সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টারে প্রতিদিন ৭০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় হলেও টাকার অংক কম দেখানো, জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তির টাকার গরমিল, করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালে ৭০ লাখ টাকার প্রণোদনা এলেও সেই টাকা বন্টন সাবেক তত্ত্বাবধায়কসহ না করে তত্ত্বাবধায়ক তার সহযোগীদের মধ্যে জ্যৈষ্ঠতার ভিত্তিতে ভাগ করে নেন। এভাবে দিনের পর দিন অবৈধ টাকা আয় করেছেন তত্ত্বাবধায়ক। এসব অভিযোগ ছাড়াও প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ ডা. মো. হাসান আব্দুল্লাহ, ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে, করোনাকালীন সময়ে স্বেচ্ছাসেবক রায়হানের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা হিসাবের গরমিলের অভিযোগ আনা হয়েছে।
স্টোরকিপার সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২১ সালে বিভিন্ন সামগ্রী কেনা বাবদ ১০ কোটি টাকার টেন্ডার হলেও মাত্র কয়েক লাখ টাকার ওষুধ ক্রয় করেন। ফলে গরিব রোগীরা ওষুধ না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। এছাড়া একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির-অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হিসাবরক্ষক মো. মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। ২০২২ সালের ১৫ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা থেকে আসা টিম অডিট করে। টিমের সামনে তিনি বৈধ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। টিম ১৭ লাখ টাকার অডিট আপত্তি দিয়ে যায়। এ ঘটনায় স্টোরকিপার সাইফুলও জড়িত। মনিরুজ্জামান চাকরি করাকালীন ৫ তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। পরে অবসরে গেছেন। ক্যাশিয়ার মো. ইস্রাফিলের বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগ। হাজার হাজার টাকার গরমিল রয়েছে তার হিসাবে। ওয়ার্ড জমাদ্দার ইমরান হোসেন তত্ত্বাবধায়ক ও আরএমওর সাথে যোগসাজসে অবৈধভাবে নগদ টাকার বিনিময়ে ৫৪ জন স্বেচ্ছাসেবক দেন এবং এক একজনের কাছ থেকে ৩০ হাজার ও ৪০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন। টাকার বিনিময়ে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশের সুযোগ দান ও ট্যুরের নামে লাখ লাখ টাকা আদায় করেন। ১৩ পাতার এ অভিযোগ গত জানুয়ারি মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) যশোরের সিভিল সার্জন, হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ খুলনা বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মনজুরুল মরশিদ গত ১৬ নভেম্বর ওই তদন্ত টিন গঠন করেন। অভিযোগটি ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তপূর্বক রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। এ তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে প্রায় ৪০ জন লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য দেন।
এ ব্যাপারে টিমের সদস্য সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৩০ থেকে ৪০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন মন্তব্য করা যাবে না। প্রধান অভিযুক্ত সাবেক তত্ত¡াবধায়ক ডা. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, আমি ডা. করেছি এতে বাধা দেয়ার এখতিয়ার নেই, এমনটি খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরও। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হলো।

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০