নিজস্ব প্রতিবেদক
এ গল্পটি সিনেমাকেও যেন হার মানায়। ঢাকার মিরপুরের সংসদ সদস্য ছিলেন কামাল আহমেদ মজুমদার। গত ২০১৮-২০২৩ মেয়াদে ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও ছিলেন। ৫ বার সংসদ সদস্য হবার সুযোগে দখল, চাঁদাবাজি, মানুষকে হয়রানি করা ছিল নেশা। ক্ষমতার দাম্ভিকতা আর অহংকারে তিনি অনেক মানুষকে করেছেন পথের ফকির। কেবলমাত্র লোভের নেশায় তার নিজের সার্কেলের অনেক মানুষকেও তিনি করেছেন নিঃস্ব।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে দৈনিক বিজনেস ফাইল প্রতিবেদক এসব তথ্য পেয়েছে। এদেরই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আলী খান। যার মুক্তিযোদ্ধা নং-০১২৬০০০৪১২৬। তিনি ছিলেন ঢাকা ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য। ১৯৭১ সালে ১ অক্টোবর পাকিস্তানিদের হাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরঞ্জামাদি নিয়ে ধরা পড়েন। ৩ মাস ধরে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। অনেক সহযোদ্ধারা প্রাণ হারালেও তিনি কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যান। আর্থিক অভাবের তাড়নায় ১৯৮৫ সালে কুয়েত যান। কুয়েত ইরাক দখল করে নেওয়ার পরে তিনি জাতিসংঘের মানবিক সহায়তায় কুয়েত ফেরতদের কিছু নগদ অর্থ দেয়া হয়। সেখানকার অর্থ আর কিছু ধার দেনা করা অর্থ মিলে ১৯৯২ সালে ঢাকার মিরপুরে ৯৫ নং সেনপাড়া পর্বতায় ইয়ানতাই চাইনিজ এন্ড থাই রেস্টুরেন্ট লিঃ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেন।
পরবর্তীতে ২০০৫ সালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিক নিয়ন্ত্রিত (ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স মিরপুর-১১ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত রেস্টুরেন্ট টি পরিচালনার জন্য একটি ঋণ নেন। যার পরিমাণ ছিল ২, ২০, ০০, ০০০/- জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন অনুযায়ী বিসিক ইলেট্রনিক্স কমপ্লেক্স মিরপুর ১১নং বাসস্টান্ড এ ১০ বছরের চুক্তিতে ১০৪২৯ বর্গফুট ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। যথারীতি ব্যবসা ভালোই চলছিল। চুক্তিপত্রের শর্তানুযায়ী প্রতি ৫ বছর পর পর ১০% হারে ভাড়া বৃদ্ধি প্রক্রিয়াও চলমান ছিল।
বিপত্তি বাধে ২০২০ সালে করোনা কালীন সময় হঠাৎ করে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের নির্দেশে বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হোসেন (এনডিসি) এক তরফাভাবে ১০% বৃদ্ধির পরিবর্তে ২৪০% ভাড়া বৃদ্ধি করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আলী খান বিজনেস ফাইল কে বলেন, আমি এত পরিমাণ টাকা বৃদ্ধির ব্যাখ্যা চাইলে বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হোসেন আমার সাথে ভীষণ ভাবে অশোভন আচরণ করেন। মোশতাকের পাশাপাশি বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক মানসুরুল করিম (ওরফে গুন্ডা মনসুর অফিসে সবাই তাকে এ নামে ডাকে) সন্ত্রাসী ভাড়া করে কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই আমার রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ড খুলে ফেলে, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং রেস্টুরেন্টের যাবতীয় মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে বীর মুক্তিযোদ্ধ ফরিদ আলী খান নিকটস্থ থানায় মামলা করতে গেলে কামাল আহমেদ মজুমদারের ভয়ে তৎকালীন ওসি মামলা নেয়নি। সে সময় কামাল আহমেদ মজুমদারের ভয়ে ফরিদ আলী খান কারো কোনো সহযোগিতা পাইনি। আসলো করোনাকালিন সময় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক মিরপুর শাখার ঋণের টাকা টাকা বেড়ে হয় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। প্রতিমাসের কিস্তি ছিল ৪ লাখ ২২ হাজার ১৫৪ টাকা। এছাড়াও International leasing থেকে প্রায় এক কোটি টাকা এবং আমার বেশ কিছু ব্যক্তিগত লোন ছিল। রেস্টুরেন্ট চলাকালীন বাজারেও অনেক বকেয়া ছিলো।
মেট্রোরেলের কাজ শুরু হলে রেস্টুরেন্টের সামনের রাস্তাটি মানুষ চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। ব্যবসা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে সীমিত আকারে শুধু টেক এওয়ে (take away) সুবিধায় রেস্টুরেন্ট টি চালু করা হয়।
০৩ অক্টোবর ২০২০ শনিবার কোনো ধরনের উচ্ছেদ নোটিশ ছাড়াই সন্ত্রাসীদের দিয়ে রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালায়। উক্ত ফ্লোরে শুধুমাত্র ছাদ ছিল, টাইলস থেকে শুরু করে সবরকম ডেকোরেশন আমার ব্যক্তিগত অর্থ, ঋণের টাকায়, শ্রম, ঘামে অর্জিত রেস্টরেস্টের প্রায় ৭ কোটি টাকার মালামাল, মূল্যবান কাগজপত্র নিয়ে যায় গুন্ডাবাহিনী এবং তারা হুংকার দেয় আমাকে তারা প্রানে মেরে ফেলবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আলী খান এফবিসিসিআই সম্মানিত সিনিয়র জীবী সদস্য। তার এ অবস্থায় ব্যবসায়ী নেতা মো. আসলাম আলী বলেন, একজন ব্যবসায়ীর এতোটা ক্ষতি মেনে নেয়া যায় না। এফবিসিসিআই পরিচালক আলহাজ্ব খন্দকার রুহুল আমিন ও বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। তিনি এখন নিঃস্ব। অনতিবিলম্বে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং লুন্ঠিত সকল মালামাল ফিরিয়ে দেয়া হোক।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার নিকট দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এ ব্যবসায়ীর পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা।