ঢাকা   ৩রা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । ১৮ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে শান্তিরক্ষা মিশন এলাকা পরিদর্শনে গেলেন সেনাপ্রধান স্ট্রোকের রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনা, রোগীসহ নিহত ৩ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আ.লীগের রাজনীতি করবো না, আদালতকে কামাল মজুমদার পলাতক দলটি দেশকে অস্থিতিশীল করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে: বিবিসি বাংলাকে ড. ইউনূস শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ-গাড়িতে আগুন, কয়েকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা: খালেদা জিয়ার খালাসের রায় বহাল আপিল বিভাগের রায় অবজ্ঞা করে চলছে বিআইডব্লিউটিএ সাক্ষাৎকারে তরুণ ব্যবসায়ী নেতা সাকিফ শামীম: হাসপাতাল বিমান থেকেও ঝুঁকিপূর্ণ আমি মন্ত্রিত্ব চাই না তবে আমৃত্যু অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যাব: এড ফজলুর রহমান জি এম সুলতান আল আমিন টিটিসিকে বানিয়েছেন অপকর্মের আতুর ঘর

সাক্ষাৎকারে তরুণ ব্যবসায়ী নেতা সাকিফ শামীম: হাসপাতাল বিমান থেকেও ঝুঁকিপূর্ণ

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশিত : রবিবার, মার্চ ২, ২০২৫
  • 82 শেয়ার

হিল্লোল কল্লোল
পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ এখন উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নিয়েছে। আমাদের মেধাশক্তি, দক্ষতা নিয়েও অনেকে গর্ব করে। কিন্তু এদের সংখ্যা কম। কিছু কিছু মেধাবী তরুণ বিদেশে গিয়ে নিজেদের মেধাশক্তি বিকাশের ক্ষেত্রে একাগ্রচিত্তে কাজ করেন। একই বয়সের দেশের এক ছেলে যখন নিজের চলাফেরার পয়সা জোগাড় করতে হিমশিম খায়, তখন নিজ বলে বলীয়ান হয়ে আরেকজন গ্রুপ অব কোম্পানি চালাচ্ছেন। নিজের বিবেক, বিবেচনা, জ্ঞান, দূরদর্শিতা দিয়ে কর্পোরেট বিজনেস চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্রমাগত তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করছেন।
দেশে কিছু বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে বাবা সন্তানের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হচ্ছেন। তেমনই একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ ব্যবসায়ীকে নিয়ে আমাদের আজকের কথোপকথন। এই তরুণ তুর্কি হলেন ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব সাকিফ শামীম। ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র মাল্টিডিসিপ্লিনারি কেয়ার হাসপাতাল যা স্বল্প সময়ে ক্যান্সার চিকিৎসায় বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে এক অনন্য উচ্চতায়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দৈনিক বিজনেস ফাইলকে তিনি নানা কথা বলেন। সেখান থেকে নির্বাচিত অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।
দৈনিক বিজনেস ফাইল: স্বাস্থ্য সেক্টর নিয়ে ভাবছেন?
শাকিফ শামীম: স্বাস্থ্য সেক্টর একটা ভালো জায়গায় রয়েছে। কিন্তু এটা পর্যাপ্ত নয়। এ সেক্টর নিয়ে সরকারের কোনো দূরদর্শী পরিকল্পনা নেই। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টরে সরকার ৩৫%, বেসরকারি খাত ৬৫% নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিবছর আমাদের অর্জিত অর্থের ৫ থেকে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার ভারত ও অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে। অবাক ব্যাপার, সরকারের কাছে এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। আবার এ সেক্টরে এমন কিছু ব্যক্তিদের অতীতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সেক্টর সম্পর্কে ভালো-মন্দ কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি।
বেসরকারি সেক্টরে যতটুকু অগ্রগতি ঘটেছে, সেটা উদ্যোক্তারা মনের জোর বা সাহস নিয়ে করেছে। যেমন ধরুন, বড় শিল্প গ্রুপ ২/৩টি ছাড়া কেউ স্বাস্থ্য সেক্টরে আসেনি। কারণ, এখানে সেই পরিবেশ নেই। এখানে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেশি, সময় দেয় কম। যন্ত্রপাতি আমদানিতে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ হলে ব্যয় বৃদ্ধি পায়। প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা-কর্মচারী চাহিদামতো না পাওয়া, ওষুধের কাঁচামাল, অবকাঠামো নির্মাণে চাঁদা ও প্রশাসনিক নানা সমস্যা এখানে বিরাজমান। রাজনৈতিক ঝামেলা তো আছেই। কারণ, এখানকার রাজনোইতিক প্রেক্ষাপটে এটি খুবই সাধারণ একটি বিষয় যে, এক দল আরেক দলকে সহ্য করতে পারে না। হাসপাতালের বিষয়টা বিমানের চেয়েও জটিল বিষয়। ১০টা বিষয়ের ১টা বিষয় কম হলে, সবকিছু সময়মতো না পেলে রোগী বাঁচবে না। জনগণ তো সমস্যার কথা বুঝবে না, জীবন-মরণ নিয়ে কোনো কথা তারা শুনবে না। এখানে তাদের রোগীর সঠিক চিকিৎসা পাওয়াটাই আসল কথা।
এ সেক্টরে ব্রেক ইভেন পয়েন্টে যেতে ৮ বছর সময় লাগে। স্থিতিশীল হতে প্রয়োজন হয় ১৫ বছর। এখানে ৫০০/৬০০ জন টেকনিক্যাল লোক কাজ করে। রয়েছে ১৫০০-২০০০ জনশক্তির একটা প্রক্রিয়া, যেখানে কোয়ালিটি, কোয়ালিফিকেশন এবং দক্ষতা সবই প্রয়োজন। অর্থের অভাব এখানে থাকতে পারবে না। এখানে বিদ্যুৎ, ট্যাক্স ২০ বছরের জন্য ফ্রি করে দিতে হবে। তাহলে বর্তমান মূল্য থেকে ২০/৩০% পর্যন্ত কমে রোগীরা সেবা পাবে।
সুস্বাস্থ্য প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু, আমরা কি দিতে পারছি? পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে সবার জন্য হেলথ কাভারেজ আছে। হেলথ ইউনিভার্সাল ব্যাপার হলেও হেলথকেয়ার নিয়ে সরকারের ইচ্ছা কী? আজ পর্যন্ত স্বাস্থ্য খাতে যুগোপযোগী কোনো আইন হয়নি, যেখান থেকে মানুষ নিশ্চিত স্বাস্থ্য সেবা পেতে পারে। রাষ্ট্রের শক্তিশালী সমর্থন ছাড়া এ খাত অনেক বড় জায়গায় নেওয়া সম্ভব নয়। সরকার নীতি সহায়তা ও বাস্তবায়নে কঠিন পদক্ষেপ আর অর্থ সহায়তা নিশ্চিত করলে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অনেক আশাব্যঞ্জক কিছু হতে পারে। সরকার চাইলে অথবা আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দিলে এ খাতে এমন কিছু চমক দেখাতে পারব, তখন আশপাশের ধনী রোগীরাও আমাদের দেশের সেবা নিতে আসবে। সেই লাভ দিয়ে দেশের সাধারণ রোগীরা নামমাত্র মূল্যে সেবা পেতে পারে। জনগণ এ ব্যাপারে এখনো সচেতন হয়নি।
আমাদের দেশে সাধারণ মধ্যবিত্তের মধ্যে একটা ধারণা কাজ করে, কারো জটিল রোগ হলে আর বাঁচা সম্ভব না। কারণ, এত টাকা কোথায় পাবে? অসুস্থ রোগীর অভিভাবক দেশে এত টাকা খরচ করলে তাদের সম্পত্তি, জমি-জমা, বসতবাড়ি বিক্রি করতে হবে, অর্থাৎ তাদের সব চলে যাবে। এসব কারণে তারা সেবার চেষ্টাও করে না। নিশ্চিত মৃত্যু হয় অনেক রোগীর। কিন্তু বিদেশে সিস্টেমটা কী? রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে তাকে যত চিকিৎসা দেওয়া দরকার, সরকার তা দেবে, সেটা যতদিনই লাগুক, যত টাকাই লাগুক না কেন। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর প্রশ্ন আসবে অর্থের। রোগীর পরিবারের অর্থ থাকলে দেবে, না হলে সামাজিক সংগঠন আছে, তারা অনুদান দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেবে। সেসব দেশে শতভাগ হেলথ কাভারেজ থাকে। সেখানে সরকার, জনগণ সবাই সজাগ। আমাদের ব্যর্থতা, আমরা আমাদের রাষ্ট্রকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে পারিনি।
পৃথিবীর সব দেশে রাজনীতি জনগণের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে। আমরা জনগণ সেটা কতটুকু বুঝি বা যারা ব্যবসা করে, উদ্যোক্তা হয়, তারাই বা দেশের নানা অব্যবস্থায় শত কোটি টাকার ঝুঁকি নিয়ে কী করবে? তাকে তো টিকে থাকতে হবে। কোয়ালিটি ট্রিটমেন্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে সবার জন্য দরজা খোলা রাখা দরকার। গরিব রোগীদের ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ কী? এসব এখন ভাবার সময়।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সরকারের মনোযোগ আরও বাড়ানো প্রয়োজন। স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন, এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি। একইসঙ্গে, বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় নীতি ও সহায়তা প্রদান করা উচিত, যাতে দেশের সব নাগরিক মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা পেতে পারে।
(চলবে)

 

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০