নিজস্ব প্রতিবেদক
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ও সুবিধাভোগী সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ুব খান ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত, অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। যা তার জ্ঞাত আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে,ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (নিবন্ধন) আইয়ুব খান। পদ-পদবী ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অত্যন্ত কৌশলে ফাইল আটকে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধিত বিভিন্ন সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও অনিয়মকে পুঁজি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থে উপপরিচালক আইয়ুব খান নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তার এসব অবৈধ সম্পদের দিকে যাতে দুদকসহ প্রশাসনের নজর না পড়ে সেজন্য তার নিকটাত্মীয়, সিন্ডিকেট সদস্য এবং সহকর্মীদেরও নাম ব্যবহার করেছেন ।
রাজধানী ঢাকার শ্যামলীর ‘ঢাকা গার্ডেন সিটি’-তে (ঠিকানা: ১/এফ, আদাবর, মেহেদীবাগ, শ্যামলী) ‘হাসনাহেনা (এফ)’ টাওয়ারে আইয়ুব খানের ৩টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট (পার্কিংসহ) রয়েছে। এর মধ্যে একটি ফ্ল্যাট আইয়ুব খান নিজ নামে ক্রয় করেছেন (ফ্ল্যাট নং: এ-২ নং এবং পার্কিং নং: বি-৩৩), বাকি দুইটির মধ্যে একটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের নরসিংদী জেলার উপপরিচালক মাসুদুল হাসান তাপস (ফ্ল্যাট নং: ডি-২ নং এবং পার্কিং নং: বি-২৯) এবং অন্যটি আইয়ুব খানের ভাগ্নে মোঃ সোহেল রানার (জাপান প্রবাসী) নামে ক্রয় করা হয়েছে (ফ্ল্যাট নং: বি-৩ নং এবং পার্কিং নং: জি-৩)। এছাড়াও ‘ঢাকা গার্ডেন সিটি’-তে (ঠিকানা: ১/জি, আদাবর, মেহেদীবাগ, শ্যামলী) ‘মাধবীলতা (বি+সি)’ টাওয়ারের ৬ষ্ঠ তলায় আইয়ুব খানের আরও একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে। যার প্রতিটি ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজার মূল্য ৩ কোটি টাকা। শুধু ‘ঢাকা গার্ডেন সিটি’ নয়, এভাবে নামে-বেনামে ঢাকাসহ নিজ জেলা কুমিল্লার হোমনায় চোখ ধাঁধানো মার্কেটসহ আইয়ুব খানের বিপুল সম্পদ রয়েছে। এছাড়াও কয়েক কোটি টাকা মূল্যে ক্রয়কৃত একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি ভাড়া দিয়েছেন। বর্তমানে ঢাকা গার্ডেন সিটিতে ফাঁকা ২টি প্লটের মধ্যে একটি প্লট ক্রয় করার চেষ্টা করছেন আইয়ুব খান। এছাড়া রয়েছে ব্যাংকে কোটি টাকার এফডিআর।
আইয়ুব খান ৬ষ্ঠ গ্রেডের একজন কর্মকর্তা। ৬০-৬৫ হাজার টাকা বেতনভুক্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা। পরিবারের আনুষঙ্গিক ব্যয় মিটিয়ে কোটি কোটি টাকা সঞ্চয় করা অসম্ভব। উপরোক্ত সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আইয়ুব খান ও তার পরিবারের সদস্যদের জাতীয় পরিচয় পত্রের বিপরীতে সম্পদের অনুসন্ধান করলে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের প্রমান পাওয়া যাবে বলে দুদকে দায়েরকৃত এক অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকা গার্ডেন সিটিতে অন্তত ১৫টি ফ্ল্যাটের মালিক হচ্ছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত কর্মকর্তাদের। যা দেখভাল করছেন আইয়ুব খান।
এদিকে জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির অবৈধ পরিচালনা পর্ষদকে বৈধতা দিতে আইয়ুব খান ও ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রকনুল হকের যোগসাজশে অভিযোগের তদন্ত ফাইল আটকে রেখে ২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আবেদনকৃত (সূত্র স্মারক: বিএনএসবি/২০২২/৬০, তারিখ: ১৯/০২/২০২২) নতুন কমিটি অনুমোদনের জন্য দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রকনুল হক এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। দীর্ঘ দুই বছর পর এই ধরনের কমিটি গঠন করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ তদন্তে প্রমাণিত হলেও তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশ অনুযায়ী সুশাসন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রশাসক নিয়োগ না করে; দুই বছর আগের পুরাতন আবেদনের প্রেক্ষিতে অবৈধ পরিচালনা পর্ষদের অবৈধ কার্যক্রমকে বৈধতা দিতে; উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির অবৈধ পরিচালনা পর্ষদকে সহযোগিতা করেছেন উপপরিচালক (নিবন্ধন) আইয়ুব খান। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও মতামত দিতে বিভিন্ন অজুহাতে গড়িমসি করতে থাকেন আইয়ুব খান। পরবর্তীতে তিনি এই মর্মে মতামত দেন যে, ডিজি স্যারের সাথে আলাপ হয়েছে। ডিডি ঢাকা বিষয়টির উপর তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রাপ্ত তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডিডি ঢাকা-কে বলা হয়েছে। এখানে একইসঙ্গে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন সাংঘর্ষিক বলে অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা মতামত দিয়েছেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তর হলো ফিল্ড পর্যায়ের সকল অফিসের নিয়ন্ত্রণকারী অফিস। নিয়ন্ত্রণকারী অফিস কর্তৃক নিয়োগকৃত তদন্ত কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করে প্রতিবেদন ধামাচাপা দিয়ে জেলা পর্যায়ের অফিস থেকে নতুন তদন্ত কমিটি গঠন এটাই প্রমাণ করে যে, এখানে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে ‘বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি’ সমাজসেবা অধিদপ্তরের সদর দপ্তর থেকে নিবন্ধিত হয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের হস্তক্ষেপ বিধিবহির্ভূত।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ুব খানের ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত,অনিয়ম,দুর্নীতি ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ।