মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০ এর আগে শেষ বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকা, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বহির্বিশ্বের প্রভাব, বর্ণবাদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা বিষয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) টেনেসির ন্যাশভিলে অনুষ্ঠিত ওই বিতর্কে দুই প্রার্থী নিজেদের কার্যক্রমের পক্ষে সাফাই গাওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতির পাল্টাপাল্টি অভিযোগও এনেছেন।
করোনা মহামারি নিয়ে আলোচনার সময়, জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আসন্ন দিনগুলোতে সংক্রমণ বাড়লে ফের লকডাউন আরোপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি বাইডেন। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, অর্থনীতি সচল করতে বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।
এদিকে, ছেলে হান্টার বাইডেনের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বাইডেন লাভবান হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। এছাড়াও, রাশিয়া-ইউক্রেন-চীনের মতো দেশগুলো তার ব্যবসার সুযোগ নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার সাহস দেখিয়েছে বলে বিতর্কে উল্লেখ করে ট্রাম্প। ডেমোক্রেট প্রার্থী তার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিদ্বন্দ্বীর কর রিটার্ন সংক্রান্ত অস্বচ্ছতার প্রসঙ্গ সামনে আনেন।
অপরদিকে, জাতীয় পর্যায়ের জনমত জরিপগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনকেই রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তবে ‘দোদুল্যমান’ হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোতে দুইজনের মধ্যে ব্যবধান সামান্য। শেষ পর্যন্ত এ রাজ্যগুলো কোন দিকে হেলবে, তার ওপরই নির্ভর করবে আগামী চার বছর কে হোয়াইট হাউসের দখল পাচ্ছেন?
বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ আগাম ভোট পড়েছে। ডাকযোগে এবং কেন্দ্রে গিয়ে এরই মধ্যে চার কোটি ৬০ লাখেরও বেশি ভোটার তাদের রায় জানিয়ে এসেছেন। বৃহস্পতিবার রাতের বিতর্ককে দুই প্রার্থীর মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর হওয়া প্রথম বিতর্কের তুলনায় বেশ সুশৃঙ্খল মনে হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন।
তবে, ন্যাশভিলের শেষ বিতর্কেও ছিল ব্যক্তিগত আক্রমণের ছড়াছড়ি। দুই প্রার্থী যে একে অপরকে ভয়াবহ অপছন্দ করেন, এদিনের আলোচনায় ফুটে উঠেছিল তাও। বিতর্কে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা প্রসঙ্গে দুই প্রার্থী বিপরীতধর্মী অবস্থান নেন। বিজ্ঞানীরা যদি পরামর্শ দেয় তাহলে আরও লকডাউন দেওয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন জানান তিনি সেরকম সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। আর ট্রাম্প বলেছেন, ভাইরাস সংক্রমণে অধিকাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠায় এখন আরও শাটডাউন দেওয়ার কথা বিবেচনা করাই ভুল হবে।
যুক্তরাষ্ট্র বিশাল দেশ, বিশাল অর্থনীতি। মানুষজন তাদের চাকরি হারাচ্ছে, তারা আত্মহত্যা করছে। তাদের হতাশা, অ্যালকোহল ও মাদক গ্রহণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এর আগে কেউই এমনটা দেখেনি – বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বাইডেন তার আলোচনায় মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর দায় ট্রাম্পকে দিয়েছেন। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর জন্য যিনি দায়ী, তার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকা উচিত নয় – বলেছেন বাইডেন। বর্ণবাদ প্রসঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প বলেছেন – এ কক্ষে যারা আছেন, আমিই তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বর্ণবাদী।
তিনি ১৯৯৪ সালের অপরাধ বিলের কথাও তোলেন, যার খসড়ায় বাইডেন সহায়তা করেছিলেন। ওই আইনের কারণে বিপুল সংখ্যক আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে আসছেন।
বাইডেন তার আলোচনায় ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বর্ণবাদী প্রেসিডেন্ট অ্যাখ্যা দেন। তিনি প্রতিটি বর্ণবাদী আগুনেই হাওয়া দেন – ট্রাম্পের সম্পর্কে বলেছেন সাবেক এ মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা কাগজপত্রহীন অভিবাসীদেরকে তাদের সন্তানদের কাছ থেকে আলাদা করার নীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প জানান, ওবামা প্রশাসনের আমলেও অভিবাসী শিশুদের আটক করা হয়েছিল।
খাঁচাগুলো কে বানিয়েছিল, জো? – ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দিকে এ প্রশ্ন ছুড়ে দেন ট্রাম্প। বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনই অভিবাসী পরিবারগুলোর সদস্যদের নির্দয়ভাবে আলাদা করেছে। তাদের এ চর্চাকে ‘অপরাধ’ বলেও অ্যাখ্যায়িত করেন তিনি।
পাশাপাশি, ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে চমকে দেওয়া ট্রাম্প তার আলোচনায় বাইডেনের ছেলে হান্টারের ‘ফাঁস হওয়া’ ইমেইলের প্রসঙ্গ তুলে চীনের সঙ্গে তার ব্যবসায়িক সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আনেন। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে আপনার একটি ব্যাখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রাপ্য, বলেন ট্রাম্প। জবাবে বাইডেন বলেন, আমি কোনো দেশের কাছ থেকে কখনোই একটি পয়সাও নেইনি।
সম্প্রতি, চীনে ট্রাম্পের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে- নিউ ইয়র্ক টাইমসে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ডেমোক্রেট প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রে ও চীনে প্রেসিডেন্টের দেওয়া কর নিয়ে তুলনা করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, চীনে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে এক লাখ ৮৮ হাজার ৫৬১ ডলার কর দেওয়া হয়েছিল। একই পত্রিকা আগের এক প্রতিবেদনে ট্রাম্প ২০১৬-১৭ সালে মাত্র ৭৫০ ডলার কর দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, আমার অনেকগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, সারা বিশ্বেই আছে এবং সেগুলো সবই তালিকাভুক্ত। আমি একজন ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ের কাজে ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো প্রয়োজন হয়। জ্বালানি নীতি নিয়ে আলোচনায় ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে তেল শিল্প নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চান। আপনি কি তেল শিল্প বন্ধ করে দেবেন? – প্রশ্ন করেন তিনি।
আমি তেল শিল্পকে রূপান্তর করবো। কেননা এটি ভয়াবহ দূষণ ঘটাচ্ছে – বড় বড় তেল কোম্পানিগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে প্রতিস্থাপন এবং ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রকে কার্বন নিরপেক্ষ দেশে পরিণত করার পরিকল্পনার কথা জানান বাইডেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, সত্যিকার অর্থে তিনি যা বলতে চাচ্ছেন, তা হল তিনি তেল শিল্পকে ধ্বংস করতে যাচ্ছেন। টেক্সাস, আপনাদের কি এটা মনে থাকবে? পেনসিলভানিয়া, ওকলাহোমা, ওহাইও মনে থাকবে?