বিজনেস ফাইল প্রতিবেদক
দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর আবাসন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন রিহ্যাবের ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একটি মহল প্রায় এক যুগের বেশি সময় নানা অনিয়মের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে রাখে। এই অনিয়মের অভিযোগে রিহ্যাব এর সাধারণ মেম্বাররা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দাখিল করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত তার সত্যতা প্রমাণ পায়।
নানা অনিয়মের তদন্ত হওয়ার পরও অবৈধভাবে কারসাজির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বৃদ্ধির চক্রান্ত করে মহলটি। দীর্ঘ সময় ধরে রিহ্যাবের সাধারণ সদস্যরা প্রত্যক্ষ ভোট দিয়ে তাদের সংগঠনের নেতা নির্বাচন করার সুযোগ পায়নি। প্রতিবারই অদৃশ্য শক্তির ছোঁয়ায় কেউ মনোনয়ন ফরম কিনতে পারেনি। সন্ত্রাসীদের মহড়া দিয়ে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়ন কিনতে দেয়া হয়নি। পরে বিগত কমিটি মন্ত্রণালয় থেকে ৬ মাস কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করে।
পরে রিহ্যাব এর কয়েকজন সদস্য বিষয়টিকে আইনী চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে এবং তারা প্রমান করে এক নায়কত্ব ভাঙ্গা যায় যদি উদ্দেশ্য সৎ থাকে। এক পর্যায়ে সেটা তারা প্রমান করে দেখিয়ে দেয়।
আইনী ব্যবস্থার মুখে ২০২৩ সালে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট রিহ্যাবের তৎকালীন কমিটির বর্ধিত মেয়াদ স্থগিত করে প্রশাসক বসানোর নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয় সংগঠনটির সব ব্যাংক হিসাব। উচ্চ আদালতের নির্দেশে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এ প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জান্নাতুল ফেরদৌসকে প্রশাসক করা হয় মন্ত্রণালয় থেকে। তারপর স্বচ্ছভাবে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি রিহ্যাব এর সকল সদস্যদের সাথে নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। কাওরান বাজারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিয়ম সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও রিহ্যাবে নব নিযুক্ত প্রশাসক জান্নাতুল ফেরদৌস একটি সুষ্ঠু, সুন্দর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব রিহ্যাব মেম্বারদের সহযোগিতা কামনা করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও রিহ্যাব নির্বাচন বোর্ডের (২০২৪-২৬) চেয়ারম্যান সাদেক আহমদ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন।
নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সদস্যদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে। প্রশাসকের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২৪-২৬ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে ৯৭ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। রিহ্যাবের ইতিহাসে এর আগে এত প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেননি। এরপরও নির্বাচন বন্ধ করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র এবং সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি গঠনের চাপ ছিল।
নির্বাচন প্রক্রিয়ার একপর্যায়ে সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেন সংগঠনের কয়েকজন সাবেক প্রভাবশালী নেতা। চাপে পড়ে নির্বাচনের তফসিল সংশোধন করে নির্বাচন বোর্ড। তাতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ভোটের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পিছিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি করা হয়।
রিহ্যাব নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করতে সর্তক অবস্থানে ছিল প্রশাসন। নির্বাচনের দিন ভেন্যুতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যা ব এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। অন্যদিকে, নির্বাচন নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ করতে নির্দেশনা দেয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
নানা বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে তাঁর অধীনে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে চারটি প্যানেল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। রিহ্যাবের ২০২৪-২৬ মেয়াদের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে ২৯টি পদের মধ্যে ২৫টিতে জয়ী হয়েছে আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ। এই প্যানেলের নেতৃত্বে আছেন জাপান গার্ডেন সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি সর্বোচ্চ ২৪৮টি ভোট পেয়েছেন। ২৯ পদের বিপরীতে ৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এ ছাড়া হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশনের এমডি ইন্তেখাবুল হামিদের নেতৃত্বাধীন জয় ধারা প্যানেলের তিনজন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া ডেভেলপারস ফোরাম প্যানেলের একজন জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে নবজাগরণ প্যানেলের কেউ জয়ী হতে পারেননি। ছয় ঘণ্টার বিরতিহীন ভোটে ৪৭৬ জন ভোটারের মধ্যে ৪০৯ জন ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ ভোট পড়েছে প্রায় ৮৬ শতাংশ। ভোট গ্রহণ শেষে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট গণনা করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ভোটের ফলাফল প্রকাশ করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এর নেতৃত্বাধীন নির্বাচন বোর্ডের সদস্যরা।
নির্বাচনের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে মার্চ প্রথম দিকে রিহ্যাব এর প্রশাসক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জান্নাতুল ফেরদৌস এর নিকট থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান এর নেতৃত্বে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। নির্বাচনের পর নির্বাচিত কমিটি স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে।