বিজনেস ফাইল প্রতিবেদক
দেশে ব্যাংকিং সেক্টরে চলছে ভয়াবহ অরাজকতা। দেশ থেকে বিশাল অর্থ পাচার হয়ে গেছে এমনটা যখন সবার নজরে তখন থলের বিড়াল বেরিয়ে আসলো আরেকটি খবরে। জানা গেছে ব্যাংকিং সেক্টরে যারা অভিজ্ঞ বিশেষ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা ব্যাংকিং, হিসাব বিজ্ঞান,অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং বিষয়ে পাস করেছেন তাদের এ মুহূর্তে কোন গুরুত্ব নেই। রাষ্ট্রীয় ১০ টি ব্যাংক থেকে নেয়া তথ্য জানা গেছে বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে যারা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব রয়েছেন তারা হলেন: ১) সোনালী ব্যাংক পি এল সি: শওকত আলী খান (রসায়ন) ২)জনতা ব্যাংক : মুজিবুর রহমান (কৃষি) ৩)অগ্রণী ব্যাংক: আনোয়ারুল ইসলাম (রসায়ন) ৪/রূপালীব্যাংক : কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম (লেদার টেকনোলজী) ৫/ বেসিক ব্যাংক : মো.কামরুজ্জামান অবসর (থেকে) ৬/প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক : চানু গোপাল ঘোষ (অর্থনীতি) ৭/আনসার ও ভিডিপি ব্যাংক : মীর মোফাজ্জেল হোসেন : (অর্থনীতি) ৮/ কৃষি ব্যাংক: সঞ্চিতা বিনতে আলী (পদার্থ) ৯/সালমা বানু: পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (অর্থনীতি) রূপালী ব্যাংক থেকে ১০/বিডিবিএল: মোঃ জসিম উদ্দিন (রসায়ন)।
উল্লেখিত ব্যাংক সময়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের এডুকেশন ব্যাকগ্রাউন্ড বলে তারা অধিকাংশই বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। এক ধরনের তামাশা বা অতিরিক্ত চালাকি যোগ্যতা নিয়ে তারা বড় বড় পদে বহাল রয়েছেন। তাদের বেতন ৭ লক্ষ টাকা। রয়েছে অন্যান্য সুযোগ। এত অর্থ ব্যয় করে সরকার তাদের কাছ থেকে দেশের অর্থ সংক্রান্ত বা ব্যাংক বিষয়ে কি উপকৃত হচ্ছে এ নিয়ে প্রশ্ন সবার মাঝে। একজন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক বলেন এগুলো জাতির সাথে মশকরা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ দেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় যারা কমার্স বিষয়ে পাস করেছেন তাদের কি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা উচিত কারণ তারা সংশ্লিষ্ট সাবজেক্টে পড়াশোনা করেছেন। বিগত সরকারের শেষ সময়ে ৩/১/২০২৩ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংক্রান্ত এক নীতিমালা প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে উল্লেখ করা হয় এসব ব্যাংক সমূহে ব্যাংকে কর্মরত বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা যেতে পারে।
উক্ত নিয়োগ কমিটিতে থাকবেন অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, গভর্নর- বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগের সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব(বাণিজ্যিক ব্যাংক) / যুগ্ম সচিব ( ব্যাংক প্রশাসন )।
নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে একজন মহাব্যবস্হাক বলেন চাকরি করতে করতে আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি । আমাদের জুনিয়ররা এম ডি, ডিএম ডি হয়ে যাচ্ছেন অথচ আমরা প্রমোশন পাচ্ছি না। আমাদের সামনে মূলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরে যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কমার্স তারাই মূল ব্যক্তি হওয়া উচিত। অথচ রাষ্ট্রীয় দশটি ব্যাংকের শীর্ষ পদে কমার্স গ্রাউন্ডের কোন ব্যক্তি নেই। মৌলিক ডিগ্রী বাদ দিয়ে জাল জালিয়াতি করে করা যায় যেসব ডিগ্রি নেয়া যায় কিংবা যেসব ডিগ্রির জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোন ধরনের গ্রহণযোগ্যতা নেই সেগুলোকে কাউন্ট করে যোগ্য ব্যাংকারদের ডিএমডি বা এম ডি পদে পদায়ন করা হচ্ছে না। এতে প্রকৃত ব্যাংকাররা হতাশায় পড়েছেন অনেকেই চাকরি ছেড়ে দেবার চিন্তা করছেন। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন
দেশবরেণ্য গভর্নর ড.লুৎফর রহমান সরকার বিশ্বব্যাংকের সুপারিশে সারাদেশ থেকে ব্যাংকিং ফিনান্স আছে এমন ছাত্রদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন আমার দেশের মেধাবী ব্যাংকাররা অন্য দেশে চলে যাবে বা অন্য সেক্টরে কাজ করবে এটা হতে পারে না।তাদের ভালোভাবে মূল্যায়ন করা হবে। সে কারণে অনেকেই তখন বুক বেঁধে একদিন ব্যাংকের শীর্ষ পদে যাবেন এমনটি প্রত্যাশা করেই ব্যাংকে যোগ দিয়েছিলেন। যারা ২৭/২৮ বছর চাকরি করেছেন তাদের চেয়ে ১২-১৩ বছর এর চাকরি করাদের গুরুত্ব বেশি দেয়া হচ্ছে। যেমন বেশ আগে যারা প্রথম শ্রেনীতে পাস করেছেন তাদের জন্য নাম্বার ৪ আর যারা (জিপিএ সিস্টেমে) যারা পাস করছেন তাদের নম্বর ৪.৫ ধরা হচ্ছে। এটাতো রীতিমতো বৈষম্য। আগের পড়ার মান আর এখনকার পড়ার মান কি এক? এটা যে কেউ বুঝবে?
তিনি বলেন ব্যাংকিং ডিপ্লোমার পাশাপাশি এমবিএ, সিএ, আইসিএমে ডিগ্রি নিতে একজন ব্যাংকারের ব্যাংক থেকে ছুটি নিতে হয়। সেখানে যারা ছুটি না নিয়ে ১৫/২০ দিনে CPA/DBA/CCNA/CISA নামক নামমাত্র ভুয়া কোর্স করেছে তাদের যোগ্যতা আমলে নিয়ে ৫ নাম্বার বেশি দেয়া হচ্ছে। আমরা ছুটির আবেদন করেও পাইনি।
আমরা নিজেরা ব্যাংককে ভালোবেসে কাজ করেছি আমাদের মূল্যায়ন হবে বলে । অথচ নীলক্ষেত থেকে যারা পুরনো বই জোগাড় করে তা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে বা পত্রিকায় ছেপেছে উনাদের ৫ নম্বর বেশি দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ব্যাংকিং সেক্টরে অনভিজ্ঞ ধূর্ত ও ধান্দাবাজরা ৫+৫+.৫= ১০.৫ নাম্বার বেশি পেয়ে যাচ্ছে।
আরেকটি কথা সরকারি চাকরিতে এক পথ থেকে অন্য পদে যেতে কোন ভাইবার প্রয়োজন হয় না।ব্যাংকে এক পদ থেকে অন্য পদে পদায়ন হতে গেলে কথায় কথায় ভাইবা। আসলে মন দিয়ে আর কাজ করতে পারছি না।
ব্যাংকিং ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যাংকেরদেরকে গুরুত্ব না দিলে অচিরেই দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। বর্তমানে সৃষ্ট সমস্যা সমাধান খুব শীঘ্রই করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বৈষম্যবিরোধী ব্যবসায়ী পরিষদের একজন সদস্য বলেন এম ডি, ডি এমডি হতে গেলে তাদের অবশ্যই সে সময়ের সরকারের ইতিবাচক রিপোর্ট হতে হয়।
বর্তমানে যারা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে এমডি হয়েছেন তারা গত সরকারের সমর্থন পুষ্ট ছিল।