ঢাকা   ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভ্যাট ফাঁকি, মি. বেকারের ব্যাংক হিসাব তলব

নির্মল বার্তা
  • প্রকাশিত : শনিবার, অক্টোবর ২৪, ২০২০
  • 163 শেয়ার
বেকার
ভ্যাট গোয়েন্দা দলের মি. বেকারের টঙ্গী ও গাজীপুরের হেড অফিসে (কারখানা) অভিযান

মি. বেকারের টঙ্গী ও গাজীপুরের হেড অফিসে (কারখানা) অভিযান চালিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা। অভিযানে ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে। অধিকতর তদন্তের জন্য মি. বেকারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের হিসাব তলব করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব সাময়িকভাবে অপরিচালনযোগ্যও ঘোষণা করা হয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, প্রতিষ্ঠানটির রাজধানীতে পেস্ট্রি শপের ২৯টি ও সুইটমিটের পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এই হেড অফিসের ঠিকানায় তাদের কারখানাও অবস্থিত। বৃহস্পতিবার ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর থেকে টঙ্গীর ঢাকা ব্যাংক, কামারপাড়া শাখা ও সাউথইস্ট ব্যাংকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, ভ্যাট গোয়েন্দার দু’টি পৃথক দল মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপের, মোকদাম আলী সরকার রোড, ধোউড়, তুরাগ, ঢাকা এবং মি. বেকার সুইটস জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর প্রতিষ্ঠান দু’টির হেড অফিস কাম কারখানায় অভিযান চালায়। প্রতিষ্ঠান দুইটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত।

এর আগে অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান গত ১৮ অক্টোবর তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত মি. বেকারের বিক্রয়কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভ্যাট চালান না দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। তিনি ওই স্ট্যাটাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে প্রতিকার চেয়ে উল্লেখ করেন, ভোক্তারা ভ্যাট দিলেও তা সরকার পাচ্ছে না। ওই কেন্দ্রটিতে ভ্যাট কেটে একটি কাঁচা চালান দিয়ে ক্রেতাকে বুঝ দেওয়া হয়।

এই অভিযোগ ও আরও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআরে চেয়ারম্যান অভিযোগটির তদন্ত করার জন্য ভ্যাট গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের পরিদর্শনের সময় প্রতিষ্ঠান দু’টিতে ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ও বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) পাওয়া যায়নি। পরিদর্শনের সময় ভ্যাট সংক্রান্ত অন্যান্য দলিল দেখাতে বলা হলে সেটিও উপস্থিত মালিকপক্ষ দেখাতে পারেননি। এসব বিষয়ে কোনো সদুত্তরও তারা দিতে পারেনি।

ভ্যাট গোয়েন্দার ডিজি ড. মইনুল বলেন, পরিদর্শনে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, নিজস্ব মনগড়া হিসাবের ভিত্তিতে মি. বেকার স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে আসছে। একইসঙ্গে তারা ভোক্তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা দেননি।

অভিযানের এক পর্যায়ে গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে অবস্থিত অন্য একটি ভবনের বিভিন্ন তলায় ও ছাদে অবস্থিত কর্মচারীদের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তাদের পুরোনো কিছু অসংগঠিত নথিপত্র পেয়ে সেগুলো জব্দ করেছে। গোয়েন্দা দলের জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অভিযানের আগের দিন যেসব পণ্য কারখানা থেকে বের করেছে, সেগুলোর মূসক-৬.৫ চালান দেখতে চাইলেও তারা দেখাতে পারেননি।

ভ্যাট গোয়েন্দার অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান দু’টি কেন্দ্রীয় নিবন্ধিত হওয়ায় মূসক-৬.৫-এর মাধ্যমে পণ্য কারখানা থেকে আউটলেটে নেওয়ার বিধান থাকলেও তা পরিপালন করা হয় না। পাশাপাশি, ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের আরেকটি দল উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপের বিক্রয়কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে। কর্মকর্তারা প্রথমে পরিচয় গোপন করে পণ্য কিনে দেখতে পান, এই বিক্রয়কেন্দ্রটি মূসক চালান (মূসক-৬.৩) ছাড়াই পণ্য বিক্রি করছে। গোয়েন্দাদের আরেকটি দল এই দোকানের বেইলি রোডে অবস্থিত শাখাতেও একই চিত্র দেখতে পান।

প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট চালান ছাড়া পণ্য সরবরাহ ও বিক্রি করায় মি. বেকারকে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব তলব করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব সাময়িকভাবে অপরিচালনযোগ্য করা হয়েছে। অভিযানে জব্দ করা দলিল ও ব্যাংক থেকে পাওয়া দলিলের ভিত্তিতে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ নির্ণয় ও অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর।

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০