ক্ষুধামুক্তির লড়াইয়ে গত এক বছরে বড় অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। চলতি বছর ‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে (জিএইচআই)’ ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৫তম। ২০১৯ সালে ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮৮তম।
এক বছরে ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের ১৩ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। শুক্রবার ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট চলতি বছরে সূচক প্রকাশ করেছে।
কেবল সূচকের অবস্থানে অগ্রগতি নয়, যে চার মাপকাঠিতে বিচার করে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) করা হয়, তার সবগুলোতেই গতবারের তুলনায় এগিয়েছে বাংলাদেশ।
অপুষ্টির হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কম উচ্চতার শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার- এই চারটি মাপকাঠিতে প্রতিটি দেশের পরিস্থিতি বিচার করে তৈরি হয় জিএইচআই।
প্রতিটি দেশের স্কোর হিসেব করা হয়েছে ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে। সূচকে সবচেয়ে ভালো স্কোর হলো শূন্য। স্কোর বাড়লে বুঝতে হবে, ক্ষুধার রাজ্যে সেই দেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর স্কোর কমা মানে, সেই দেশের খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, গত এক বছরে বাংলাদেশ স্কোরের দিক দিয়েও এক ধাক্কায় অনেকটা উন্নতি করতে পেরেছে। মোট স্কোর গতবারের ২৫ দশমিক ৮ থেকে কমে হয়েছে ২০ দশমিক ৪। আর এর ফলেই সার্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এক লাফে ১৩ ধাপ এগিয়ে এসেছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি শিশুর প্রতিদিনের গ্রহণ করা খাদ্যের পুষ্টিমান গড়ে ১৮০০ কিলো ক্যালরির কম হলে বিষয়টিকে ক্ষুধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ক্ষুধা সূচক বলছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ অপুষ্টির শিকার; পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৯ দশমিক ৮ শতাংশের উচ্চতার তুলনায় ওজন কম; ওই বয়সী শিশুদের ২৮ শতাংশ শিশুর উচ্চতা বয়সের অনুপাতে কম এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার ৩ শতাংশ।
গতবছর এই চার ক্ষেত্রে হার ছিল যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ, ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
এই সূচকে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে গত কয়েক বছর ধরেই। তবে নেপাল ও শ্রীলংকার চেয়ে পিছিয়ে আছে এখনও।
গতবারের মত এবারও ক্ষুধার সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে শ্রীলংকা। আর সাত দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তান। মিয়ানমার ছাড়া সূচকে আসা এ অঞ্চলের সবগুলো দেশেরই অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, ক্ষুধামুক্তির লড়াইয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো গত এক বছরে বেশ খানিকটা উন্নতি দেখাতে পারলেও সাত দেশই রয়েছে সূচকের সেই ৪০ দেশের কাতারে, যেখানে ক্ষুধা এখনও ‘মারাত্মক’ একটি সমস্যা।
তাছাড়া সরকারি যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ২০২০ সালের এই সূচক তৈরি করা হয়েছে, তাতে চলমান করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব আসেনি।