ঢাকা   ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিগ ব্যাং: যেভাবে এলো এ মহাবিশ্ব

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৫, ২০২০
  • 93 শেয়ার
মহাবিশ্ব
মহাবিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন ছায়াপথ

১৫ বিলিয়ন বছর আগে আমাদের এ মহাবিশ্বের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। যে ছোট্ট গ্রহে আমরা বসবাস করি, আমাদের চেনা ছায়াপথ এবং সবকিছু কীভাবে শূন্য থেকে সৃষ্টি হলো, তার পেছনে একটি গল্প আছে।

প্রায় শূন্য থেকে মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে এক মহাবিস্ফোরণ ঘটলো। সেই ‘বিগ ব্যাং’ এর মাধ্যমে ক্ষুদ্রাকার ভরবিশিষ্ট ভীষণ উত্তপ্ত একটি বিন্দু দুই বিলিয়ন বিলিয়ন কিলোমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলো।

এভাবেই এলো মহাবিশ্ব এবং সেটি প্রতিনিয়ত আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে।

বিগ ব্যাং কেনো হলো, তা বিজ্ঞানীরা কেবল ধারণা করতে পারেন। এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। তবে একেবারে প্রথমদিকে কী হয়েছিল, তা এখন কিছুটা বোঝা যাচ্ছে।

এ মহাবিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন ছায়াপথ রয়েছে (এক বিলিয়ন = একশ’ কোটি)। একেকটি ছায়াপথে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে। একই ছায়াপথের নক্ষত্রগুলো বেশ কাছাকাছি অবস্থান করে। আমাদের সৌর জগত যে ছায়াপথে অবস্থিত, তার নাম ‘মিল্কি ওয়ে’। এর সবচেয়ে কাছের একটি ছায়াপথ হচ্ছে অ্যান্ড্রোমিডা, যা ২২ লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত (এক আলোকবর্ষ = ৯.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার)।

বিগ ব্যাং এর এক সেকেন্ডের মধ্যেই মহাবিশ্ব সৃষ্টির পরমাণু গঠন হতে থাকলো। এরপর আরও দুই বিলিয়ন বছর সময় লাগলো প্রথম নক্ষত্র এবং ছায়াপথ তৈরি হতে।

সদ্যোজাত মহাবিশ্বের তাপমাত্রা ছিল এক লাখ বিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস। মূলত আলো এবং তাপের মাধ্যমে খুব দ্রুত সেটি সম্প্রসারিত হতে শুরু করলো। তখন সৃষ্টি হলো মহাকর্ষ বল।

বিগ ব্যাং এর প্রথম সেকেন্ডের একদম শুরুর মুহূর্তে সম্প্রসারণ অতি দ্রুত ঘটছিল, যা ওই সেকেন্ডেরই পরের দিকে কমে আসে। তখন অতিপারমাণবিক কণা তৈরি হয়, যা আরও বড় পারমাণবিক কণা তৈরি করে। এসব অতিপারমাণবিক কণা প্রোটন ও নিউট্রন তৈরি করে, যা থেকে সৃষ্টি হয় পরমাণু। এসবই ঘটে বিগ ব্যাং এর প্রথম এক সেকেন্ডে।

তারপর পেরিয়ে যায় একশ’ সেকেন্ড। তখন মহাবিশ্বের তাপমাত্রা কমে হয় এক বিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস। মহাশূন্যজুড়ে তখন ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন, যে তিন কণার সমন্বয়ে বিভিন্ন পরমাণু গঠিত। পরের ৩২ হাজার বছরে এসব প্রোটন ও নিউট্রন তেজস্ক্রিয়তার সঙ্গে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণু গঠন করে। মহাবিশ্বের প্রথম পরমাণু ছিল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম।

বিগ ব্যাং এর এক বিলিয়ন বছর পর সম্প্রসারিত হতে হতে মহাবিশ্ব স্বচ্ছ হয়ে আসে এবং তাপমাত্রা কমতে কমতে নেমে আসে চার হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ তাপমাত্রা পরমাণু গঠনের অনুকূল। মহাকর্ষ বলের সাহায্যে পরমাণুগুলো একসঙ্গে জড়ো হয়ে ক্ষুদ্র বৃত্তাকার পদার্থ গঠন করতে শুরু করে।

বিগ ব্যাং এর দুই বিলিয়ন বছর পর হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের গ্যাসীয় মেঘ ও ধূলিকণা থেকে প্রথম নক্ষত্র এবং ছায়াপথের আবির্ভাব হতে শুরু করে।

কিন্তু বিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগে কী হয়েছে, তা আমরা কীভাবে জানলাম?

নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রের দূরত্ব পর্যবেক্ষণ করে আমরা দেখতে পাই, স্থান এবং সময় আলাদা করা অসম্ভব। আমরা শুধু তখনই একটি বস্তু দেখতে পাই, যখন সেটি থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে। বস্তু যতো দূরে অবস্থান করে, সেটি থেকে আলো আমাদের কাছে এসে পৌঁছাতে ততো বেশি সময় লাগে।

যেমন, উজ্জ্বলতম নক্ষত্র ‘সিরিয়াস’ থেকে আলো এসে পৃথিবীতে পৌঁছাতে সময় লাগে আট বছর। অর্থাৎ আমরা পৃথিবী থেকে সিরিয়াসের যে আলো দেখতে পাই, সেটি আট বছরের পুরনো। আরও দূরের বস্তুর ক্ষেত্রে আমরা আরও পুরনো সময় দেখি।

‘ভার্গো ক্লাস্টার’ নামে একগুচ্ছ ছায়াপথ থেকে আলো এসে পৌঁছাতে সময় লাগে পাঁচ কোটি বছর। তারমানে আমরা এর যে আলো দেখতে পাই, তা মানবজাতির অস্তিত্বেরও আগের সময়ের।

নক্ষত্র বিভিন্ন ধরনের তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে, বিশেষ টেলিস্কোপ দিয়ে আমরা তা শনাক্ত করতে পারি এবং এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মহাবিশ্ব সম্পর্কে সামগ্রিক একটি ধারণা পেতে আমাদের সাহায্য করে।

বর্তমানে আমাদের জানা সবচেয়ে দূরের ছায়াপথটি ১৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, অর্থাৎ বিগ ব্যাং এর দুই বিলিয়ন বছর পরের সময়। তাত্ত্বিকভাবে, আমরা যদি আরও দূরে দেখতে পারি, তাহলে মহাবিশ্ব সৃষ্টির একেবারে শুরুতে কী হয়েছিল, একসময় সেটিও দেখতে পাওয়ার কথা।

=রিডার্স ডাইজেস্ট=

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০