সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বিকাশ একান্টের সমস্যা সমাধান ও ভুল নাম্বারে টাকা গেছে জানিয়ে সখ্যতা গড়ে তুলে একটি চক্র। পরে ধাপে ধাপে বিশ্বস্ততা অর্জন করে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো তারা। কয়েকটি ধাপে প্রতারণার এই কাজ করা হত। দীর্ঘদিন ধরে তদন্তের পরে এমন একটি চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন ডিএমপির গুলশান জোনের ডিসি মশিউর রহমান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রানা খান, লিটন, মো. নয়ন শেখ, টিটু মোল্ল্যা, সালমান মোল্লা, আকাশ, মোয়াজ্জেম হোসেন ও রহিম, তানজিল।
হাফিজ আক্তার বলেন, এই চক্রটি ৪টি ধাপে কাজ করতো। প্রথমে তারা বিকাশের দোকান থেকে এজেন্ট এর লেনদেনের খাতা থেকে গ্রাহকদের নম্বর সম্বলিত পাতার ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মূল হ্যাকারদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। দ্বিতীয় ধাপে হ্যাকাররা বিকাশের নম্বরে দোকানদার বা এজেন্ট সেজে বিভিন্ন অপারেটরের সিম থেকে কল দিয়ে বলে তার দোকান থেকে ভুলে টাকা চলে গেছে তার নাম্বার থেকে টাকা ফেরত পাঠাতে বলে। এরপর প্রতারক চক্র ওই গ্রাহককে জানাতো তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং বিকাশ অফিস থেকে তাকে কল দেওয়া হবে।
কলসেন্টারের ব্যক্তি গ্রাহকের নম্বরে একটি OTP (One Time Password) প্রেরণ করে একটি অংক করার জন্য বলে এবং অংক করার ছলে গ্রাহকের কাছ থেকে কৌশলে বিকাশ নম্বরের পিন জেনে নেয়। প্রতারণার কাজে তারা আইফোন ব্যবহার করতো। এভাবেই বিকাশ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র। ফরিদপুরের মধুখালী থেকে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের নয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, কিচ্ছুক্ষণ পর মূল হ্যাকার বিশেষ আ্যপ ব্যবহার করে বিকাশ অফিসের নাম করে বিকাশ সেন্টারের মূল নম্বর ক্লোন বানিয়ে বিকাশ গ্রাহককে ফোন দেয়। কলসেন্টারের ব্যক্তি গ্রাহকের নম্বরে একটি OTP (One Time Password) প্রেরণ করে সেখানের নাম্বার বলতে বলে। কথার কৌশলে নম্বরের পিন জেনে নেয়।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, হ্যাকার বিকাশ গ্রাহকের একাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর অ্যাকাউন্টের টাকা বিভিন্ন এজেন্ট পয়েন্টে পাঠিয়ে দিয়ে হ্যাকারদের মনোনীত ব্যক্তিদের টাকা ক্যাশ আউট করে নেয়। টাকা ক্যাশ আউট হলে হ্যাকাররা ফিল্ড পর্যায়ের তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের ১০ হাজারে এক হাজার টাকা কমিশন দিতেন।
এছাড়াও হ্যাকাররা বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রিকৃত বিকাশ পার্সোনাল অ্যাকাউন্টের প্রতিটি সিম তিন থেকে চার হাজার টাকায় কিনে নেয়। প্রতারকেরা এই কাজে প্রত্যকে আইফোন ব্যবহার করতো। প্রতারক সকলেই বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা পেশা হিসেবে এই প্রতারণার ব্যবসা করে আসছিল।