মোহাম্মদ খলিলুর রহমান
দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী গ্রামে বসবাস করে। তারা রান্নার কাজে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার করে । এতে করে বন উজাড় হচ্ছে। মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে পরিবেশ। ফলে এই বৃহত্তর জনগোষ্টির জ্বালানি সংকট ধীরে ধীরে তীব্র হচ্ছে। কাঠের ওপর নির্ভরতা কমাতে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে ইম্প্যাক্ট (ফেজ–৩) প্রকল্পের আওতায় বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি হচ্ছে। এতে সাশ্রয় হচ্ছে জ্বালানির। গরুর গোবর দিয়ে এখন অনেকেই লাকড়ি (মুটে) তৈরি করছে না। এতে সময়ের অপচয় এবং শ্রম আনেক বেশি যায়। যে কারণে গ্রামেগঞ্জে শহরে-বন্দরে, গড়ে ওঠা হাজার হাজার মুরগির ফার্মের মুরগির বিষ্ঠা ও গরুর গোবর দিয়ে তৈরি হচ্ছে বয়োগ্যাস। জ্বালানি সংকটের যুগে এটি একটি আশার আলো। এর কারণে যে কোনো মধ্যবিত্ত পরিবার উপার্জনের পাশাপাশি সাংসারিক জ্বালানি ব্যয় দারুন ভাবে সাশ্রয় করছে। মানুষের এক সময়ের অব্যবহৃত এসব উচ্ছিষ্ট দিয়েই এখন তৈরি হচ্ছে বয়োগ্যাস বা বিকল্প জ্বালানি।
এ জ্বালানি ব্যবহার করে বাজিতপুরের একটি পরিবার প্রতি মাসে প্রায় ২-৩ হাজার টাকা সাশ্রয় করছে। ক্রমান্বয়ে এ গ্যাসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করছে। এসব দেখে অনেকেই যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ প্লান্ট তৈরি করছে। ২০০৬ সাল থেকে সরকারিভাবে বাংলাদেশে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি শুরু হয়। বর্তামানে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ১৩ সহস্রাধিক প্লান্ট তৈরি করেছে।
গত ২২ মে ইমপ্যাক্ট (ফেজ–৩) প্রকল্প সহযোগিতায় বাজিতপুর দিলালপুর ইউনিয়নের বড়খাটোলা গ্রামে তৈরি করা হয়েছে বায়োগ্যাস প্লান্ট । এটা উদ্বোধন করে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম হুসাইন ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের সহকারী পরিচালক মো: কামাল উদ্দিন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ. মাহফুজুর রহমান, উপজেলা কৃষি অফিসার আশরাফুল আলম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ হুমায়ুন কবির, ইমপ্যাক্ট প্রকল্প ফেজ ৩ এর প্রোগ্রামার মশিউর রহমান,সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান ।
বায়োগ্যাস প্লান্ট এর গ্রাহক সালাহ উদ্দিন জানান, রান্নার খরচ জোগাতে ছোট একটি পরিবারের প্রতি মাসে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা গুনতে হয়। ফলে দিন দিন পরিবারের ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু বায়োগ্যাস প্লান্ট সে চিত্র বদলে দিয়েছে। ২ থেকে ৩টি গরু দিয়ে এ প্লান্ট তৈরিতে খরচ পড়ে ৫০-৬০ হাজার টাকা। সরকারিভাবে বাজিতপুর যুব উন্নয়ন অফিস ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার দিয়েছে যা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ২ থেকে ৩টি গরু থাকলেই এ প্লান্ট তৈরি করা যায়। গরুর গোবর ও মুরগির বিষ্টা ব্যবহার করে ব্যায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করা হচ্ছে। যা থেকে জ্বালানীর চাহিদা মিটছে। সেই সঙ্গে পরিবারের অর্ধেক খরচ কমিয়ে দিয়েছে। আর উচ্ছিষ্ট দিয়ে তৈরি হচ্ছে সবুজ সার। এই সার ব্যবহার করে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ছে। আমরা শতাধিক ব্যাক্তিকে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছি । তারা বাড়িতে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির কথা ভাবছেন।