Agaminews
Dr. Neem Hakim

পুনরায় চালু কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন নৌরুট, প্রথম দিনে ১,১০০ পর্যটক রওনা


দৈনিক বিজনেস ফাইল প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ১২:৪২ অপরাহ্ন / ০ Views
পুনরায় চালু কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন নৌরুট, প্রথম দিনে ১,১০০ পর্যটক রওনা

বিজনেস ফাইল ডেস্ক
দীর্ঘ নয় মাস বন্ধ থাকার পর ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ পুনরায় চলাচল শুরু করেছে। মৌসুমের প্রথম দিন সোমবার সকাল ৭টায় নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে ১,১০০ পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে এমভি বার আউলিয়া, এমভি কর্ণফুলী ও কেয়ারি সিন্দাবাদ।

জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ট্যুরিস্ট পুলিশের কঠোর তদারকিতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ন্ত্রণ এবং প্লাস্টিক ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সচেতনতার অংশ হিসেবে প্রথম দিন পর্যটকদের হাতে অ্যালুমিনিয়ামের পানির বোতল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান।

সকালে ঘাটে জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম, কক্সবাজার সদরের ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ পর্যটকদের স্বাগত জানিয়ে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের তদারকি করেছেন।

সরকার ঘোষিত ১২ দফা নির্দেশনা মেনে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকবে। প্রথম দিনের সব টিকিট আগেই বিক্রি হয়েছে।

‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (স্কোয়াব)-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, “মৌসুমের প্রথম যাত্রার সব প্রস্তুতি আগে থেকেই সম্পন্ন ছিল। প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ পরিবেশে যাত্রা শুরু করা গেছে। আগামী মৌসুমে কমপক্ষে চার মাস রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকলে জাহাজ মালিকরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।”

প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল ৭টায় জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছাড়বে এবং পরদিন দুপুর ৩টায় কক্সবাজারে ফিরে আসবে। টিকিট সংগ্রহ বাধ্যতামূলকভাবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে করতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে, যা ছাড়া টিকিট বৈধ গণ্য হবে না।

দীর্ঘ বিরতির পর পর্যটকদের আগমনে সেন্টমার্টিনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। তবে জেটিঘাটের নির্মাণকাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি আলী হায়দার জানিয়েছেন।

সেন্টমার্টিনের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, “গত এক দশক ধরে পর্যটনই স্থানীয়দের প্রধান জীবিকা। যেকোনো সংকট সত্ত্বেও পর্যটকদের আতিথেয়তায় ঘাটতি রাখা হবে না।”

দ্বীপের নাজুক পরিবেশ রক্ষায় ঘোষিত ১২ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এতে রয়েছে—রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো নিষেধ, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান বা বারবিকিউ নিষিদ্ধ, কেয়াবনে প্রবেশ ও কেয়াফল সংগ্রহ নিষিদ্ধ, কাছিম–পাখি–রাজকাঁকড়া–প্রবালসহ জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত করার কার্যক্রম বন্ধ, মোটরচালিত যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ এবং প্লাস্টিকমুক্ত উদ্যোগের অংশ হিসেবে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের ব্যবহার সীমিত করা। পরিবেশ অধিদপ্তর পর্যটকদের বিনামূল্যে অ্যালুমিনিয়াম বোতল সরবরাহ করছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা বলেন, “প্লাস্টিক দূষণ কমাতে অ্যালুমিনিয়াম বোতল ব্যবহারে কঠোরতা আনা হয়েছে। এটি সফল হলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।”

জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান বলেন, “সেন্টমার্টিন আমাদের জাতীয় সম্পদ। পরিবেশ রক্ষা ও দায়িত্বশীল পর্যটনের স্বার্থে নির্দেশনা মেনে চলা সবার দায়িত্ব।” প্রশাসন, জাহাজ মালিক ও সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত তদারকির মাধ্যমে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষা নিশ্চিত করা হবে।