ঢাকা   ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
দৈনিক বিজনেস ফাইল ই-পেপার (বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪) আদানির সঙ্গে চুক্তি পুনর্মূল্যায়নে কমিটি গঠনের নির্দেশ সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ৮ দিনের রিমান্ডে টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষ, নিহত ৪ আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ তুললেন ভারতীয় সাংবাদিক, জবাবে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাসে সড়ক ছাড়লেন সাদপন্থীরা আর্থিক খাতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা চুনারুঘাটে ফাঁকা গুলি ছুড়ে জনতার হাতে পিস্তলসহ আটক নীলফামারী-৩ আসনের সাবেক এমপি মেজর রানা হাসিনা রেজিমের ‘ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট’ এখনো বহাল: পর্দার আড়ালে বাণিজ্য সচিব! দৈনিক বিজনেস ফাইল ই-পেপার (মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪)

নড়াইলে পপুলার সার্জারী এন্ড নার্সিং হাসপাতালে চিকিৎসকের ভুলে নারীর মৃত্যুর অভিযোগ

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশিত : সোমবার, জুন ৩, ২০২৪
  • 144 শেয়ার
২০ মাস বয়সী প্রথম সন্তান কোলে আসমা

নড়াইল প্রতিনিধি
বাংলাদেশে প্রায়ই অচিকিৎসা নিয়ে ঘটে চলেছে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। কখনো সুন্নতে খাতনা করতে গিয়ে বাচ্চারা মারা যাচ্ছেন। কখনো ভুল চিকিৎসায় আরো অনেক তাজা প্রাণ হারিয়ে যাচ্ছে অকালে। এবার নড়াইলে ঘটলো এমন একটি অঘটন। হারিয়ে গেল আরও একটি তরতাজা প্রাণ। অচিকিৎসায় মারা গেল ২০ বছরের আসমা। তিনি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ি পুরুলিয়া ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের আলাল শেখের মেয়ে।

জানা গেছে প্রেগনেন্সি নিয়ে ২৮ মে (মঙ্গলবার) সকালে পপুলার সার্জারী এন্ড নার্সিংহাসপাতালে ভর্তি হন আসমা। সেখানে গাইনি ডাক্তার ছাড়াই সার্জিক্যাল ডাক্তার নুরুজ্জামান অপারেশন করেন। কিন্তু বেডে দেওয়ার আধাঘন্টা পর থেকে ব্লিডিং শুরু হয়। এরপর ডাক্তার আবারও অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। প্রায় দুই ঘন্টা সময় নিয়ে রোগীর অপারেশন করে। তারপর রোগীকে বেডে দেয়। তখনও রোগীর ব্লিডিং হচ্ছিলো। ডাক্তার বলছিলেন আপনারা রক্ত যোগাড় করেন। অনেক রক্ত লাগবে। কারণ রক্ত একদিক দিয়ে শরীরে যেভাবে ঢুকতেছিলো ঠিক সেভাবেই বেরিয়ে যাচ্ছিলো। এভাবে রাত কেটে সকাল হয়। তারপর রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে। রোগীর স্বজনরা যখন ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে যে, রোগীর কি কি সমস্যা হচ্ছে? সুস্থ মানুষকে অপারেশন করে কিভাবে এতো অসুস্থ করলেন? তখন ডাক্তার বলেন, আপনারা তো দেখছেন আমরা আপ্রান চেষ্টা করছি। আমরা সারারাত রোগীর পাশে থেকে ওষুধ দিচ্ছি। রোগীর আর কোন অপারেশন বা কোনো কিছু করার জায়গা নাই। যা যা করার সবকিছু করেছি।

রোগীর স্বজনরা ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলেন আমাদের না জানিয়ে কেন আপনারা দ্বিতীয়বার অপারেশন করলেন? ডাক্তার বলেন, রোগীর জরায়ু টিউমার ছিলো। টিউমারটা ছোট থাকায় তখন আমরা কাটি নাই। ভেবেছিলাম ছোট, থাকলে কোন সমস্যা হবেনা। কিন্তু এখন ব্লিডিং হচ্ছে দেখে অপারেশন করে টিউমারটা কেটে ফেলি।

স্বজনরা জানান, টিউমারটা দেখতে চাইলে তারা দেখাতে পারেনি। বরং জোর করে সরিয়ে দেয়। বলে ওটা আছে, পরে দেখতে পারবেন, এখন আপনারা সরেন।

সকালেও যখন রোগীর ব্লিডিং বন্ধ হয়না তখন রোগীর স্বজনরা বলে যে, আমরা এখান থেকে রোগীকে নিয়ে যাব। আমাদের রোগীকে ছেড়ে দেন। তখন তারা বলে যে, না না অনেক ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে আবার একটু সময় দেন। আজকের দিনটা সময় দেন, আমরা তো চেষ্টা করছি। রোগীর সবরকমের ওষুধ অপারেশন শেষ হয়ে গেছে। এখন এই মুহূর্তে রুগীকে এখান থেকে সরানো যাবেনা।

স্বজনরা আরও জানান ডাক্তার বলেন যে, আমি আসলে বুঝতে পারছিনা কেন রোগীর মাংসের ভিতর দিয়ে রক্ত আসছে। সারা শরীর দিয়ে রক্ত ছেড়ে দিচ্ছে।

একদিকে রক্ত বন্ধ হচ্ছেনা অন্যদিকে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। রোগীর এমন অবস্থায় বাড়ীর লোকের চাপে তারা রোগীকে ছেড়ে দেয়।

সেইদিনই অর্থাৎ ৩০ মে (বৃহস্পতিবার) ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসে। জরুরী বিভাগের ডাক্তার দেখে বলেন এই মুহূর্তে আইসিইউ ছাড়া এই রোগীর কোনো ট্রিটমেন্ট নাই। ঢাকা মেডিকেলে আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় তারা সাথে সাথে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, কাকরাইল শাখায় নিয়ে আসেন। এখানে আনতে আনুমানিক রাত নয়টা বাজে। রুগীকে তারা আইসিইউতে ভর্তি করে নেন। রোগীর অবস্থার এতো অবনতি হয় যে, সকালেই তাকে লাইফ সার্পোটে নিতে হয়। রোগীর অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছিলোনা। এখানকার ডাক্তারও কোনো আশা দিতে পারছিলোনা। ডাক্তারা বলেন এই রোগীর কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা। ১০ দিনও লাইফ সার্পোটে রাখা লাগতে পারে। এরপরও বাঁচবে কিনা আমরা বলতে পারছিনা।

রোগীর পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় তাদের জন্য এই ব্যায়ভার বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তারা সরকারী হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করে। ১লা জুন (শনিবার) রোগীকে মুগদা হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পর রোগীর পালস পাওয়া যাচ্ছিলোনা। মুগদা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ডাক্তার পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর বলেন রোগী আর বেঁচে নাই।

জানা গেছে মেয়েটির ২০ মাস বয়সের একটি ছেলে সন্তান আছে। এটি ছিলো তার দ্বিতীয় বাচ্চার সিজার। স্বজনদের হাহাকার এখন এই বাচ্চাদের কিভাবে লালন-পালন করবে? ডাক্তারের ভুলের কারণে ৩টি প্রাণ নষ্ট হয়ে গেল। এর দ্বায়ভার কে নিবে?

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০