রূপালী ইলিশের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা তথাকথিত ‘মনিপুরী ইলিশ’ মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ইলিশের অনন্যতা রক্ষা এবং ভেজাল রোধে সম্প্রতি দেশের সব জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
মৎস্য অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় বিশ্বের মোট ইলিশের ৮০ ভাগই বাংলাদেশের নদীতে পাওয়া যায়। দেশের পাশাপাশি বিশ্বেও বাংলাদেশের রূপালী ইলিশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে অসাধু চক্র ইলিশের মতোই ‘মনিপুরী ইলিশ’ পোনা বা ডিম এনে বিভিন্ন জেলায় উৎপাদন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ভারতের মনিপুরী রাজ্যে এ মাছের চাষ হয় বলে একে ‘মনিপুরী ইলিশ’ বা পেংবা বলা হয়।
সম্প্রতি ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য দপ্তর থেকে এ জাতের মাছের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয় বলে কর্মকর্তারা জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ‘মনিপুরী ইলিশের’ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয় অধিদপ্তর।
মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (মৎস্যচাষ) আজিজুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, তথাকথিত ‘মনিপুরী ইলিশ’ নামক একটি মাছের প্রজাতি অন্য দেশ থেকে অবৈধভাবে এদেশে প্রবেশ করেছে ও হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন করে চাষ হচ্ছে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য দপ্তর এরই মধ্যে একটি বেসরকারি হ্যাচারিকে অবৈধভাবে এ মাছের পোনা উৎপাদনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেছে।
অধিদপ্তরের চিঠিতে আরও বলা হয়, হ্যাচারি আইন, ২০১০ এর ৮ ও ৯ নম্বর ধারা মোতাবেক মহাপরিচালক বা তার কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুমতি ব্যতীত কোনো জীবিত মৎস্য, রেণু পোনা আমদানি এবং পোনা উৎপাদন করা যাবে না। তাছাড়া, মৎস্য সঙ্গনিরোধ আইন, ২০১৮ এর ৯ নম্বর ধারা মোতাবেক আমদানি অনুমতিপত্র ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো মৎস্য, মৎস্য পণ্য, উপকারী জীবাণু বা প্যাকিং দ্রব্যাদি আমদানি করা যাবে না।
এ অবস্থায় জেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের আওতাধীন কোনো হ্যাচারিতে এ মাছের পোনা উৎপাদন করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং কোনো পুকুরে বা খামারে এ মাছের চাষ যেন সম্প্রসারিত না হয় সে বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ইলিশের প্রাচুর্য, স্বাদ ও সহজলভ্যতার বাংলাদেশকে আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। এ বছর বিশ্বে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৮০ ভাগের বেশি বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়েছে। ইলিশের আকার ও স্বাদ অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক ভালো। ইলিশ রক্ষায় আহরণ নিষিদ্ধকালে জেলেদের সরকারি সহায়তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।