মহামারী করোনাভাইরাসে সৃষ্ট মহাদুর্যোগ, আর সামাজিক নানা সংকট-দুর্দশা থেকে উত্তরণে বর প্রার্থনায় শ্যামাপূজা করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মনের আসুরিক শক্তিকে বিনাশ করে সম্প্রীতি ও ভাতৃত্বের পৃথিবী গড়ে তুলতেও শ্যাম মায়ের কাছে প্রার্থনা করছেন তারা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শনিবার উদযাপন করলেন অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দীপাবলি বা দীপান্বিতা উৎসব। দেশজুড়ে নানা আয়োজনে এ উৎসব হয়। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
দীপাবলির আয়োজন উদ্বোধন করে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, অন্ধকার দূর করতে আমাদের উভয় দেশই আলোর কথা বলে। এটাকে দীপাবলির আলোতে অর্থাৎ বিজ্ঞান, জ্ঞান এবং বন্ধুত্বের আলোতে অন্ধকার দূরকরণের জন্য আক্ষরিক অর্থে নিতে পারি। আর সেটা হচ্ছে অবিশ্বাস, রোগশোক ও মহামারীর অন্ধকার।
তিনি বলেন, সৌহার্দ্য, আলো ও বন্ধুত্বের ওপর ভিত্তি করে চলায় বাংলাদেশ অসাধারণ দেশ। দীপাবলির স্পিরিটের মাধ্যমে বাংলাদেশের এ বিশেষত্ব আমাদের ধরে রাখা দরকার। সব ধর্ম ও গোষ্ঠীর মধ্যে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্ব বাংলাদেশকে ‘বিশেষায়িত করেছে’ উল্লেখ করে বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, এটাই বাংলাদেশের বড় শক্তি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। আলো ছড়িয়ে দিন, সৌহার্দ্য ছড়িয়ে দিন সবার মাঝে। কারণ এটাই বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের মূলনীতি।
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারেও লালমনিরহাটের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ দীপাবলি ও শ্রী শ্রী শ্যামা (কালী) পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে মঙ্গল প্রদীপের আলোয় আলোকিত করার জন্য দিনটিকে দীপাবলী, দিওয়ালী কিংবা দ্বিপান্বিতা হিসেবে পালন করছেন ভক্তরা।
সনাতন ধর্ম মতে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ‘ধনতেরস’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দীপাবলি উৎসবের সূচনা হয়। দ্বিতীয় দিনটিকে বলে ‘নরক চতুর্দশী’। তৃতীয় দিন অমাবস্যায় কালীপূজা হয়, এদিনই উদযাপিত হয় দীপাবলির মূল উৎসব। চতুর্থ দিন কার্তিক ‘শুক্লা প্রতিপদ’। এই দিন বৈষ্ণবরা গোবর্ধন পূজা করেন। পঞ্চম দিন ‘ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া’ বা ‘ভাইফোঁটা’, একে ‘যমদ্বিতীয়া’ও বলা হয়।
হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, দীপাবলির এই দিনে বিষ্ণুর বামন অবতার অসুর বলিকে বধ করেন। হিন্দুদের বিশ্বাস, ভালোবাসা ও জ্ঞানের শিখা প্রজ্বলিত করতে অসুর বলিকে পৃথিবীতে এসে অযুত অযুত প্রদীপ জ্বালানোর অনুমতি দেওয়া হয় দীপাবলীর এ দিনে।
তবে দীপান্বিতা উৎসবটি এসেছে মূলত রামায়ণ থেকে। রামায়ণ অনুসারেই দীপাবলি তিথির প্রচলন বলে অনেকে মনে করেন।
কথিত আছে, ত্রেতা যুগে দীপাবলি দিনে রামচন্দ্র রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন। রামের চৌদ্দ বছর পরের প্রত্যাবর্তনে সারা রাজ্যজুড়ে প্রদীপ জ্বালানো হয়, রাজ্যজুড়ে বাজি উৎসব করেন প্রজারা।
দীপান্বিতা তিথিতে হিন্দুরা ঘরে ঘরে মাটির প্রদীপ জ্বালেন। এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক। বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে লক্ষ্মী আসেন বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। অমঙ্গল বিতাড়নের জন্য আতসবাজিও পোড়ানো হয়।
দীপান্বিতার দুদিন পরেই ‘ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া’ বা ‘ভাইফোঁটা’, একে ‘যমদ্বিতীয়া’ও বলা হয়। হিন্দু পুরাণ মতে, এ দিনে নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তার বোন সুভদ্রার কাছে আসেন তখন সুভদ্রা তার কপালে ফোঁটা দিয়ে তাকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়। এদিন ভাইদের মঙ্গল কামনায় বোনেরা তাদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে থাকেন।