Agaminews
Dr. Neem Hakim

গভীর নিম্নচাপে উত্তাল সাগর, প্লাবিত হচ্ছে দেশের নিম্নাঞ্চল


দৈনিক বিজনেস ফাইল প্রকাশের সময় : জুলাই ২৬, ২০২৫, ১:১৭ অপরাহ্ন /
গভীর নিম্নচাপে উত্তাল সাগর, প্লাবিত হচ্ছে দেশের নিম্নাঞ্চল

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল সাগর। বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে উপকূলজুড়ে। থেমে থেমে বৃষ্টির পাশাপাশি বেড়েছে প্রায় সব নদ-নদীর পানি। জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের তুলনায় পানির উচ্চতা বাড়ায় প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল, ঝুঁকিতে রয়েছে বেড়িবাঁধের কয়েকটি পয়েন্ট।

আজ শনিবার (২৬ জুলাই) আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলামের সই করা বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গত মধ্যরাতে পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন ঝড়খণ্ডে অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত ও অস্বাভাবিক জোয়ার দেখা দিয়েছে। এতে বরিশালসহ বিভাগের অন্তত ১১টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে নিম্নাঞ্চলের বহু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা, বিষখালী ও হলতা নদীর পানি বেড়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৪ ফুট।

বৃষ্টির সঙ্গে গুমোট আবহাওয়ার কারণে আতঙ্কিত নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে বরগুনার পায়রা, বিষখালী ও বালেশ্বরে জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়ে এক থেকে তিন ফুট।

এতে নিম্নাঞ্চলের বসতভিটা ও ফসলি জমি তলিয়ে যায়। পানির চাপ বাড়ায় জেলার ৫ থেকে ৭টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। এদিকে, জোয়ারের পানিতে বরিশাল নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

পরে জোয়ারের পানি নেমে গেলেও সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। এতে সকাল থেকে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেককে। অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের বেশকিছু স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

এদিকে, নদীর পানি বাড়ায় ভোলা-ইলিশা রুটের লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) রিয়াদ হোসেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বরিশালের কীর্তনখোলা নদী বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে, ঝালকাঠির বিষখালী ১৬ সেন্টিমিটার, বরগুনার বেতাগীতে ৫২ সেন্টিমিটার, ভোলার দৌলতখানে ৮২ সেন্টিমিটার এবং তজুমদ্দিনে ১৬৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়াও পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে ২৯ সেন্টিমিটার, আমতলীতে ১৮ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটায় ৪৫ সেন্টিমিটার, কচা নদীর উমেদপুর পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার ও পিরোজপুরের বলেশ্বরে ৩২ সেন্টিমিটার ওপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

অস্বাভাবিক জোয়ার ও নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জনপদ ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে এবং নদীর পানিপ্রবাহ নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।