কুষ্টিয়া ব্যুরো
গত ১ ও ২ মার্চ কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী ও খোকসা উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ-এর উদ্যোগে ৭টি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এসব অনুষ্ঠানে সংস্কৃতির তীর্থস্থান খ্যাত এ অঞ্চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানসমূহে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলার সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক কর্মী, সমাজকর্মী এবং গণমাধ্যমের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এক. রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি
বিশ্ব বরেণ্য কবি সম্রাট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদের শিলাইদহ ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে ৭ই মার্চের ভাষণ কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় নন্দিত ইউপি চেয়ারম্যান গাজী হাসান তারেক বিপ্লব অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আমার এই ইউনিয়নে বিশ্বকবির স্মৃতি রক্ষার্থে এবং গগন হরকরা’র মতো খ্যাতিমান ব্যক্তির সম্মান রক্ষার্থে যেকোনো শুভ উদ্যোগে আমার প্রাণবন্ত উপস্থিতি থাকবে। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদকে সাথে নিয়ে আমি আমার ইউনিয়নে উল্লেখ্যযোগ্য কাজগুলো করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও কুমারখালী কালচারাল অ্যাম্বেসেডর অভি চৌধুরী বলেন, এ মাটি সংস্কৃতির উর্বর ভূমি এ মাটিতে বসেই রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি লিখে বিশ্বের বুকে প্রথম বাঙালি হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। আবার তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে নাইট পদক উপাধি ত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে একটা শ্রেণী এখনো ক্রমাগত অপপ্রচার করে যাচ্ছে। আমাদের প্রিয় জাতীয় কবি নজরুল ইসলামকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে যে সমস্ত কূটবাক্য প্রচার করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ এসব ব্যাপারে অত্যন্ত সোচ্চার। কৃতিমান এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা বা অপপ্রচার কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় পর্যায়ে অন্তত পরিচিত মুখ দেশজ বাউল সংগীতে অন্যতম খ্যাতিমান শিল্পী বাউল নাসির ওরফে নাসির উদ্দিন বিশ্বাস। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি এসএস রুশদী, কুমারখালী উপজেলা শাখার সদস্য সচিব আবু দাউদ রিপন, কাঙাল মজিবুর রহমান, কুমারখালী পৌরসভার আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন সুজন ও আমিরুল ইসলাম। স্থানীয় কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বকুল তলা শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি সাইদুল ইসলাম, বাউল শিল্পীসহ অনেকেই। অনুষ্ঠানে কণ্ঠশিল্পী এবং সংগঠক মুরাদ হাসান, বাউল নাসিরসহ ১০ জন শিল্পী গান পরিবেশন করেন। বক্তারা রবীন্দ্র কুঠিবাড়িকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌছে দিতে ওয়ার্ল্ড কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান।
দুই: কুমারখালী পৌরসভা
গত ২ মার্চ কুমারখালীর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ কুমারখালী পৌর শাখার উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন কুমারখালী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মেরিনা আক্তার মিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন মহামানব, তাঁর দূরদর্শিতা বাঙালি জাতিকে আলাদাভাবে জাগিয়ে তুলেছে। তিনি আমাদের সকলের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তি। তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে বিষ্ময়। তিনি বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অভি চৌধুরী বলেন, কুমারখালীতে প্রায় ৩৬ মনীষীর জন্মস্থান বা কর্মস্থান। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে মাত্র একজন/দুজন মনীষীর কারণে সেখানে উল্লেখযোগ্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের কুমারখালীকে যতদ্রæত সম্ভব হেরিটেজ বা পর্যটন এলাকা ঘোষণা করা হলে এ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান যেমন বাড়বে তেমনি বিদেশ এবং দেশ থেকে অনেক পর্যটক এসে এ এলাকাকে সমৃদ্ধ করবে। এতে যেমন শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে তেমনি ইতিহাস সংস্কৃতি নিয়ে যাদের জানার আগ্রহ সেই তৃষ্ণা মিটবে। এতে আমাদের এ মাটির উর্বরতা, গভীরতা এবং সাংস্কৃতির যে অর্জন তা মানুষের মধ্যে আরো আস্থার সঞ্চার করবে। রবীন্দ্রনাথ, লালন, বাঘাযতীন, গগন হরকরা, মীর মোশাররফ হোসেন, কাঙালি হরিণাথ, কবি আজিজুর রহমান, গীতিকার মাসুদ করিম, প্যারি সুন্দরী, বিচারপতি রাধা বিনোদ পাল, অক্ষয় কুমার মৈত্র, খোকসার ঐতিহাসিক কালীবাড়ী প্রমুখ বিশ্ব হেরিটেজ বা ইতিহাসেরই অংশ।
তিন. যদুবয়রা ইউনিয়ন
বিশ্ব বিপ্লবী ক্ষুদিরামের মামা বাড়ি খ্যাতি কুমারখালী যদুবয়রা ইউনিয়ন। ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ৭ নং যদুবয়রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, এ মাটি অত্যন্ত সংস্কৃতির স্পর্শধন্য। আমি এ সংগঠনের মধ্যদিয়ে এলাকায় সংষ্কৃতির ধারা আরো বেগমান এ বিশ্বাস করি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও কুমারখালী কালচারাল অ্যাম্বেসেডর অভি চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মো. মুকুল শেখ। স্থানীয় ২ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র সিটিজেন, সাংস্কৃতিক কর্মী এ অনুষ্ঠানে যোগদান।
চার. খোকসার ওসমানপুর ইউনিয়ন
১ মার্চ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ খোকসার ওসমানপুর ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আনিসুর রহমান লিটন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন খোকসার জাতীয় পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম বাবু। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও কুমারখালী কালচারাল অ্যাম্বেসেডর অভি চৌধুরী। স্থানীয় ২ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র সিটিজেন, সাংস্কৃতিক কর্মী এ অনুষ্ঠানে যোগদান।
পাঁচ. খোকসা উপজেলা
১ মার্চ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ খোকসা উপজেলা শাখার উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা ও কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের উপদেষ্টা ও খোকসা পরিবহন শ্রমিক লীগ সভাপতি আমিরুল ইসলাম বাবুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বাবুল আখতার। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ সারাদেশে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য একটি সংগঠন। এ সংগঠনের জন্য আমাদের অনেক অনেক ভালোবাসা থাকলো।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও কুমারখালী কালচারাল অ্যাম্বেসেডর অভি চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি এসএস রুশদী, কুমারখালী উপজেলা শাখার সদস্য সচিব আবু দাউদ রিপন, কাঙাল মজিবুর রহমান, কুমারখালী পৌরসভার আহŸায়ক এবং সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন সুজন, আমিরুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ প্রমুখ।
স্থানীয় ২ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র সিটিজেন, সাংস্কৃতিক কর্মী এ অনুষ্ঠানে যোগদান।
ছয়. বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেনের শয্যা পাশে
কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ সিনিয়র সহ-সভাপতি লালন একাডেমির সিনিয়র সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেনের শয্যা পাশে উপস্থিত হন সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অভি চৌধুরী। এ সময় তিনি নেতৃবৃন্দের কাছে তার জন্য দোয়া চান এবং সংগঠনকে আরো গতিশীল করার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।