ঢাকা   ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একজন নজরুল ইসলাম এবং তার দুর্নীতির সংজ্ঞা

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশিত : রবিবার, আগস্ট ১৮, ২০২৪
  • 547 শেয়ার

বিশেষ প্রতিনিধি
ঢাকার প্রাণকেন্দ্র তেজগাঁও থানাধীন নারী শিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠান তেজগাঁও মহিলা কলেজ যার প্রতিষ্ঠা হয় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর ১৯৭২ সালে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তেজগাঁও অঞ্চলে নারী শিক্ষার অতীব প্রয়োজনবোধ থেকেই তেজগাঁও মহিলা কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
জানা গেছে, বর্তমানে কলেজটি একটি ক্রন্তিকাল পার করছে এবং ভয়ের সংস্কৃতি ও দুর্নীতির নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে কলেজটিতে। ভয়ের সংস্কৃতি, দমবন্ধ পরিবেশ ও দুর্নীতির আখড়া বনানোর কারিগর বর্তমান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। অধ্যক্ষ নজরুল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের একান্ত আস্তাভাজন এবং কামালের দ্বারা নিয়োগকৃত। এলাকাবাসী এবং কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা কলেজটিকে নজরুলের পারিবারিক সমিতি বলেই ডাকে। এই বর্নচোরা নজরুল ঐতিহ্যবাহী কলেজটিতে ২০০০ সালে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে ২০০৩ সালে যুক্তিবিদ্যার প্রভাষক হিসেবে এমপিওভূক্ত হয়। এমপিওভূক্ত হওয়ার পর থেকেই নজরুল কলেজে শুরু করে শিক্ষক গ্রæপিং রাজনীতি। নজরুল ফার্মগেট এলাকায় ম্যাবস নামের কোচিং সেন্টার চালাত কিন্তু ২০১০ সালে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়ে ১২টি বিষয়ে অনার্স এবং ৩টি বিষয়ে মাস্টার্স চালু করার পর যখন কলেজের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়ায় তখন নজরুল কোচিং ব্যবসা বাদ দিয়ে কলেজে সময় দিতে শুরু করে। তদবির করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ বাগিয়ে নেয় নজরুল। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হওয়ার পরেই নজরুল শুরু করে অবৈধ ইনকামের ফন্দি-ফিকির। নজরুলের অবৈধ ইনকামের প্রধান খাত তৈরী হয় দ্বাদশ শ্রেনীর নির্বাচনী পরীক্ষার মাধ্যমে। পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে ফরম পূরণ করতে দেওয়ার সুযোগের বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা নিত নজরুল। নজরুল বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষায় অবাধে নকল করতে দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নিচ্ছে এবং এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য সে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের কলেজে চাকরি দিয়েছে এবং দিচ্ছে। নজরুলের অবৈধ আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এল এল বি পরীক্ষা। কলেজটিতে ১৪০০ পরীক্ষার্থী বসার আয়োজন আছে তার মধ্যে কলেজের বিভিন্ন তলার রুমগুলোতে তার নিয়োগ করা আত্মীয়-স্বজন এবং গুটিকয়েক শিক্ষকদের ডিউটি দিয়ে পরীক্ষার্থী প্রতি ১০০০/- টাকা করে নিয়ে অবাধে নকল করার সুযোগ করে দিচ্ছে নজরুল। কোন শিক্ষক অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হয়রানি করা এবং কখনো মন্ত্রীর লোক, ক্ষমতাসীন নেতাদের লোক ও উপরের নির্দেশ ইত্যাদি বলে পরীক্ষার্থীদের একই রুমে বসিয়ে বা করো কারো রোল নম্বর টোকেন হিসেবে দিয়ে অবাধে নকল করার সুযোগ করে দেয় নজরুল। নজরুল কলেজের অফিসের কয়েকটি এমপিও পদে নিজের আত্মীয় স্বজনকে নিয়োগ দিয়েছে কোন রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই। কলেজের কেউ প্রতিবাদ করলে মন্ত্রীর নির্দেশ বলে চুপ করিয়ে দেয় সবাইকে। সাবেক দুই বারের কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি আবু আহমেদকে অবৈধ আয়ের সামান্য অংশ দিয়ে কলেজকে সম্পূর্ণভাবে করায়ত্ব করে নিয়ে ভয়ের সংস্কৃতি কায়েম করেছে দুর্নীতির বরপুত্র নজরুল। আবু আহামেদের গাড়ির ড্রাইভারের বেতন কলেজ থেকে দেওয়া এমনকি কলেজে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে তাকে টাকা দিতে হতো। কলেজের বিভিন্ন ক্রয়সংক্রান্ত বিষয় এবং কলেজের মেয়েদের হোস্টেলের খরচ বাবদ টাকার রশিদ-ভাউচার টাকা ছাড়া সই করত না আবু আহমেদ। কিন্তু আবু আহমেদ যা পেত তার কয়েকগুণ বেশী টাকা হাতিয়ে নিত নজরুল এবং তাদের এইসব কাজের প্রধান সিপাহী নজরুলের এলাকার ছেলে কামরুল। কামরুলের বাবা নজরুলের অবৈধ টাকা দিয়ে তার এলাকায় জমি কেনার দালালি করে। বর্তমানে কামরুলকে কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে নজরুল কোন রকম নিয়মনীতি না মেনে এবং গভর্নিং বডিকে সম্পূর্ণভাবে পাশ কাটিয়ে। কামরুল এখন পরীক্ষা শাখা নিয়ন্ত্রন করছে যেটা নজরুলের অবৈধ আয়ের অন্যতম
প্রধান খাত। কামরুল একই সাথে হোস্টেলের দায়িত্বও পালন করছে নজরুলের হুকুমে এবং নজরুলের বাসায় নিয়মিত মাছ, মাংস সরবরাহ করছে কামরুল হোস্টেলের ছাত্রীদের টাকা তছরূপ করে। নজরুল তার শালীর মেয়েকে বিবিএতে পড়ার সময়ই কলেজের এমবিএ শ্রেণীর শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয় যেটা সকল শিক্ষকদের মধ্যে এক বিষ্ময়ের সৃষ্টি করে। কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রী ও অনার্সের ছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে সাথে ফলাফলেও খারাপ করছে কলেজ। নজরুল প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ করে মিরপুরে ফ্ল্যাট কিনেছে এবং প্রিন্সিপ্যাল হোল্ডিংস নামে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা শুরু করছে। পরীক্ষায় নকলের সুযোগ দিয়ে নেওয়া টাকা এবং তার রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার দালালি করার জন্য আতিক নামে একজন দালাল নিয়োগ করেছে নজরুল। নজরুল কলেজ প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে তার ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করছে এতে কলেজের স্বাভাবিক অফিসিয়াল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নজরুলের এই ব্যবসায়িক কাজের জন্য অনেক ভূঁইফোড় লোকজন কলেজে যাতায়ত করছে তাদের কেউ কেউ কলেজের ছাত্রীদের ইভটিচিং করার অভিযোগ এসেছে। কলেজের ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা নয়ছয় এবং আগের গভর্নিং বডির সভাপতি আবু আহমেদের সাথে যোগসাজোশের মাধ্যমে কলেজ থেকে নজরুল বিধিবহির্ভুতভাবে অনেক টাকা বেতন নেওয়ার বিষয়টি অডিটে উঠে আসে তাই অডিটকারীদের ম্যানেজ করার জন্য নজরুল মোটা অংকের টাকা অফার করে যেটা সে বিভিন্নভাবে কলেজের শিক্ষকদের কাছ থেকে নিতে পায়ঁতারা করছে যার কারণে অনেক শিক্ষকই মুখ খুলতে শুরু করছে। অডিট রিপোর্ট এখনো দেয়নি অধিদপ্তর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, যে শিক্ষকতার কাজটি অত্যন্ত সৃজনশীল কাজ কিন্তু নজরুল যে ভীতির পরিবেশ তৈরী করেছে কলেজে তাতে পাঠদান করতে মানসিক কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। যখন তখন যেকোন তুচ্ছ বিষয়ে শিক্ষকদের শোকজ নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সবাই এটাকে নজরুলের ভীতির পরিবেশ তৈরীর হাতিয়ার হিসেবে নাম দিয়েছে শোকজ রাজনীতি। কলেজের গাড়ী ২৪ ঘন্টাই ব্যবহার করছে নজরুল এমনকি তার পরিবারও বাড়ী যাওয়ার সময় কলেজের গাড়ী নিয়ে যায় বিভিন্ন ছুটিতে আর এদিকে কলেজের বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আনা ও পরীক্ষার খাতা আনা নেওয়ার জন্য কলেজের টাকায় সিএনজি অটো রিক্সা বা অন্য যানবাহন ব্যবহার করা হচ্ছে। কেউ এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে তাদেরকে বলা হয় মন্ত্রীর নির্দেশ বা সভাপতি চাইছে বা অমুক নেতা বলেছে। আবার আবু আহমেদকে কোনঠাসা করতে বলা হয়, সিনিয়র শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে মন্ত্রীর কাছে নালিশ করতে চাইছে এবং শিক্ষকদের শায়েস্তা করার জন্য আবু আহমেদকে দিয়ে খারাপ ব্যবহার করায় নজরুল। অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সবকিছু করছে নজরুল কিন্তু কোন ভাবে একে অন্যের সামনাসামনি কোন আলোচনা করতে দেয় না নজরুল। কোন ছাত্রী ভর্তি বাতিল করতে আসলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দোহায় দিয়ে তাদের কাছ থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করে নজরুল। কলেজের সব অফিসিয়াল কাজ অনলাইনে করার জন্য অধ্যয়ন নামের একটি সফটওয়ার কেনা হলেও তা কোন কাজেই ব্যবহার করছে না নজরুল বরং বিভিন্ন সময়ে কোন রকম রশিদ ছাড়াই ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে।
নজরুল এতটাই দানব হয়ে উঠছে যে কোন ছাত্রী জমে যাওয়া বকেয়া বেতন, ফি কমানো বা মওকুফ করতে গেলে তাদেরকে প্লেজার ট্রিপের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ করেছে কয়েকজন ছাত্রী। এমনকি তাদেরকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের কাছে মেয়েদের যাওয়ার জন্য প্ররোচনা দিতো। কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে এবং যে কোন সময় তারা নজরুলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের সবার বক্তব্য, হলো ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার কর্তৃক নিয়োগ লাভ করা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কামালের সহযোগী কিভাবে এখনো কলেজে ঢুকছে।

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০