বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে অবদান রাখছেন নারীরা। বাংলাদেশেও ব্যতিক্রম নয়। ফুটবল, ক্রিকেটসহ অনেক ইভেন্টে খেলছেন মেয়েরা। দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তারা। নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের নারীরা। আর এই নারী ক্রিকেটারদের জন্য আশার আলো জাগিয়ে তুলেছেন সাবেক ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথী।
ভবিষ্যৎ নারী ক্রিকেটারদের জন্য ‘উইমেন্স ড্রিমার একাডেমি’ নামে একটি ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তুলেছেন তিনি। এই একাডেমি ঘিরে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন এই নারী ক্রিকেটার। আগামী ২৬ অক্টোবর তার একাডেমির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বর্তমানে আড়াইশর বেশি ছাত্রী। কিন্তু আর্থিক অভাবের কারণে সকল শিক্ষার্থীদের নতুন জার্সি দিতে পারছে না বিথীর একাডেমি।
রংপুরের মেয়ে বিথী। রংপুরের নূরপুরে বেড়ে ওঠেন তিনি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাঠ সেরেছেন রংপুর থেকেই। ডিগ্রিতে পড়েছেন রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজে। ক্রিকেটের নেশায় মত্ত হন স্কুলে অধ্যয়নকালে। ইন্টার স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নেন তিনি। এর পরই তার সামনে এগিয়ে চলা শুরু হয়। ভর্তি হন ঢাকার পান্থকুঞ্জ ক্রিকেট একাডেমিতে।
২০১১ ও ২০১২ রংপুর জেলা দলে নাম লেখান বিথী। ২০১২ সালে তিনি পেশাদার ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। খেলেছেন ওরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাব, কলাবাগান, রায়েরবাজার দলের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে; কিন্তু ইনজুরির কবলে পড়ে ২০১৭ সালেই ইতি টানতে হয় তার ক্যারিয়ারের। সম্ভাবনা ছিল তার নিজেরই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার।
ক্রিকেটে তার পদচারণ ছিল দারুণ, ছিল এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়; কিন্তু নাকের ইনজুরির কারণে ছেড়ে দিতে হয় ক্রিকেট খেলা। খেলা ছেড়ে দিলেও ক্রিকেটকে ছাড়েননি বিথী। ক্রিকেটই তার ধ্যান-জ্ঞান। নারী ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথী শুরু করেন বাংলাদেশের প্রথম নারীদের জন্য ফ্রি ক্রিকেট একাডেমি।
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ১৫০ ছাত্রী নিয়ে যাত্রা করে বিথীর ‘উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি’। বিথী চান তার এ সংগঠনের মাধ্যমে বেরিয়ে আসুক নতুন দিনের সালমা, জাহানারা, রুমানা কিংবা সানজিদা। আমাদের দেশে অনেক মেয়েই ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী; কিন্তু আর্থিক কারণে একাডেমিতে গিয়ে খেলা শেখা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই মেধাবী ও অসচ্ছল মেয়েদের ক্রিকেট শেখাতে বিথীর এই উদ্যোগ। থাকবে প্রতিবন্ধীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা।
বিথী চান মেয়েরা পিছিয়ে না থাকুক। মেয়েরা বাল্যবিবাহের কবল থেকে বাঁচুক। মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটসহ সব খেলাধুলায়। সম্প্রতি আমাদের নারীরা এশিয়া কাপ জিতে এসেছে। খুব তাড়াতাড়ি তারা বিশ্বকাপ জিতে আসবে বলে বিথীর আশা। নারী ক্রিকেটারদের শুধু নারী না ভেবে তাদেরও ক্রিকেটার হিসেবে ভাবার দাবি জানান বিথী।
তিনি স্বপ্ন দেখেন, তার উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি নারীদের ক্রিকেট শেখার পাশাপাশি সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। তার স্বপ্ন- আগামী পাঁচ বছরে তার একাডেমি থেকে কমপক্ষে পাঁচজন জাতীয় দলের ক্রিকেটার গড়ে উঠবে। অনেক চড়াই-উতরাই পার করে বীথি দাঁড় করিয়েছেন উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি। বীথির এমন সাহসী পদক্ষেপের পর আস্তে আস্তে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকেই।