
বিজনেস ফাইল ডেস্ক:
মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যে অতিরিক্ত লবণের ব্যবহার এবং ওজন বৃদ্ধিসহ (স্থূলতা) নানা অসচেতনতায় দেশে উচ্চ রক্তচাপের রোগী বেড়েই চলেছে। এমনকি চলমান করোনা মহামারিতে যারা মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশেরই উচ্চ রক্তচাপ ছিল। বর্তমানে দেশের ৫ শতাংশ মানুষ অসংক্রামক এই রোগে ভুগছেন। ঝুঁকিতে রয়েছেন ২১ শতাংশ। তবে এসব রোগীর ৫০ শতাংশের বেশিই জানেন না তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। ফলে এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে শনিবার আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বক্তারা এমন আশংকা প্রকাশ করেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) সহায়তায় গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ও উচ্চ রক্তচাপ’ শীর্ষক এই ওয়েবিনার আয়োজন করে।
ভার্চুয়ালি এই সভায় অংশ নেন জিএইচএআই কান্ট্রি লিড মো. রুহুল কুদ্দুস, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্স ইনস্টিটিউটের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শামীম জোয়াদ্দার।
প্রবন্ধে বলা হয়, বিশ্বে প্রতি বছর ১ কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা যায়। যা সব সংক্রামক রোগে মোট মৃত্যুর চেয়েও বেশি। তবে উচ্চ রক্তচাপ থাকা ৫০ শতাংশের বেশিই রোগী জানেন না তাদের এই রোগ রয়েছে। এতে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
শামীম জোয়াদ্দার বলেন, দেশে প্রতি পাঁচজনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। আর ২১ শতাংশ জনগোষ্ঠী উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই রোগ অসংক্রামক রোগের প্রকোপ ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে। এটি নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৮০টি উপজেলায় বিনামূল্যে এই ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী বছরের মধ্যে ২০০ উপজেলায় এবং ২০২৪ সালে ৪০০ উপজেলায় এই বিনামূল্যে ওষুধ সেবাদানের আওতায় আনা হবে। প্রথম পর্যায়ে উপজেলায় দেওয়া হলেও আগামীতে প্রান্তিক পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ওষুধ সরবরাহ করা হবে।
তবে অধিকাংশ মানুষ ১০ থেকে ১৫ গ্রামের বেশি লবণ খাচ্ছে। নিজ বাড়ি বা বাইরের খাবারের মাধ্যমে শরীরে ঢুকছে এই মাত্রাতিরিক্ত লবণ। ফলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ছে। অতিরিক্ত লবণের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন আনতে হবে। তাতে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে আসবে।
প্রজ্ঞার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার বলেন, আগে শুধু এই রোগ বয়স্ক মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হলেও সম্প্রতি শিশুদের মধ্যেও এই রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। তাই এখন থেকে এটি প্রতিরোধে জোর দিতে হবে। ১৮ বছর বয়সীদের নিয়মিত রক্তচাপ মাপতে হবে। ছয় মাস কিংবা বছরে একবার মাপতে হবে।
জিএইচএআই’র কান্ট্রি লিডার মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, রোগী শনাক্তে প্রথমে স্ক্রিনিং এবং শনাক্তদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। আর যাদের নেই, কোন ধরনের জীবনাচার করলে এটি থেকে রেহাই মিলবে, সে বিষয়ে সচেতন করতে হবে।
রুহুল কুদ্দুস বলেন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যেমন- খাদ্যের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ (সোডিয়াম) গ্রহণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার, তামাক ও অ্যালকোহল সেবন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, অধিকাংশ সময় উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ এবং উপসর্গ থাকে না। অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপে ভোগা অনেক রোগী জানেই না যে, তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এ জন্য উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সকালের দিকে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত ছন্দ, দৃষ্টিতে পরিবর্তন এবং কানে গুঞ্জন অনুভূতি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অত্যধিক উচ্চ রক্তচাপ ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, বমি, বিভ্রান্তি, উদ্বেগ, বুকে ব্যথা এবং পেশি কম্পনের কারণ হতে পারে।