সকল কর্মদিবসে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হোক

প্রকাশিত: ২:০১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১

এস এম জাকির হোসেন :
আমার একটা প্রস্তাব আছে। সেটি হলো প্রতিটি অফিসে (সে সরকারি/বেসরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত যাই হোক) সকল কর্মদিবসে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে সকাল ৯.০০ টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হোক। পতাকা উত্তোলনের পর সকলে সমস্বরে শপথ পাঠ করবে অতঃপর অফিসে যে যার টেবিলে বা মাঠে যেখানে হোক কাজে যোগ দেবে। এ বিষয়ে আমি একটি প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে মাননীয় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর জমা প্রদান করেছি। প্রস্তাবটি এখানে সংযুক্ত করলাম। প্রস্তাবটি নিয়ে সকলকে ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করছি। আমি গত ২৫ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে প্রথম এ বিষয়ে আমার ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব তৈরীতে আমার এক বছরেরও বেশি সময় লেগে গেল। অবশেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে আমি প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি । আপনাদের জন্য আমি প্রবন্ধটি পোস্ট দিলাম। আপনারা যদি এই প্রস্তাবে একমত হন তাহলে আহ্বান জানাই “আসুন শপথ করি- প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই” এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য কণ্ঠ উচ্চকিত করি।
ইতোপূর্বে এ বিষয়ে আমি যে পোস্ট দিয়েছিলাম তাতে প্রস্তাবনাটি ফটোশপ করে পোস্ট করেছিলাম যা পড়ার জন্য সুবিধাজনক ছিল না এজন্য আবার ওয়ার্ডে দিলাম।
“আসুন শপথ করি, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই”
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। দেশকে ভালোবাসার এমন স্পষ্ট উচ্চারণ যেকোন দেশের জাতীয় সংগীতে বিরল। দশ পঙক্তির এই জাতীয় সংগীতের প্রতিটি শব্দে শব্দে ভালোবাসা, আবেগ, মুগ্ধতা আর শ্রদ্ধা মেশানো। এমন অপরূপ একটি কবিতা আমাদের জাতীয় সংগীত। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যখন এই জাতীয় সংগীত বাজানো হয় তখন আপনাআপনি আমাদের ভিতর থেকে উচ্চারিত হয় এর শব্দ, হৃদয়ে বেজে ওঠে সুর। অবলীলায় আমরাও গেয়ে উঠি “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি—-“। কত কষ্টে পাওয়া আমাদের এই জাতীয় সংগীত-মাত্র দশটি চরণ। অথচ এই দশটি চরণ নিজের মত করে গাওয়ার জন্য আমাদের কত ত্যাগ, কত পরিশ্রম, কত রক্ত, কত শহীদ আর হারানো কত মা-বোনের সম্মান। এই সঙ্গীতের জন্য কত ৫২, ৬৬, ৬৯, ৭১ আর ফেব্রুয়ারি, মার্চ, ডিসেম্বর।
আমাদের দেশের জাতীয় সংগীত বিধিমালা (১৯৭৮ এর ৫ বিধি) অনুযায়ী বিভিন্ন কর্মসূচিতে জাতীয় সংগীত কখন কিভাবে বাজানো হবে তা নির্ধারণ করা আছে। এই জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে দেশ প্রেমে উদ্ধুদ্ধ করার প্রচেষ্টা হিসেবে সকল স্কুলে (প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত) জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দিনের কাজ শুরু করার বিধান করা হয়েছে। এতে শিশুর কোমল মনে জাতীয় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সৃষ্টি হয়, যা ক্রমান্বয়ে দেশের প্রতি ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়। স্কুলে জাতীয় সংগীত গাওয়ার পাশাপাশি শপথ পাঠ আরো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিদিন শপথ পাঠের মাধ্যমে দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ, মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, সততা, নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো স্কুলের গন্ডি পার হওয়ার পর আর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সংগীতও গাওয়া হয়না এবং শপথও পাঠ করা হয় না। আর এজন্য জাতীয় সংগীত গাওয়ার আনন্দ থেকেই শুধু বঞ্চিত হই তা নয়- সম্ভবত আমরা দেশের প্রতি আমাদের প্রতিজ্ঞাও ধীরে ধীরে ভুলতে শুরু করি। স্কুল জীবনে প্রতিদিন যে প্রতিজ্ঞা আমাদের দেশ গড়ার মনোবল তৈরি করতো, দীর্ঘদিনের অ-ব্যবহারে তাতে মরিচা পড়তে থাকে। আমরা ঝুকে পড়তে থাকি অনিয়ম, দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা, অপচয়, অসততার দিকে। এই প্রবণতা থেকে মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। আমার মতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জাতীয় সংগীতকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং প্রতিদিন শপথ পাঠের মাধ্যমে দৈনন্দিন কার্যক্রম শুরু করা।
অনেক বাধা বিঘ্নতার মধ্যেও দেশ আজ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শামিল। এই যাত্রা আরও বেগবান হতে পারে যদি দেশের সকল স্তরে যথাযথ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের শুরুতেই যে বিশেষ অঙ্গীকারসমূহ ব্যক্ত করা হয়েছে এর মধ্যে বিশেষভাবে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে। এইসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য দরকার প্রতিটি নাগরিকের ইশতেহার বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। এই জাতিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে পথের দিশা দেখিয়ে যাচ্ছেন তাঁর এই যাত্রায় শামিল হয়ে অনুন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য প্রয়োজন বিস্মৃতপ্রায় সেই প্রতিজ্ঞাকে নতুন ভাবে স্মরণ করার, নতুন ভাবে ইশতেহারের মন্ত্রে দীক্ষিত করার। এ জন্য আমার প্রস্তাব হলো আসুন আমরাও প্রতিদিন এগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উচ্চারণ করি “তীর ভাঙ্গা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিব রে” বলে সকলে একসাথে বৈঠা ধরি বাংলাদেশ নামক এই নৌকাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমাদের প্রতিটি দিন শুরু হোক প্রথম দিন হিসেবে নতুন উদ্দীপনায়, নতুন উত্তেজনায়। আর প্রতিদিন এভাবে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য, নিজেকে উদ্দীপিত করার জন্য প্রয়োজন প্রতিদিন নতুনভাবে দীক্ষা গ্রহণের। প্রয়োজন প্রতিদিন নতুন ভাবে শপথ উচ্চারণের। এই কাজটি সহজেই করা যেতে পারে যদি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে স্কুল গুলোর মত জাতীয় সংগীত উচ্চারণ ও শপথ পাঠের মাধ্যমে প্রতিটি কর্মদিবসের সূচনা করা যায়।
লক্ষণীয় হলো চাকুরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে উজ্জীবিত করার জন্য তেমন কোন মোটিভেশনের বা প্রেষণার ব্যবস্থা নেই। সরকারি/আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানসমুহের কর্মীদের দায়িত্বে অবহেলার জন্য রয়েছে কিছু শাস্তির বিধান যেমন: শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, আচরণ বিধিমালা, নিয়মিত উপস্থিতি অধ্যাদেশ ইত্যাদি। এই সকল আইনের মূল কথা হলো ভয় বা শাস্তি প্রদান। সাম্প্রতিককালে ভালো কাজের জন্য কিছু কিছু পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হলেও এখনও পর্যন্ত কর্মচারিদের কাজ করানোর জন্য আসল হাতিয়ার হলো শাস্তি প্রদানের ভয়। আর শাস্তি প্রদানের ভয় দেখিয়ে কারোও কাছ থেকে সর্বোত্তম সেবা আশা করা যায় না। সর্বোত্তম সেবা কেবল মাত্র দিতে পারে একজন উজ্জীবিত মানুষ। মানুষকে উজ্জীবিত করা সম্ভব হলে তাদের দ্বারা কি করা সম্ভব তা করে দেখিয়েছেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর আহবানে বাঙালী জাতির বীর সন্তানেরা কোন ব্যক্তিগত লাভের আশা না করেই ”জয় বাংলা” বলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ”যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে” আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। তাই আসুন, আমি প্রস্তাব করছি, আবার আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই- দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ, মাদক নির্মুল করে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। আমাদের প্রতিটি কর্মদিবস শুরু হোক জাতীয় সংগীত ও শপথ পাঠের মাধ্যমে।
আমাদের দেশে কিছু সাংবিধানিক পদ আর স্থানীয় সরকারের পদ রয়েছে যেখানে নিয়োগ /নির্বাচিত হলে দায়িত্ব পালনের শপথ করতে হয় যেমন- মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী/ প্রতিমন্ত্রী/ উপ-মন্ত্রী/সংসদ সদস্য, পিএসসির সদস্য, উচ্চ আদালতের বিচারকবৃন্দ, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধি যেমন, মেয়র /কাউন্সিলর /উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান/ সদস্য ইত্যাদি। কিন্তু এর বাইরে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মবিভাগে বিপুল সংখ্যক যে পদ রয়েছে যেখানে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে তাঁকে কোন দায়িত্ব পালনের শপথ করতে হয় না, কোন প্রতিশ্রুতি জ্ঞাপন করতে হয় না বা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হয় না। আর প্রতিশ্রুতি বা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হয় না বলে প্রতিশ্রুতি পূরণেরও কোন তাগাদা থাকে না। প্রতিজ্ঞাহীন মানুষের কাছে থেকে খুব বেশি কিছু আশা করা যায় না। আর এ জন্য আমার প্রস্তাব হলো-আসুন প্রতিদিন জাতীয় সংগীত পাঠ করে উজ্জীবিত হই এবং প্রতিদিন শপথ পাঠের মাধ্যমে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এখন সময় এসেছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার। যে মহান নেতার আহবানে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি সেই মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই দেশ গড়ার, দারিদ্রের মূলোৎপাটনের আর দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ ও মাদক নির্মুলের। এ সকল বিবেচনায় আমার আহবান হলো-আসুন, যে জাতীয় সংগীতকে আমরা স্কুলজীবন শেষ করার সাথে সাথে হারিয়ে ফেলেছি, যা এখন পূর্ণ বয়সে কালে ভদ্রে কিছু অনুষ্ঠানে শুনে থাকি, তা আবার প্রতিদিন গাইতে শুরু করি। স্কুল জীবন সমাপ্তির সাথে সাথে যে শপথ আমরা ভুলে গেছি আসুন প্রতিদিন শপথ পাঠের মাধ্যমে আমরা আবার দিনগুলো শুরু করি। আমাদের প্রতিটি দিন হোক জাতীয় সংগীতের আবেগে উদ্বেলিত, শপথের দৃপ্ততায় ভাস্কর।
এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার জন্য আমার প্রস্তাব হলো:
ক. অন্যান্য সকল আনুষ্ঠানিকতা ঠিক রেখে আমাদের সকল অনুষ্ঠান জাতীয় সঙ্গীত ও শপথ পাঠ দিয়ে শুরু করার বিধান করা হোক;
খ. সকল সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মদিবসগুলোতে অফিস শুরুর আগে জাতীয় সংগীত বাজানো হোক ও শপথ পাঠ করা হোক;
গ. সকল প্রতিষ্ঠানের/দপ্তরের প্রধান তাঁর অফিসের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে শপথ নিবেন।
এজন্য যা করা যেতে পারে তা হলো:
১. যেখানে একটি ক্যাম্পাসে অনেক অফিস যেমন সচিবালয়, উপজেলা সদর দপ্তর, সেনানিবাস-সেখানে অফিস সময়ের শুরুতেই কেন্দ্রীয়ভাবে এক স্থানে জাতীয় সংগীত বাজবে এবং ওই চত্বরের সকলে যে যেখানে আছে সেখানেই দাঁড়িয়ে এর সাথে কন্ঠ মেলাবে। কেন্দ্রীয়ভাবে একস্থান থেকে সংগীত বাজানো হবে এবং অন্যান্য স্থানে লাউড স্পিকারের মাধ্যমে বাজতে থাকবে। জাতীয় সংগীত সমাপ্তির পর ওই চত্বরে অবস্থিত অফিসগুলোর মধ্যে যে কোন একটি দপ্তরের প্রধান শপথ পাঠ করবেন যার সঙ্গে অন্যরা কন্ঠ মিলাবে। এজন্য সকলকে একস্থানে মিলিত হওয়ার প্রয়োজন নাই। জাতীয় সংগীতের সাথে সাথে জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করা হবে। (তবে যারা নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার পর কোন আইন/বিধি বিধানের অধীনে শপথ পাঠ করে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন তাদের আর প্রতিদিন এই শপথ পাঠের প্রয়োজন নেই।)
২. পৃথক পৃথক স্থানে অবস্থিত অফিসসমূহে পৃথক পৃথক ভাবে একই সময়ে এটি পালন করা হবে।
৩. বর্তমানে প্রচলিত স্কুল কলেজের ন্যায় সকল স্কুল , কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, আদালত, ফৌজদারী, সকল স্থানে পৃথক পৃথক ভাবে তাদের প্রতিষ্ঠানে দিনের কার্যক্রম শুরুর পূর্বেই জাতীয় সংগীত ও শপথ পাঠ চলবে।
৪. যে প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম যে সময়ে শুরু হয় সেই প্রতিষ্ঠানে সে সময়েই অনুষ্ঠানটি করা যেতে পারে। এজন্য অফিস সময় পুনঃনর্ধিারণ বা দৈনন্দিন সূচির কোন পরিবর্তন করার প্রয়োজন হবে না।
৫. এখন যেমন বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান শুরু হয় জাতীয় সংগীত বিধিমালা অনুযায়ী কেবলমাত্র প্রথম দুই লাইনের বাদ্য বাজিয়ে, এ নিয়মটি পরিবর্তন করে সকল অনুষ্ঠান শুরু হতে পারে পরিপূর্ণ জাতীয় সংগীত উচ্চারণের মাধ্যমে।
যতক্ষণ পর্যন্ত জাতীয় সংগীত পরিপূর্ণ রূপে উচ্চারিত হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত এর অর্ন্তনিহিত যে শক্তি তা সকলের মাঝে সঞ্চারিত হবে না। আর শপথ উচ্চারণ স্বয়ংক্রিয় ভাবেই সকলকে দায়িত্ব পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে । একই ভাষায় একই ছন্দে শপথের প্রতিটি উচ্চারিত শব্দ সমগ্র জাতিকে সকল বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে লক্ষ্য অর্জনে একত্রিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা দেয়। সুতরাং সকল অনুষ্ঠান শুরু হোক পরিপূর্ণ জাতীয় সংগীত সম্পূর্ণভাবে উচ্চারণ ও শপথ পাঠের মাধ্যমে। আমাদের জাতীয় সংগীত হোক আমাদের প্রেরণা, শপথ হোক আমাদের শক্তি।
‘শতবর্ষের জাগরণী উপহার’
এই অনুষ্ঠানটির জন্য আলাদা কোন সময়ের প্রয়োজন হবে না, আলাদা কোন ব্যয়ের প্রয়োজন হবে না, আলাদা কোন জনবলের প্রয়োজন হবে না। শুধু একটি পৃথক চর্চা শুরু হবে মাত্র। প্রয়োজন হবে কেবল সামান্য কিছু সংশোধনী আদেশ জারীর। যেমন: ১। জাতীয় সংগীত বিধিমালা, ১৯৭৮ এর বিধি-২(এ) এর সংশোধন ২। শপথ আইন, ১৮৭৩ এর ধারা ৩ ও ৫ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন ইত্যাদি।
এই চর্চার মাধ্যমে দিনের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে দৈনন্দিন কার্যক্রম বা অফিস শুরুর পূর্বেই দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত একটি শপথ এর উচ্চারণকারীকে সারাদিনের জন্য এমন একটি শক্তি যোগাতে থাকবে যা তার সমস্ত অবসাদ প্রতি মুহূর্তে মুছে দেবে আর তাকে সারাটা দিন সজীব করে রাখবে। শপথের বাণী সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারীকে এই কথাটি ভাবতে শেখাবে যে উভয়ই একটি উন্মাতাল ঢেউ এর সাগর পাড়ি দেবার সহযোদ্ধা । তাঁরা একই পথের পথিক, উভয়ে উভয়ের সহযোগী । শপথের দৃঢ় উচ্চারণ ভাবতে শেখাবে আমরা সবাই একটি নৌকার নবীন মাঝি – যারা হাল ধরেছি শক্ত করে । পাড়ি দিব উত্তুঙ্গ সমুদ্র – আর গড়বো মাদক মুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত উন্নত, সমৃদ্ধ, শান্তিময় বাংলাদেশ। ২০২০ সালে মুজিববর্ষ উদযাপনের পটভূমিতে প্রতিটি কর্মস্থলে প্রতিদিন জাতীয় সংগীত ও শপথ উচ্চারণ হোক জাতির জন্য একটি মুজিবীয় শতবর্ষ উদযাপন উপহার।
শপথ
১। আমি শপথ করছি যে, ২। মানুষের সেবায় ৩। সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখব ৪। দেশের আইন কানুন মেনে চলব ৫। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ ও মাদক নির্মূল করব ৬। হে আল্লাহ (নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী সম্ভাষণ) ৭। আমাকে শক্তি দিন ৮। ———————————-বিভাগীয় শ্লোগান এবং ৯। উন্নত ও শান্তিময় বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।

জয় বাংলা।

লেখক: অতিরিক্ত সচিব, জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়
ইমেইল : smzh50@gmail.com