শিকলে বাঁধা রুমার জীবন : অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না

প্রকাশিত: ১০:৫৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০২১

মোঃ আইয়ুব হোসেন পক্ষী, শার্শা উপজেলা প্রতিনিধি:
হেসে খেলে বেড়ানো স্বামীর সংসারে সব কাজ করা তরুণীটি এক মাস ধরে শিকলে বেঁধে রেখেছেন অসহায় বাবা-মা। কোনোমতে নুন-ভাতে কাটে তাঁদের জীবন। দরিদ্রতার কারণে সুষ্ঠু চিকিৎসা করাতে না পারায় অসুস্থ জীবনযাপন করছে তরুণীটি। মেয়ের চিকিৎসার চিন্তা পরিবারের কাছে বিলাসিতার সমান।
যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের শুড়া গ্রামে বিনা চিকিৎসায় রুমানা আক্তার রুমা (২০) এখন মানসিক রোগী হয়ে শিকলে বন্দি। অভাব-অনটনে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তার পরিবার ও স্বজনরা। এক ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে রুমাকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাবা মনতাজ আলীসহ পরিবারের লোকজন। চিকিৎসার অভাবে শিকলে বাঁধা জীবন চলছে মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণী রুমানা আক্তারের। চাঁদা তুলে মাথার ডাক্তার দেখানো হলেও ডাক্তাররা বলেছেন মানসিক ডাক্তার দেখাতে খুলনায় বা পাবনায়। অর্থ সংকটের কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। অসহায় এ রুমা উপজেলার লক্ষনপুর ইউনিয়নের শুড়া গ্রামের দিনমজুর মনতাজ আলীর মেয়ে।
রুমা বাবা মনতাজ আলী জানান, ২০২০ সালের মার্চের দিকে শার্শায় মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়। স্বামীর সংসার ভালো ভাবেই করছিলো। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর সংসার করার পর একমাস আগে হঠাৎ মেয়ের মাথায় সমস্যা দেখা দিলে তার স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকজন এসে মেয়েকে রেখে যায়। বলে যায়, মেয়ে পাগল হয়ে গেছে। ভাল ভাবে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হলে আবার আমরা নিয়ে যাবো। এরপর তারা আর কোন খোজ খবরও নেয়নি। তারপর থেকে তাঁর মানসিক সমস্যাও আরো বেড়ে যায়। এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। তার একার আয় দিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ চলে না। সংসারে অভাব-অনাটন লেগেই আছে। অর্থের অভাবে মেয়ের চিকিৎসা করতে পারছেন না তিনি। তাদের কোনো জায়গা জমি নেই। পরের জমিতে কোনো ভাবে মাটির একটা ঘর করে বসবাস করেন। তিনি নিজেও প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাঝে মধ্যে শরীর ভালো থাকলে দিনমজুরি করে চাল-ডাল কেনেন।
তিনি আরো জানান, তার মেয়ের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে আবেদন-নিবেদন করছেন। তাতে যে সহযোগিতা পেয়েছেন তা দিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করাতে অসম্ভব হয়ে তিনি ব্যর্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের ইচ্ছা থাকার পরও টাকার অভাবে মেয়েকে ভালা কোনো ডাক্তার দেখাতে পারছি না বলে জানান তিনি।
রুমা মা সোনাভান বিবি বলেন, আমরা একটি মাটির ঘরে পরিবারের ৫ জন বসবাস করি। আমি সারাদিন লোকের বাড়ি কাজ করে কোন রকম সংসার চালাই। স্বামী দিন মজুরের কাজ করে। প্রায় সময় অসুস্থ্য থাকে। কাজ করতেও পারে না। তিনবেলা ঠিকমত খাওয়াই হয় না, তারপর মেয়ের চিকিৎসা কি দিয়ে করবো। আমার মেয়ের যন্ত্রণায় আমার শান্তি নেই। গালিগালাজ করে, ইট মেরে ঘরের টালি ভেঙ্গে ফেলছে। অতিষ্ঠ করে ফেলেছে আমাদের। আমি এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। মেয়েটার ভালো করে চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো সুস্থ হতো। কিন্তু টাকা-পয়সার জন্য ভালো চিকিৎসা করাতে পারছি না।
মামা অলিয়ার রহমান জানান, এমনিতে মাটির ঘরে চালে টালি দেওয়া। সেই টালিতে ইট মেরে ভেঙ্গে দিচ্ছে। অপরিচিত লোকজন দেখলে ইট মারছে। আবার ছোট বাচ্চাদের কোলে নিয়ে আদর করছে। কোনো উপায় না পেয়ে তখন থেকে মেয়েটিকে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুমিয়ে রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা বাজার থেকে কিছু টাকা উঠিয়ে যশোর ২৫০ শষ্যা জেনারেলহাসপাতালে মাথার ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। তারা বলেছেন মানসিক ডাক্তার দেখাতে খুলনা বা পাবনাতে। যে টাকা উঠানো হয়েছে ওই টাকা দিয়ে তো কিছুই হয়নি। এ এলাকাটি গরিব, তাই মানুষও টাকা দিতে পারছে না। আমরা চাই সরকারিভাবে মেয়েটির চিকিৎসা করানো হোক। সঠিক চিকিৎসা পেলে ভালো হতে পারে রুমা। ফিরে আসতে পারে স্বাভাবিক জীবনে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: মোমিনুর রমান জানান, মনতাজ আলীর পরিবার অসহায় এটা আমার জানা আছে। কিন্তু তার মেয়ে রুমার বিষয়টি সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পারি। আমি বিষয়টি দেখবো এবং তার চিকিৎসার জন্য সাধ্যমত সহযোগিতা করবো।
ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারা খাতুন বলেন, সংবাদটি সাংবাদিকের মাধ্যমে থেকে জানতে পারলাম । আমি খোঁজ নিয়ে তাকে এবং তার পরিবারকে সহযোগিতা করবো। সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিত্তশালী ও সরকারি সহায়তার দাবি পরিবারের। মেয়ের চিকিৎসার জন্য সকলের কাছে সহযোগিতার কামনা করছে। সাহায্য পাঠাতে বিকাশ নাম্বার-০১৮৬০৯৯৫২৪১। (মেয়ের মামা অলিয়ার রহমান)।