মনোহরদী সরকারি কলেজ অধ্যক্ষের অবহেলায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী মামুনের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে গেল!

বিশেষ সংবাদদাতা:
নরসিংদীর মনোহরদী সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলায় মামুন মিয়া নামে এক এইচএসসি ফলপ্রার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নির্ধারিত সময়ে অনলাইনে নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করতে না পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাজীবন থেকে যাতে এক বছর ঝড়ে না পড়ে সেজন্য প্রতিকার চেয়ে ওই শিক্ষার্থী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে আবেদন করেছিলেন। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ইউএনও। অথচ ওই কর্মকর্তা দীর্ঘ নয়মাস পর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
জানা যায়, মনোহরদী সরকারি কলেজে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয় মামুন মিয়া। নিয়মিত পড়াশোনা করে প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হয়। ২০১৯ সালে প্রাক নির্বাচনী এবং নির্বাচনী পরীক্ষায় সকল বিষয়ে কৃতকার্যও হয়েছে। এমনকি ফরম পূরণের জন্য নির্ধারিত ফি দুই হাজার ৬৪০টাকা কলেজের অনূকুলে সোনালী ব্যাংক মনোহরদী শাখায় জমা দেয়। টাকা জমার রশিদ নিয়ে ফরম পূরণের জন্য কলেজে গেলে জানতে পারে তার নাম রেজিস্ট্রেশনভূক্ত হয়নি। পরবর্তীতে কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মামুনের কাছে অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা দাবি করেন। ওই টাকা পরিশোধ করার পরও রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় গত ১৫ মার্চ অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি পরবর্তী বছরে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বলেন।
উপায় না দেখে মামুন ওই দিনই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন । এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন ইউএনও। অথচ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীর্ঘ নয় মাস পর গত ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর ইউএনও কাছে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান কলেজের সাথে ওই শিক্ষার্থীর কোনো সম্পর্ক নেই। সে বাতিল শিক্ষার্থী। কিন্তু মামুনের সকল কাগজপত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সে একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী।
ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী মামুন বিজনেস ফাইলকে জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমার ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এর জন্য কলেজ অধ্যক্ষ গোলাম ফারুক দায়ী।
এ বিষয়ে কথা বলেতে মনোহরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম ফারুকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে বলেন, সে একজন বাতিল ছাত্র। সেজন্য তার রেজিস্ট্রেশন হয়নি। তিনি কথা শেষ না করেই এক ধরনের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেই ফোনটি কেটে দেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুর রহমান বিজনেস ফাইলকে বলেন, ওই ছাত্রের রেজিস্ট্রেশনের জন্য আমি নিজে কয়েকবার শিক্ষাবোর্ডে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু অনলাইনে তার কোনো ডক্যুমেন্ট না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। সেজন্য প্রতিবেদন দাখিল করতে দেরি হয়েছে। তাছাড়া বিষয়টি তদন্তের জন্য কলেজে যাওয়ার পর অধ্যক্ষ কোনো প্রকার সহযোগিতা করেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এলাকাবাসী উল্লেখিত অধ্যক্ষ গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, বোর্ড চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে বিনীত প্রার্থনা জানান।