ব্রেন ডেথ মানুষের অঙ্গগুলোর মাধ্যমে আটজনের জীবন রক্ষা সম্ভব: ডা. শারফুদ্দিন

প্রকাশিত: ২:৩০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩

বিজনেস ফাইল প্রতিবেদক

‘একজন ব্রেন ডেথ মানুষের দেওয়া অঙ্গগুলোর মাধ্যমে মোট আটজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব’ বলে জানিয়েছেন জাতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

সোমবার ব্রেন ডেথ রোগী হিসেবে দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক সারাহ ইসলামের অঙ্গ অন্য চার জন রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকের শহীদ ডা. মিলন হলে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একজন মানুষের দেহে রয়েছে দুটি কিডনি, দুটি ফুসফুস, একটি হৃদযন্ত্র, একটি অগ্ন্যাশয়, পূর্ণাঙ্গ অন্ত্রনালি এবং যকৃৎ। উন্নত দেশগুলোর অনেক আগে থেকে ব্রেন ডেথ রোগীর শরীর থেকে অঙ্গগুলো সংগ্রহ করে অন্যের জীবন রক্ষা করার কাজ প্রচলিত আছে।’

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সারাহ ইসলাম মেধাবী একজন ছাত্রী ছিলেন। জটিল এই রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করেও তিনি সাফল্যের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে চারুকলায় স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি সুদক্ষ চিত্রশিল্পী ছিলেন, মানবতাবাদী ছিলেন। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। তাই তার মা শবনম সুলতানা তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে এই অঙ্গদানে সম্মতি দিয়েছেন। সম্মতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করা হয় সঠিক অঙ্গগ্রহীতার খোঁজ। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে ছয়জন সম্ভাব্য রোগীকে পরীক্ষা করে সেখান থেকে দুজনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। গত ১৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টা থেকে জটিল এই অস্ত্রোপচার শুরু হয় এবং শেষ হয় পরাদিন ভোর প্রায় পাঁচটার দিকে। আইন অনুযায়ী গঠিত প্রতিটি টিম এখানে সুদক্ষভাবে কাজ করেছে। প্রতিস্থাপন দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউরোলজিস্ট ও ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সারাহ ইসলামই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ব্রেন ডেথ থেকে মৃত্যুর আগে নিজের অঙ্গ দান করে চারজন মানুষের জীবনের আশা জাগিয়ে গেলেন। সারাহ ইসলামের দিয়ে যাওয়া উপহার সবচেয়ে দামি উপহার। জীবনদায়ি উপহার। একজন মানুষ কতটুকু মহান হলে এই কাজ করতে পারেন। সারাহ দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে মৃত্যুকে পরাজিত করা যায়।’

ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘আমার কাছে সারাহ ইসলাম হলো মানবতার প্রকৃত ফেরিওয়ালা। নশ্বর দেহের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অপর এক প্রাণের নাম হলো সারাহ ইসলাম।’

আলোচনা সভায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের নামে ‘সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেল’ শুভ উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও সারাহ ইসলামের মা শবনম সুলতানা।